বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করতে করপোরেট করসহ অন্যান্য কর কাঠামো সহজ করার উদ্যোগ
- আপডেট টাইম : ০২:১৮:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০
- / 90
৭১: সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করতে করপোরেট করসহ অন্যান্য কর কাঠামো সহজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে সুপারিশমালা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জাপানি ব্যবসায়ীরা চীন থেকে তাদের বিনিয়োগ ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে জাপানের বিনিয়োগ আনতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যমান কর কাঠামো, অর্থ স্থানান্তরসহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাপানি বিনিয়োগকারীরা। এজন্য বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্যোগ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে একটি সুপারিশমালা তৈরি করতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি করা হয়। কর সুবিধার সঙ্গে সম্পর্কিত সুপারিশ করার জন্য আয়কর নীতি, শুল্ক নীতি ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নীতি নিয়ে কাজ করা এনবিআরের সদস্যদের নিয়ে ওই কমিটি করা হয়েছে গত ১০ সেপ্টেম্বর। কমিটির সদস্যদের মধ্যে আছেন শুল্কনীতিবিষয়ক সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, ভ্যাট পলিসির সদস্য মাসুদ সাদিক ও শুল্ক নীতিমালার দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ মেহরাজ-উল-আলম সম্রাট।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কর কাঠামোসহ অন্যান্য বিষয় আরো সহজ করা হচ্ছে। জাপানি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে এরই মধ্যে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ করে যেসব জাপানি উদ্যোক্তা বিনিয়োগের জন্য নতুন জায়গা খুঁজছেন, তাদের আকৃষ্ট করতে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এদিকে, জাপানের বিনিয়োগকারীদের সংগঠন জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) আবাসিক প্রতিনিধি ইউজি আন্দো সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখনো সুযোগ আছে, বাংলাদেশ হতে পারে জাপানের বিনিয়োগের অন্যতম স্থান। সেজন্য বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ব্যাবসায়ীরা অধিকতর বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ চান। করসংক্রান্ত অনেক বিষয় আছে, যেগুলো দ্রুত সংস্কার করলে জাপানসহ অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগকারীর জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় স্থান হবে বলে মনে করেন তিনি।
ইউজি আন্দো আরো বলেন, চীন থেকে যে পরিমাণ কোম্পানি কারখানা স্থানান্তর করবে বলে অনেকে মনে করছেন, বাস্তবে ততটা হবে না। কোম্পানিগুলো কারখানা চীনে রেখে অন্যান্য দেশে নতুন কারখানা করতে পারে। তবে কারখানা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাপানের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো উন্নয়নের মাধ্যমে অধিকতর জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে এবং তার সম্ভাবনাও আছে। এজন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা নিরসনের আন্তরিক উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারকেই নিতে হবে।
জানা যায়, জাপান সরকার গত এপ্রিল মাসের শুরুতে ২৪ হাজার ৩৫০ কোটি জাপানি ইয়েনের (১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা) একটি তহবিল ঘোষণা করে, যার আওতায় চীন থেকে জাপানে ফিরে যেতে এবং চীন থেকে অন্য দেশে কারখানা সরিয়ে নিতে আগ্রহী জাপানি কোম্পানিগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। জাপানি বিনিয়োকারীদের চীন ছাড়ার অন্যতম কারণ হলো দেশটির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। চীনে গত তিন দশক ধরে ঘাঁটি গেড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এর ফলে বেশির ভাগ চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের মুখে পড়ছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এককভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণেই চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন জাপানিরা।