বাল্যবিয়ের অপরাধে কাজীর কারাদণ্ড
- আপডেট টাইম : ০৬:১৩:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 89
৭১: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সোনারহাট থেকে বড়দিঘীরপাড়ের নবম শ্রেনির এক ছাত্রীকে বিয়ে করতে এসেছিলেন কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র আশরাফুল ইসলাম (২১), ফেরার কথা ছিল নববধূ নিয়ে। অথচ বাল্যবিয়ে করতে আসার অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ফিরে যেতে হল বাড়ীতে।
অপরদিকে বাল্যবিয়ে রেজিষ্ট্রি করার অপরাধে দলগ্রাম ইউনিয়নের কাজী আবু হানিফকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালানা করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান।
রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর দলগ্রাম বড়দিঘীর পাড় এলাকায়।
জানা যায়, বড়দিঘীরপাড় এলাকায় বাল্য বিয়ের আয়োজন চলছিল এমন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্যবিয়ে রেজিষ্ট্রি করার অপরাধে কাজী আবু হানিফকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও বরের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ইতঃপূর্বে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ৮ম শ্রেণির ছাত্রীর বাল্যবিয়ে রেজিষ্ট্রির অপরাধে কাজি আবু হানিফকে এক মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছিলেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক তৎকালীন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম রাব্বী। সেই সাথে তার নিকাহ রেজিষ্ট্রারের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশও করেন তিনি। রহস্যজনক ভাবে সেই চিঠি আজ অবধি লাল ফিতায় বন্দি আছে লালমনিরহাট জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে।
এতোকিছুর পরও অদৃশ্য শক্তির জোড়ে কাজি আবু হানিফ দেদারচে চালিয়ে যাচ্ছেন বাল্যবিয়ে। এতে শিক্ষা জিবনের সমাপ্তি ঘটছে অধিকাংশ ছাত্রীর।
বিগত দিনে উত্তর দলগ্রাম বরন্তর আনছারিয়া আজিমিয়া দাখিল মাদরাসাসহ অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একাধিক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ রেজিঃ করেছেন কাজী আবু হানিফ।
বাল্য বিয়ের কারণেই যৌতুক, নারী নির্যাতন ও পারিবারিক কলহের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। বাল্যবিয়ের শিকার এসব মেয়ে শিশুর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে তারা যখন সংসার জীবনে প্রবেশ করছে তখন নানা রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর ফলে পারিবারিক কলহ,নির্যাতন,মামলা, বিবাহ বিচ্ছেদের এমন অসংখ্য ঘটনা বর্তমানে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
তথ্যমতে কাজী আবু হানিফ নিবন্ধন বইয়ের বিকল্প বইয়ে বয়স উল্লেখ না করে বর ও কনের যাবতীয় তথ্য সেখানে লিপিবদ্ধ করেন। পরে বর ও কনের নির্ধারিত বয়স পূর্ণ হলে এসব তথ্য মূল ভলিয়মে নিবন্ধন করেন।
কম বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে কখনও কখনও সামান্য ভুল বোঝাবুঝির পথ ধরে কালো মেঘ এসে ছিন্নভিন্ন করে দেয় সংসার নামের প্রতিষ্ঠানটিকে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) বাংলাদেশ শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী মো. আবু সাঈদ জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে মেয়েটি যেহেতু অপ্রাপ্তবয়স্ক তাই উভয় দিক বিবেচনা করে বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে যেন স্বামীর ঘরে পাঠানো না হয় সে জন্য কনের চাচার কাছে মুচলেকা নেয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল হাসান ঘটনার সতত্য নিশ্চিত করে বলেন, এ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত করতে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।