জামাল ভূঁইয়ার দামের সমান ২০ ভুটানি ফুটবলার
- আপডেট টাইম : ১২:০৫:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০১৯
- / 134
‘বলেন কি ৫৫ লাখ ভুটানিজ রুপি (বাংলাদেশি ৬৬ লাখ টাকা) !’
হোটেল রুমে অবাক হয়ে অর্থের অঙ্কটি কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলেন ভুটান জাতীয় দলের ফুটবলার লেনডুপ দর্জি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া এক মৌসুমে ৬৬ লাখ টাকা বা ভুটানিজ ৫৫ লাখ রুপি পান, তা প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না ভুটানিজ এই ফুটবলারের। পরে নিজেই অঙ্ক কষে বললেন, তাহলে তো আমাদের ২০ ফুটবলারের চেয়ে জামালের একার দামই বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে এসেছে ভুটান। ভারতে খেলা অধিনায়ক চেনচো গেইলশেনকে বাদ দিলে বাকি ২০ জনের মোট আয় বাংলাদেশের এক জামালের চেয়েও অনেক কম।শুধু সাইফ স্পোর্টিংয়ের জামাল নয়, বসুন্ধরা কিংসের মিডফিল্ডার ইমন বাবুসহ বাংলাদেশের কয়েকজন ফুটবলারের সম্মানী কমবেশি ৬০ লাখ টাকা। এ তথ্যে ভুটান দলের দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড়ের কণ্ঠে চরম বিস্ময়, ‘আমি শুনেছি বাংলাদেশের ফুটবলে অনেক অর্থ। তাই বলে এত। এটা কীভাবে সম্ভব!’
বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাইয়ের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে ভুটান। কিন্তু এ মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবল র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে আছে তারা। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭, ভুটানের ১৮৫। ২০১৬ সালে এশিয়ান কাপের প্রাক বাছাইয়ের দ্বিতীয় লেগে বাংলাদেশকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল তারা। কিন্তু ভুটানে ফুটবলটা এখনো পেশাদারি চেহারা নেয়নি। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই অন্য পেশায় নিয়োজিত। তাদের নিয়মিত অধিনায়ক কারমা শেরিপ তো একজন বৈমানিক। ফ্লাইট থাকায় দলের সঙ্গে আসতেই পারেননি ঢাকায়।
অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ফুটবলে পরিচিত মুখ ভুটানিজ রোনালদো খ্যাত চেনচো গেইলশেন। চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলা এই ফরোয়ার্ড শেষ দুই মৌসুমে খেলেছেন ভারতের আই লিগ ও আইএসএলে। বাংলাদেশের যে কোন ফুটবলারের চেয়ে তাঁর আয় বেশি। কিন্তু দলের বাকি খেলোয়াড়দের আয় খুবই শোচনীয়। বর্তমান দলে চেনচো ছাড়া দেশের বাইরে লিগ খেলার অভিজ্ঞতা আছে কেবল লেনডুপের। শেষ মৌসুমে ভারতের আই লিগের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব লোন স্টার কাশ্মীরে খেলেছেন এই ফরোয়ার্ড। ক্লাবটিতে নিয়মিত একাদশে খেললেও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আবার ফিরে গিয়েছেন ভুটানে। শেষ খেলেছেন হাই কোয়ালিটি ইউনাইটেডে। ভুটানের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ধারী ফুটবলার তিনি।
এক মৌসুমে বাংলাদেশি টাকায় কত পান জানেন? বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। মাসিক ৬০ হাজার রুপিতে কোয়ালিটির সঙ্গে ৬ মাসের চুক্তি লেনডুপের। সে হিসেবে মৌসুমে ৩ লাখ ৬০ হাজির রুপি। লেনডুপ ৬ মাসে যা পান, জামাল এক মাসে আয় করেন তার চেয়ে অনেক বেশি। জামাল-সাইফের চুক্তিটা ফুটবল-বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো মাসিক চুক্তিতে। ক্লাব সূত্র জানিয়েছে, সাইফ থেকে মাসিক সাড়ে ৫ লাখ টাকা পাবেন জামাল। সে হিসাবে এক বছরে তাঁর বেতন দাঁড়াবে ৬৬ লাখ টাকা। চুক্তিটি এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বলে নিশ্চিত করেছেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী।
রইল বাকি ১৯। লেনডুপের ভাষ্য মতে গড়ে বাকিরা গড়ে ২০ হাজার রুপি করে পেয়ে থাকেন। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের চুক্তি ৬ মাসের। নামকাওয়াস্তে অর্থের জন্য পৃষ্ঠপোষকের অভাবকে দায়ী করলেন লিনডুপ, ‘আমাদের ফুটবল এখনো পেশাদারি পর্যায়ে যায়নি। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আছে। তবে ধীরে ধীরে আর্থিক কাঠামো বাড়ছে।
জাতীয় দলের নিয়মিত অধিনায়ক কারমা শেরিপ তো ঘরোয়া লিগে যে একপ্রকার বিনে পয়সাতেই খেলেন! থিম্পু সিটিতে খেলে উল্টো টাকা দিতে হয় তাঁকে। দলটা চালান তাঁর চাচা। পারিবারিক ক্লাব বলেই এর পেছনে কিছু অর্থ খরচ হয় তাঁর। শেরিং আসলে পুরোদস্তুর পেশাদার ফুটবলার নন। তাঁর জীবিকা আসে উড়োজাহাজ চালিয়ে। ভুটানের জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা ‘ড্রুক এয়ারে’র একজন বৈমানিক তিনি। আয়রোজগার ভালোই করেন। অবসর সময়ে খেলেন। নিজের ক্লাব থিম্পু সিটির জুনিয়র খেলোয়াড়দের খরচটা তিনিই বহন করে এর আগে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ‘এই ক্লাবটা আমার চাচা চালান। বেশ কষ্টে চালান তিনি। সেখান থেকে টাকা নিই কীভাবে বলুন। আমি বরং দলের জুনিয়র খেলোয়াড়দের খরচটা বহন করে চাচার ওপর থেকে আর্থিক চাপটা কমাই।’