প্রতিবন্ধী শিশু না চাইলে মাকে সুস্থ-হাসিখুশি রাখুন
- আপডেট টাইম : ১২:৩৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
- / 139
গত কয়েক বছর ধরেই অটিস্টিক শিশুর জন্ম বিশ্ব জুড়ে ঘনিয়ে ওঠা এক সঙ্কট। পরিবেশ দূষণসহ নানা কারণে দিনে দিনে এই সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। নদিয়ায় কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (জেএনএম) শনি ও রবিবার মনোরোগ বিভাগের বার্ষিক সম্মেলনেও উঠে এসেছে এই বিষয়ক আলোচনা। শুরুতেই বিষয়টি সনাক্ত করা সম্ভব হলে প্রতিকারও সহজ হয়। এছাড়া কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অটিস্টিক শিশুর জন্ম রোধ করা যেতে পারে।
চিকিৎসকেরা জানান, নানা কারণে গোটা বিশ্ব জুড়েই অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এর বিরুদ্ধে লড়তে এই ধরনের শিশুদের দ্রুত শনাক্ত করা সবচেয়ে জরুরি। এই ধরনের মানুষেরা সামাজিক যোগাযোগ ঠিক মতো করতে পারে না। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দিকে চেয়ে হাসলে হাসে বা ভয় দেখালে কেঁদে ফেলে, হাত নেড়ে টা-টা করতে শেখে, এদের বেশির ভাগই তা সহজাত ভাবে পারে না। এমনকি সোজাসুজি চোখের দিকে চেয়ে কথা শুনতে বা আঙুল তুলে কিছু দেখাতেও পারে না অনেকে।
আশপাশের মানুষের কথা বোঝায় সমস্যার কারণে অনেকেই কথা বলে দেরিতে, অনেকে সারা জীবন বলতেও পারে না। যে কারণে এদের অনেকের যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা বা নানা রকম প্রতিভা থাকলেও সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়। চিকিৎসকদের মতে, নানা লক্ষণ দেখে প্রথমেই বিষয়টি চিহ্নিত করা গেলে মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়।
আধুনিক গবেষণার উল্লেখ করে জেএনএম-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কৌস্তভ চক্রবর্তী জানান, অটিজমের একটা অন্যতম কারণ হতে পারে প্রসূতির উপরে মানসিক চাপ। গর্ভবতী অবস্থায় পরিবারের বিরূপ আচরণ মনের উপরে যে চাপ তৈরি করে, ভ্রূণের মস্তিষ্কের উপরে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। তার জেরে শিশুর বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। আবার অনেকে জিনগত বলেও মনে করেন এই প্রতিবন্ধকতাকে। সে ক্ষেত্রে বাবা বা মায়ের জিনগত কোনো সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। আবার এই সন্তান থেকেই পারিবারিক ধারায় জিনগত সমস্যা প্রথম তৈরি হতে পারে!
আরও একটি সম্ভাব্য বিষয় উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তারা বলেছেন, পুরুষ-নারী উভয়েরই এখন বেশি বয়সে বিয়ে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। হয়তো আর্থিক সাচ্ছল্যের খোঁজ পেতে দেরি হওয়াও তার একটি কারণ। কিন্তু বয়স বাড়লে পুরুষ-নারী উভয়েরই জিনের গুণমান কমে যায়। ফলে বেশি বয়সে গর্ভধারণ বিপত্তি ডাকতে পারে। এ ছাড়াও খাদ্যের টক্সিন (বিষাক্ত অংশ) এবং পরিবেশ দূষণের ফলেও গর্ভস্থ ভ্রূণের নানা সমস্যা তৈরি হয়। অতএব প্রসূতিকে দূষণ বা টক্সিনযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
ঘটনা হলো, এখনও এমন কোনো প্রমাণ্য ওষুধ আবিস্কৃত হয়নি যা দিয়ে অটিজমের চিকিৎসা করা যেতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, কিছু ওষুধ হয়তো অস্থিরতা কমাতে পারে, কিন্তু স্থায়ীভাবে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে না। ফলে এখনও পর্যন্ত স্পিচ থেরাপি থেকে অকুপেশনাল থেরাপিসহ বিভিন্ন ধরনের থেরাপিই প্রধান হাতিয়ার। এসব থেরাপির দ্বারা অটিস্টিক শিশুদের সমাজের রীতিনীতি মেনে চলা এবং ব্যবহার করার কৌশলও ধীরে ধীরে শেখানো যায়। তাতে এই শিশুরা সমাজের কাছে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে, এমনকি মূলস্রোতে মিশেও যেতে পারে।