ব্যান্ড গড়তে চান লালন কন্যা
- আপডেট টাইম : ০৬:১৪:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০
- / 92
৭১: প্রাণচঞ্চল সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা সুরের জগতে মাতিয়ে রাখেন, রানিয়া ইসলাম মুন্নি তাদের অন্যতম। ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে প্রিয়মুখ তিনি। ২০১৮ সালে ভর্তির পর থেকেই গানের মাধ্যমে অল্প সময়েই পরিচিতি লাভ করেছেন। মোটামুটি সব ধরণের গান করলেও সকলে তাকে ‘লালন কন্যা’ নামেই চিনে।
ময়মনসিংহের মেয়ে রানিয়া ছোটকাল থেকেই পারিবারিকভাবে বেড়ে উঠেছেন গাজীপুরে। প্রাথমিক শিক্ষার শুরু জেলার ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার আনসার ভিডিপি স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে তার গানের যাত্রা।
শুরুর গল্প সম্পর্কে তিনি জানান, স্কুলে বিভিন্ন উপলক্ষে প্রচুর অনুষ্ঠান হতো। বড় আপুরা সাজগোজ করে রিহার্সেল করতেন। আমি লুকিয়ে দেখতাম। রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের পূর্বে আপুদের সাজগোজ দেখেই মূলত তাদের মতো গান করার ইচ্ছা জাগে।
এরপর বাড়িতে জানানো মাত্রই বাধ সাধেন বাবা। কিন্তু মা ও বোনের সমর্থনে গানের শুরু করেন। নিয়মিত স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে থাকেন। দারুণ কন্ঠের অসাধারণ শৈল্পিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে জিততে থাকেন অনেক পুরস্কার। এরপর আর থেমে থাকেননি।
রানিয়ার ‘লালন কন্যা’ হিসেবে পরিচিতি মূলত কলেজ লাইফে। গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তির পর থেকেই আগের মতোই গানের চর্চা অব্যাহত রাখেন। তবে কলেজে সহপাঠী ছাড়া বেশি মিশতেন না, চুপচাপ থাকতেন।
শৈলী নামে তার এক কলেজ বান্ধবীর সাথে সবসময় চলাফেরা ছিল। তিনিও গান করতেন। দুজনের মধ্যে প্রচুর মিল থাকায় শিক্ষকদের পাশাপাশি অনেক সময় শিক্ষার্থীরাও তাদেরকে গুলিয়ে ফেলতেন। এমনকি দেখা যেত, শিক্ষকরা রানিয়াকে শৈলী কিংবা শৈলীকে রানিয়া ভেবে পড়া ধরতেন।
একদিন কলেজের অনুষ্ঠানে লালনের ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি…’ গান পরিবেশন করেন রানিয়া। সামনের সারিতে বসে গান উপভোগ করেন কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার সাহা। গান শেষে রানিয়াকে ডেকে তিনি বাহবা দিয়ে ‘লালন কন্যা’ নামে অভিহিত করেন। এরপর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে এ নামেই ডাকতে শুরু করে। সেদিন বাংলার ঐ শিক্ষকের ভুল ভাঙে, ‘এটা রানিয়া, শেলী নয়।’
মেয়ে হয়ে লালনের গান করার কারণ সম্বন্ধে রানিয়া বলেন, আমি যেসব পুরস্কার জিতেছি, তার বেশিরভাগই ফোক গান করে। শ্রোতাদের থেকে এই গানেই বেশি সাড়া পাই। সকলের পরামর্শে তাই লালনের গানই বেশি করি। তবে অন্য গানও করি। আর আমার কন্ঠ মোটা হওয়াও লালনের গান করার অন্যতম কারণ।
কলেজ জীবন শেষে এমবিবিএস পড়ার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের সুনামের কারণে সেখানে ভর্তি হন। সেখানকার নবীনবরণ অনুষ্ঠানে গান করে সকলের নজর কাড়েন। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে নিয়মিতই সুনামের সাথে গান করে যাচ্ছেন। যেখানেই গান, সেখানেই তার ডাক পড়ে।
নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করতে ক্যাম্পাসের গানপ্রেমীদের সংগঠন ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক কমিউনিটি’তে (জিবিএমসি) যুক্ত হন। অবশ্য এর আগেই জিবিএমসির কর্ণধার আবির হাসান, খালিদ ইমতিয়াজ ও আবু মুহাম্মাদ রুইয়ামের নির্দেশনায় ক্যাম্পাসে নিজের অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হন। জিবিএমসিতে রানিয়া প্রধান মেয়ে ভোকালিস্ট।
গান নিয়ে নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, ভবিষ্যতে একটা ব্যান্ড গড়ার ইচ্ছা আছে। সেখানে আমি প্রধান ভোকালিস্ট হতে চাই। লালন ব্যান্ডের সুমি আপুকে দেখে এ ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
আজকের অবস্থানে আসার পেছনে বন্ধু-সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রানিয়া বলেন, ‘উনারাই আমার পথচলার শক্তি। তাদের সমর্থন ছাড়া আমি কিছুই না। আশা করছি, ভবিষ্যতেও এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’ তবে পথচলায় অনেকের কটু কথা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য সহ নানা প্রতিবন্ধকতার শিকারও তাকে হতে হয়েছে।
ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় এই কন্ঠশিল্পী বর্তমানে ফার্মেসী বিভাগের ৩য় বর্ষের অধ্যয়নরত। গান ছাড়াও পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে তিনি সক্রিয়। ভবিষ্যতে কর্পোরেট জগতে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি গানের মাধ্যমে নিজেকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা তার একান্ত ইচ্ছা।