ঢাকা ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বোনের ধর্ষণের বিচার চাওয়ায় ভাইকে কুপিয়ে জখম

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
  • / 104

৭১: পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের ধামরাইল গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ১৭ বছরের মেয়েকে নিজ বাড়ির আঙ্গিনা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে।

এ ঘটনার প্রধান আসামি একই গ্রামের হালিম মোড়লের ছেলে ওমর ফারুক (৩০) ধরা ছোয়ার বাইরে থাকলেও বাকি দুই আসামি লুৎফর মোড়লের ছেলে মনিরুল মোড়ল (৩০) ও রশিদ মোড়লের ছেলে সালাম মোড়ল (৪৫) কে আটক করেছিল র‌্যাব-৬। আটকের ১১ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে নির্যাতিতা মেয়েটির ভাইকে পুনরায় কুপিয়ে জখম করে ধর্ষক বাহিনীর ক্যাডাররা।

গত ২০ জুলাই খুলনা প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগীসহ তার পিতা এক সংবাদ সম্মেলন করে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মেয়েটি জানান, গত ৮ মে রাতে আমার আম্মু, আব্বু, ভাইয়া কেউ বাড়িতে ছিল না। আমার সাথে দুই ভাবি বাড়িতে ছিল। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে আমি বাথরুমে যাই। বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর ওমর ফারুক পেছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরে। আমি ধস্তাধস্তি করি। তারপর মনিরুল এসে আমার গলা ও হাত টিপে ধরে। এরপর সালাম এসে কিল ঘুষি মারতে থাকে। আমার গায়ের ওড়না দিয়ে আমার মুখ বাঁধে। এরপর তারা ৩জন আমাকে উঁচু করে বাড়ির দক্ষিণ পাশের বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে অমাণবিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

বাথরুম থেকে আসতে দেরি করায় আমার ভাবিরা টর্চলাইট নিয়ে আমাকে খুজতে বের হয়। একপর্যায়ে তারা ধর্ষণ চলাকালীন সময়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে। তারা ওমর ফারুক গ্রুপের কাছ থেকে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। হাতাহাতির একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়। ওমর ফারুকের গায়ের গেঞ্জির অংশ আমার হাতে রয়ে যায়। আম্মু, আব্বু ও ভাইয়া সকালে বাড়িতে এলে আমি তাদের ঘটনা খুলে বলি। আমরা থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেই। এ খবর তারা জানতে পেরে, আমাদের বাড়িতে এসে পরিবারের সবাইকে মারধোর করে। যে কারণে আমার ভাই গুরুত্বর জখম হয়ে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা জানান, কিছুদিন যাবত সে আমার মেয়েকে রাস্তায় চলার পথে কুপ্রস্তাবসহ হয়রানি করে আসছিলো। বিষয়টি মেয়ে আমাকে জানালে, আমি ওমর ফারুকের বাবা-মাকে জানাই। এর জের ধরে সে মনিরুল ও সালামকে সাথে নিয়ে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দেয়। মনিরুল ও সালাম এ কাজে আগে থেকেই পারদর্শী। তাদের নামে এর আগেও একই মামলা রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবের কারণে তারা আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য আসামি পক্ষ থেকে বারবার বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

অপরদিকে গত ২ জুন বাদীর ভাইকে কুপিয়ে জখম করার কারণে ১৪জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় অপর আরেকটি মামলা করেন। বাদীর বাবা বিভিন্ন দপ্তরে মেয়ের ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ধর্ণা দিলেও আশানুরূপ কোনও ফল পাননি।

র‌্যাব-৬ গত ৯ জুন ধর্ষণ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে মনিরুল মোড়ল (৩০) ও সালাম মোড়ল (৪৫)। কিন্তু তারা গত ২১জুন (গ্রেফতার হওয়ার ১১দিন পর) আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়।

মামলা তুলে না নেয়ার কারণে আসামিরা গত ৮ জুলাই পুনরায় পূর্বে জখমকৃত ধর্ষিতার ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুরসাথে পাঞ্জা লড়ছে। ভুক্তভোগী নিরাপত্তার অভাবে বাড়ি ছাড়া।

পাইকগাছা থানারা অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ এজাজ শফী বলেন, ভুক্তভোগীর মামলা নেয়া হয়েছে, তদন্ত চলছে।

Tag :

শেয়ার করুন

বোনের ধর্ষণের বিচার চাওয়ায় ভাইকে কুপিয়ে জখম

আপডেট টাইম : ০৪:৫০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

৭১: পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের ধামরাইল গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ১৭ বছরের মেয়েকে নিজ বাড়ির আঙ্গিনা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে।

এ ঘটনার প্রধান আসামি একই গ্রামের হালিম মোড়লের ছেলে ওমর ফারুক (৩০) ধরা ছোয়ার বাইরে থাকলেও বাকি দুই আসামি লুৎফর মোড়লের ছেলে মনিরুল মোড়ল (৩০) ও রশিদ মোড়লের ছেলে সালাম মোড়ল (৪৫) কে আটক করেছিল র‌্যাব-৬। আটকের ১১ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে নির্যাতিতা মেয়েটির ভাইকে পুনরায় কুপিয়ে জখম করে ধর্ষক বাহিনীর ক্যাডাররা।

গত ২০ জুলাই খুলনা প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগীসহ তার পিতা এক সংবাদ সম্মেলন করে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মেয়েটি জানান, গত ৮ মে রাতে আমার আম্মু, আব্বু, ভাইয়া কেউ বাড়িতে ছিল না। আমার সাথে দুই ভাবি বাড়িতে ছিল। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে আমি বাথরুমে যাই। বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর ওমর ফারুক পেছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরে। আমি ধস্তাধস্তি করি। তারপর মনিরুল এসে আমার গলা ও হাত টিপে ধরে। এরপর সালাম এসে কিল ঘুষি মারতে থাকে। আমার গায়ের ওড়না দিয়ে আমার মুখ বাঁধে। এরপর তারা ৩জন আমাকে উঁচু করে বাড়ির দক্ষিণ পাশের বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে অমাণবিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

বাথরুম থেকে আসতে দেরি করায় আমার ভাবিরা টর্চলাইট নিয়ে আমাকে খুজতে বের হয়। একপর্যায়ে তারা ধর্ষণ চলাকালীন সময়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে। তারা ওমর ফারুক গ্রুপের কাছ থেকে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। হাতাহাতির একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়। ওমর ফারুকের গায়ের গেঞ্জির অংশ আমার হাতে রয়ে যায়। আম্মু, আব্বু ও ভাইয়া সকালে বাড়িতে এলে আমি তাদের ঘটনা খুলে বলি। আমরা থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেই। এ খবর তারা জানতে পেরে, আমাদের বাড়িতে এসে পরিবারের সবাইকে মারধোর করে। যে কারণে আমার ভাই গুরুত্বর জখম হয়ে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা জানান, কিছুদিন যাবত সে আমার মেয়েকে রাস্তায় চলার পথে কুপ্রস্তাবসহ হয়রানি করে আসছিলো। বিষয়টি মেয়ে আমাকে জানালে, আমি ওমর ফারুকের বাবা-মাকে জানাই। এর জের ধরে সে মনিরুল ও সালামকে সাথে নিয়ে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দেয়। মনিরুল ও সালাম এ কাজে আগে থেকেই পারদর্শী। তাদের নামে এর আগেও একই মামলা রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবের কারণে তারা আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য আসামি পক্ষ থেকে বারবার বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

অপরদিকে গত ২ জুন বাদীর ভাইকে কুপিয়ে জখম করার কারণে ১৪জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় অপর আরেকটি মামলা করেন। বাদীর বাবা বিভিন্ন দপ্তরে মেয়ের ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ধর্ণা দিলেও আশানুরূপ কোনও ফল পাননি।

র‌্যাব-৬ গত ৯ জুন ধর্ষণ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে মনিরুল মোড়ল (৩০) ও সালাম মোড়ল (৪৫)। কিন্তু তারা গত ২১জুন (গ্রেফতার হওয়ার ১১দিন পর) আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়।

মামলা তুলে না নেয়ার কারণে আসামিরা গত ৮ জুলাই পুনরায় পূর্বে জখমকৃত ধর্ষিতার ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুরসাথে পাঞ্জা লড়ছে। ভুক্তভোগী নিরাপত্তার অভাবে বাড়ি ছাড়া।

পাইকগাছা থানারা অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ এজাজ শফী বলেন, ভুক্তভোগীর মামলা নেয়া হয়েছে, তদন্ত চলছে।