ঢাকা ১১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিআইব্লিউটিএর প্রকল্প এখন বন্যাত্বদের আশ্রয়কেন্দ্র

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:২৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
  • / 100

৭১: একটানা চার দিনের বন্যার পানি অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধির ফলে দেওয়ানগঞ্জের অন্যান্য গ্রামের পাশাপাশি হলকারচর, কেল্লাকাটা গ্রাম দু’টিসহ গাইবান্ধার ফুলছড়ির বালাশী এলাকার শতভাগ মানুষের বাড়িঘরে পানি ওঠে।

এতে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ির বালাশীঘাটে বাস্তবায়নাধীন “বালাশী ও বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পে গবাদীপশু ও জীবন ধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ আশ্রয় নেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।

জানা যায়, গাইবান্ধার বালাশী ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল, ফেরিতে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন পারাপারের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের দশটি জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে ১৪৩ কোটি টাকায় ১ জুলাই ২০১৭ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্যে কাজ শেষ করতে বিলম্বিত হচ্ছে। প্রতিকূলতার মধ্যে প্রকল্পের জন্যে ভুমি অধিগ্রহণ অন্যতম। প্রকল্পটি বন্যা প্লাবনসহনীয় হওয়ায় গত ২০১৯ এর বন্যায় বাহাদুরাবাদঘাট ও বালাশীঘাটের চারদিকের বাড়িঘরে অথৈ পানি হলে আশেপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রকল্পে আশ্রয় নেয়।

অনুরুপ এবছর বন্যার পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পের আশেপাশের কয়েক হাজার বানভাসী মানুষ গবাদীপশু ও নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ যমুনার দু’পাড়ের প্রকল্পের সাইডেই আশ্রয় নেন। ফলে এবারেও স্থবির হয়ে পড়ে প্রকল্পের অসমাপ্ত কার্যক্রম।

ইতিমধ্যেই যমুনার পশ্চিমপাড়ের বালাশি ঘাট ও পূর্বপাড়ের বাহাদুরাবাদ ঘাট প্রকল্পের কাজ পৃথক পৃথক ভাবে পচাশি শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দুপাড়েই পৃথক পৃথক ভাবে পুলিশ ব্যারাক, আনসার ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, পাইলট হাউজ, পাম্পহাউজ ও ইলেকট্রনিক সাব স্টেশন, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির অফিস বিল্ডিং, মসজিদ, রেষ্টুরেন্ট অয়েটিং শেড ও টয়লেট কমপ্লেক্স, টোলবক্স ও অয়েটিং শেড, টোলবুথ ও ড্রাইভার অয়েটিং শেড নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে।

সরেজমিনে যমুনার পূর্ব পাড়ের বাহাদুরাবাদ ঘাটে প্রকল্পে আশ্রয়রত কয়েক হাজার মানুষকে দেখা যায় প্রকল্পের নির্মিত ভবনগুলোতে তাদের জীবন ধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ গাদাগাদি হয়ে থাকতে। তাদের গবাদীপশুগুলোকে প্রকল্পের মাঠে টিনের ছাপড়া তুলে রেখেছেন। মানুষে পশুতে গাদাগাদি হওয়ায় প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।

প্রকল্পের ভবনে আশ্রয়রত হলকারচরবাসী হাফেজ মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, যমুনা পাড়ের কয়েকটি গ্রামের সব বাড়িঘরে বিপদসীমার উপরে বন্যার পানি উঠেছে। এ অঞ্চলে বন্যায় আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই বিআইডব্লিউটিএর এই প্রকল্প ব্যতিত। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাই আমরা গবাদীপশুসহ এখানে আশ্রয় নিয়েছি।

প্রকল্পটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল এর সাইড ম্যানেজার মো. বায়েজিদ হোসাইন জানান, গত বছরের বন্যায় আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের বানভাসী মানুষ এ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আশ্রয়কৃত বন্যাত্বদের মাঝে ছয় লক্ষ টাকার ত্রাণও বিতরণ করা হয়েছিলো। তার জন্যে কাজ বন্ধ ছিলো তিন মাস। এতে অনেক নির্মাণ সামগ্রীসহ মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর বন্যাতেও একই অবস্থা।

বিআইডব্লিউটিএ’র কারিগরি সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত চলছিলো। ইতোমধ্যেই পচাশি শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুনঃ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়ে যেতো। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় বানভাসী মানুষ গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়ার ফলে স্থবির হয়ে পড়ে প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ।

Tag :

শেয়ার করুন

বিআইব্লিউটিএর প্রকল্প এখন বন্যাত্বদের আশ্রয়কেন্দ্র

আপডেট টাইম : ০৪:২৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০

৭১: একটানা চার দিনের বন্যার পানি অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধির ফলে দেওয়ানগঞ্জের অন্যান্য গ্রামের পাশাপাশি হলকারচর, কেল্লাকাটা গ্রাম দু’টিসহ গাইবান্ধার ফুলছড়ির বালাশী এলাকার শতভাগ মানুষের বাড়িঘরে পানি ওঠে।

এতে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ির বালাশীঘাটে বাস্তবায়নাধীন “বালাশী ও বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পে গবাদীপশু ও জীবন ধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ আশ্রয় নেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।

জানা যায়, গাইবান্ধার বালাশী ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল, ফেরিতে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন পারাপারের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের দশটি জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে ১৪৩ কোটি টাকায় ১ জুলাই ২০১৭ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্যে কাজ শেষ করতে বিলম্বিত হচ্ছে। প্রতিকূলতার মধ্যে প্রকল্পের জন্যে ভুমি অধিগ্রহণ অন্যতম। প্রকল্পটি বন্যা প্লাবনসহনীয় হওয়ায় গত ২০১৯ এর বন্যায় বাহাদুরাবাদঘাট ও বালাশীঘাটের চারদিকের বাড়িঘরে অথৈ পানি হলে আশেপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রকল্পে আশ্রয় নেয়।

অনুরুপ এবছর বন্যার পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পের আশেপাশের কয়েক হাজার বানভাসী মানুষ গবাদীপশু ও নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ যমুনার দু’পাড়ের প্রকল্পের সাইডেই আশ্রয় নেন। ফলে এবারেও স্থবির হয়ে পড়ে প্রকল্পের অসমাপ্ত কার্যক্রম।

ইতিমধ্যেই যমুনার পশ্চিমপাড়ের বালাশি ঘাট ও পূর্বপাড়ের বাহাদুরাবাদ ঘাট প্রকল্পের কাজ পৃথক পৃথক ভাবে পচাশি শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দুপাড়েই পৃথক পৃথক ভাবে পুলিশ ব্যারাক, আনসার ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, পাইলট হাউজ, পাম্পহাউজ ও ইলেকট্রনিক সাব স্টেশন, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির অফিস বিল্ডিং, মসজিদ, রেষ্টুরেন্ট অয়েটিং শেড ও টয়লেট কমপ্লেক্স, টোলবক্স ও অয়েটিং শেড, টোলবুথ ও ড্রাইভার অয়েটিং শেড নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে।

সরেজমিনে যমুনার পূর্ব পাড়ের বাহাদুরাবাদ ঘাটে প্রকল্পে আশ্রয়রত কয়েক হাজার মানুষকে দেখা যায় প্রকল্পের নির্মিত ভবনগুলোতে তাদের জীবন ধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ গাদাগাদি হয়ে থাকতে। তাদের গবাদীপশুগুলোকে প্রকল্পের মাঠে টিনের ছাপড়া তুলে রেখেছেন। মানুষে পশুতে গাদাগাদি হওয়ায় প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।

প্রকল্পের ভবনে আশ্রয়রত হলকারচরবাসী হাফেজ মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, যমুনা পাড়ের কয়েকটি গ্রামের সব বাড়িঘরে বিপদসীমার উপরে বন্যার পানি উঠেছে। এ অঞ্চলে বন্যায় আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই বিআইডব্লিউটিএর এই প্রকল্প ব্যতিত। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাই আমরা গবাদীপশুসহ এখানে আশ্রয় নিয়েছি।

প্রকল্পটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল এর সাইড ম্যানেজার মো. বায়েজিদ হোসাইন জানান, গত বছরের বন্যায় আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের বানভাসী মানুষ এ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আশ্রয়কৃত বন্যাত্বদের মাঝে ছয় লক্ষ টাকার ত্রাণও বিতরণ করা হয়েছিলো। তার জন্যে কাজ বন্ধ ছিলো তিন মাস। এতে অনেক নির্মাণ সামগ্রীসহ মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর বন্যাতেও একই অবস্থা।

বিআইডব্লিউটিএ’র কারিগরি সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত চলছিলো। ইতোমধ্যেই পচাশি শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুনঃ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়ে যেতো। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় বানভাসী মানুষ গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়ার ফলে স্থবির হয়ে পড়ে প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ।