ঢাকা ০১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যার দেড় মাস পরেও নেই পুনর্বাসন তৎপরতা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১০:০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 23

সংগৃহীত ছবি

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জগতপুর এলাকার আসমা আক্তারের বসতঘর। গত দেড় মাস ধরে পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার।

তিনি বলেন, অনেক বেশি সম্পদ না থাকলেও সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবেই কাটছিলো সংসার। তবে আকস্মিক বন্যায় আমাদের আর কিছুই বাকি নেই। এতদিন ধরে অনেকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। অনেকে ঘরের জন্য নাম নিয়েছে। তবে এখনো ঘর পাইনি।

এমন একই অভিযোগ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘর হারানো ফেনীর জনপদের শত শত মানুষের। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা পরবর্তী বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পুনর্বাসনে কাজ করছেন। তবে গৃহ নির্মাণ বা পুনর্বাসনে এখনো আসেনি সরকারি কোনো বরাদ্দ।

ফুলগাজীর দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন মিয়া। ২০ আগস্ট ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে বসতভিটা। সেদিন পানি থেকে বাঁচতে ঘর থেকে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বের হতে পারলেও সঙ্গে কিছুই আনতে পারেনি তারা। নিরুপায় হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ স্কিমের ছোট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনমতে দিনযাপন করছেন খোকন। তিনি বলেন, বন্যা সবকিছু শেষ করে দিয়ে গেছে। আয়ের একমাত্র অবলম্বন সিএনজি অটোরিকশাটিও ভাঙন এলাকায় আটকে গেছে। এক মাস পার হয়ে গেলেও কোনো কাজ নেই। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া নতুন করে আমার পক্ষে ঘর তোলা সম্ভব না।

সাহাব উদ্দিন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে একটি মুদি দোকান করে পরিবার নিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করতাম। বন্যার পানির স্রোতে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে আসলেও এখনো ঘরে ঢুকতে পারিনি। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার প্ল্যাটফর্মের স্বেচ্ছাসেবক ওসমান গনি রাসেল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বিভিন্ন এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই একমাত্র ভরসা।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

বন্যার দেড় মাস পরেও নেই পুনর্বাসন তৎপরতা

আপডেট টাইম : ১০:০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জগতপুর এলাকার আসমা আক্তারের বসতঘর। গত দেড় মাস ধরে পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার।

তিনি বলেন, অনেক বেশি সম্পদ না থাকলেও সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবেই কাটছিলো সংসার। তবে আকস্মিক বন্যায় আমাদের আর কিছুই বাকি নেই। এতদিন ধরে অনেকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। অনেকে ঘরের জন্য নাম নিয়েছে। তবে এখনো ঘর পাইনি।

এমন একই অভিযোগ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘর হারানো ফেনীর জনপদের শত শত মানুষের। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা পরবর্তী বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পুনর্বাসনে কাজ করছেন। তবে গৃহ নির্মাণ বা পুনর্বাসনে এখনো আসেনি সরকারি কোনো বরাদ্দ।

ফুলগাজীর দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন মিয়া। ২০ আগস্ট ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে বসতভিটা। সেদিন পানি থেকে বাঁচতে ঘর থেকে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বের হতে পারলেও সঙ্গে কিছুই আনতে পারেনি তারা। নিরুপায় হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ স্কিমের ছোট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনমতে দিনযাপন করছেন খোকন। তিনি বলেন, বন্যা সবকিছু শেষ করে দিয়ে গেছে। আয়ের একমাত্র অবলম্বন সিএনজি অটোরিকশাটিও ভাঙন এলাকায় আটকে গেছে। এক মাস পার হয়ে গেলেও কোনো কাজ নেই। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া নতুন করে আমার পক্ষে ঘর তোলা সম্ভব না।

সাহাব উদ্দিন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে একটি মুদি দোকান করে পরিবার নিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করতাম। বন্যার পানির স্রোতে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে আসলেও এখনো ঘরে ঢুকতে পারিনি। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার প্ল্যাটফর্মের স্বেচ্ছাসেবক ওসমান গনি রাসেল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বিভিন্ন এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই একমাত্র ভরসা।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে।

নিউজ লাইট ৭১