ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৪:০০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪
  • / 27

মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সে অনুযায়ী সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর ওই মাসে শ্রম মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় আয় বেড়েছে কম। এতে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানুষের পুষ্টিমান কমে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি বিবিএসের মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কম। ওই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। কিন্তু এই হারও মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় বেশি। বাজারে গিয়ে ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। মানুষ এখন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় করতে পারছেন না। তাদের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা বাজার থেকে আগের মতো পণ্য কিনতে পারছেন না। দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাদের আয় মজুরিভিত্তিক। পাশাপাশি নিম্নমধ্যবিত্তরা সঞ্চয় ভেঙে চলছেন। বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সুপারিশ করেছেন।

তারা মনে করেন, এটি করা হলে জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে। বিবিএস জানিয়েছে, শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। ফলে গ্রামাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।

একদিকে গ্রামে কাজে সুযোগ কম, অন্যদিকে ব্যয় বেশি হওয়ায় তাদের চলতে হচ্ছে চাহিদা কাটছাঁট করে। কৃষিপণ্যের বেশিরভাগ গ্রামে উৎপাদিত হয়, কৃষকরা ন্যায্য দাম পান না। ফলে তাদেরও আয় কমছে। গত এক-দেড় বছরে চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু গাড়ির ভাড়ার ব্যবসা তেমন বাড়েনি। ফলে আগের আয় দিয়ে আর সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, টানা ২৪ মাস অর্থাৎ দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার কম। এর মানে, প্রতি মাসে যতটা মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, মজুরি বাড়ছে তার চেয়ে কম হারে। বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের গতি বেশি। ফলে ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত কমছে। তাই খরচের গতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। দুই বছর ধরে চালের দাম ওঠানামার মধ্যে আছে। মোটা চালের কেজি এখন ৫০ টাকার বেশি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই, প্রতি কেজি চিকন চালের দাম ৭৬ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আলু, পটোল, বেগুন এসবের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। খাবারের দাম বাড়লে মানুষের কষ্ট বাড়ে। কারণ, খাবার কিনতেই আয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ করেন গড়পড়তা মানুষ। অর্থনীতিবিদদের হিসাবে, গরিব মানুষকে খাবার কিনতে আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত খরচ করতে হয়।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ মানুষই খাবারের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী খাবার কিনতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, এমনকি বিবিএসের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, দেশে পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসব উদ্যোগ নিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে।

এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে নজর না দিলে সংকট ঘনীভূত হবে। যেটা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই

আপডেট টাইম : ০৪:০০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪

মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সে অনুযায়ী সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর ওই মাসে শ্রম মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় আয় বেড়েছে কম। এতে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানুষের পুষ্টিমান কমে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি বিবিএসের মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কম। ওই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। কিন্তু এই হারও মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় বেশি। বাজারে গিয়ে ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। মানুষ এখন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় করতে পারছেন না। তাদের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা বাজার থেকে আগের মতো পণ্য কিনতে পারছেন না। দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাদের আয় মজুরিভিত্তিক। পাশাপাশি নিম্নমধ্যবিত্তরা সঞ্চয় ভেঙে চলছেন। বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সুপারিশ করেছেন।

তারা মনে করেন, এটি করা হলে জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে। বিবিএস জানিয়েছে, শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। ফলে গ্রামাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।

একদিকে গ্রামে কাজে সুযোগ কম, অন্যদিকে ব্যয় বেশি হওয়ায় তাদের চলতে হচ্ছে চাহিদা কাটছাঁট করে। কৃষিপণ্যের বেশিরভাগ গ্রামে উৎপাদিত হয়, কৃষকরা ন্যায্য দাম পান না। ফলে তাদেরও আয় কমছে। গত এক-দেড় বছরে চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু গাড়ির ভাড়ার ব্যবসা তেমন বাড়েনি। ফলে আগের আয় দিয়ে আর সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, টানা ২৪ মাস অর্থাৎ দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার কম। এর মানে, প্রতি মাসে যতটা মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, মজুরি বাড়ছে তার চেয়ে কম হারে। বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের গতি বেশি। ফলে ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত কমছে। তাই খরচের গতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। দুই বছর ধরে চালের দাম ওঠানামার মধ্যে আছে। মোটা চালের কেজি এখন ৫০ টাকার বেশি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই, প্রতি কেজি চিকন চালের দাম ৭৬ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আলু, পটোল, বেগুন এসবের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। খাবারের দাম বাড়লে মানুষের কষ্ট বাড়ে। কারণ, খাবার কিনতেই আয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ করেন গড়পড়তা মানুষ। অর্থনীতিবিদদের হিসাবে, গরিব মানুষকে খাবার কিনতে আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত খরচ করতে হয়।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ মানুষই খাবারের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী খাবার কিনতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, এমনকি বিবিএসের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, দেশে পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসব উদ্যোগ নিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে।

এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে নজর না দিলে সংকট ঘনীভূত হবে। যেটা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

নিউজ লাইট ৭১