চিন্তা-ভাবনা করেই রিকশা উচ্ছেদ করা বাঞ্ছনীয়
- আপডেট টাইম : ১১:২৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
- / 30
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার পত্রিকান্তরে এ খবর প্রকাশ হয়েছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেছে। তাদের কারণে সড়কে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব অটোরিকশায় চড়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সারাজীবনের জন্য কেউ হচ্ছেন পঙ্গু, কেউ হারাচ্ছেন প্রাণ। সচেতন যাত্রীমহলের অভিযোগ, পুলিশ, ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এসব যানবাহন গলি থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়কে চলছে। তারা বলছেন, সড়ক-মহাসড়ককে ৩ চাকার বাহন মুক্ত রাখতে হলে কঠোর নজরদারির দরকার। এদিকে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ বলছে, দায়িত্বে কোনো অবহেলা নেই। বেশিরভাগ সময় চালকরা পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি চালান।
মন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো যাবে না। এ বিষয়ে শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, এগুলো চলতে যাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ২২ মহাসড়কে রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করার নিষেধাজ্ঞা। ঢাকা শহরে যে ধরনের লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরে আধুনিক গণপরিবহন চলাচল করে। কিন্তু ঢাকায় লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলে। এগুলো দেখতেও তো খারাপ লাগে। এর চেয়ে ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকাগুলোয় উন্নতমানের গণপরিবহন চলে। মন্ত্রী বলেছেন, ঢাকা সিটিতে মোটরসাইকেল অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন মোটামুটি সবাই হেলমেট পরেন। কিন্তু ঢাকার বাইরেও একটা নীতি গ্রহণ করা দরকার-‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ (হেলমেট ছাড়া তেল নয়)। সারা দেশে মোটরসাইকেলের চালকসহ দুজনের বেশি বহন করা যাবে না। আর প্রত্যেকের হেলমেট থাকতে হবে। নয়তো জ্বালানি বিক্রি করা যাবে না। ঢাকা শহরে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। গাড়িগুলো গরিব গরিব চেহারার। আর ৩০ জুনের মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। সারা দেশে মোটরসাইকেল-ইজিবাইকের কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সভায় অংশ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ভয়াবহ ব্যাপার, যখন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা দুই পা ওপরে উঠিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালায়। অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, যারা চোখে কিছুটা কম দেখেন, তারাও এ রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, সিদ্ধান্তে আসা দরকার যে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক চলবে না। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
মন্ত্রী মহোদয় এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের মেয়র ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদের ব্যাপারে যে কথা বলেছেন সেটা খুবই যুক্তিযুক্ত বলে আমরা মনে করি। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশা শহরে নতুন করে চলছে না। বিশেষত নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সড়কের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে রিকশার সংখ্যা। এর একজন চালকের ওপর নির্ভর করে একটি ৪/৫ সদস্যের পরিবার। করোনার পরে অনেকেই কাজ হারিয়ে এই রিক্সা চালানোকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে। দেশের পণ্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে তাতে ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রসার বেড়েছে। আর এখন সেটা পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়েছে। তাই এইসব রিকশার চালকদের পুনর্বাসন না করে রিকশা তুলে দেয়া হবে অপরিণামদর্শী কাজ।
নিউজ লাইট ৭১