ঢাকা ০১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্ঘটনা কমাতে দরকার সড়কের শৃঙ্খলা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০২:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
  • / 29

দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। বিশেষত সড়ক পথেও উন্নয়ন দেশের সার্বিক চিত্রকে বদলে দিয়েছে। গহিন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পিচঢালা সড়ক। গ্রামের উঠোনে উটের গ্রীবার মতো গলা বাড়িয়ে দিয়েছে। শহর এখন দরজা খুললেই। সড়ক নির্মাণ হয়েছে। নতুন নতুন গাড়ির বাজার চালু হয়েছে। আর দেখভালের সংকটে সড়ক হয়ে উঠেছে  মৃত্যুপুরী। প্রায় প্রতিদিনই পথে পথে মৃত্যুর মিছিল। গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ ঝরছে হরহামেশা। সারাদেশের সড়কে কোন গাড়ি সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক গতি আলাদা করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে সড়কে শৃঙ্খলা না ফিরে বরং গতির ভিন্নতার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতি নির্ধারণ করতে গিয়ে মান ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সড়কের প্রকারভেদ আলাদা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক সড়কের জন্য প্রতিটি গাড়ির ধরনে আলাদা গতি নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন সড়কে সবচেয়ে আলোচিত মোটরযান মোটরসাইকেল চালানোর গতি সড়কের মান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে, জাতীয় মহাসড়কে ৫০, আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪০, ঢাকাসহ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় ৩০ এবং শহরের সংকীর্ণ সড়কে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। একইভাবে যাত্রীবাহী গণপরিবহন, পণ্যবাহী যান, ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার জরুরি পরিস্থিতিতে সব গাড়ির ক্ষেত্রে আইন শিথিল থাকবে।

মূলত গতিসীমা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সড়কে চলা গাড়ির বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সড়কে গাড়ির গতি কমিয়ে দুর্ঘটনা কমাতে চায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কে যানের গতি কমিয়ে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে শৃঙ্খলা দরকার। শুধু যানের গতি কমলে শৃঙ্খলা কমে আসার কোনো সুযোগ নেই। পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘গতি হতে হবে লেনভিত্তিক। প্রথম লেনে গতি বেশি থাকবে, দ্বিতীয় লেনে কম। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা তৈরি হবে। পাশের দেশে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩০ কিলোমিটার গতিতেও গাড়ি চলে।

আমরা শুধু মনে করি, গতি কমালে দুর্ঘটনা কমবে, কিন্তু এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। উল্টো লেনভিত্তিক গতি আলাদা না করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। দেশে এক্সপ্রেসওয়ের মতো মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ হচ্ছে শুধু চলার গতি বাড়ানোর জন্য। এমনকি গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। একদিকে উচ্চগতির বাহন আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে যানের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এই দুটি সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক কি না, এমন প্রশ্নও তৈরি হচ্ছে।

যদিও বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের  সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গতিসীমার বাস্তবায়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। সড়কের নকশা অনুযায়ী নির্ধারণ করা গতি ঠিক আছে। তারপরও আমরা মনেকরি পরিবহন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিকল্পনাগুলো করলে তা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

দুর্ঘটনা কমাতে দরকার সড়কের শৃঙ্খলা

আপডেট টাইম : ০২:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। বিশেষত সড়ক পথেও উন্নয়ন দেশের সার্বিক চিত্রকে বদলে দিয়েছে। গহিন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পিচঢালা সড়ক। গ্রামের উঠোনে উটের গ্রীবার মতো গলা বাড়িয়ে দিয়েছে। শহর এখন দরজা খুললেই। সড়ক নির্মাণ হয়েছে। নতুন নতুন গাড়ির বাজার চালু হয়েছে। আর দেখভালের সংকটে সড়ক হয়ে উঠেছে  মৃত্যুপুরী। প্রায় প্রতিদিনই পথে পথে মৃত্যুর মিছিল। গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ ঝরছে হরহামেশা। সারাদেশের সড়কে কোন গাড়ি সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক গতি আলাদা করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে সড়কে শৃঙ্খলা না ফিরে বরং গতির ভিন্নতার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতি নির্ধারণ করতে গিয়ে মান ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সড়কের প্রকারভেদ আলাদা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক সড়কের জন্য প্রতিটি গাড়ির ধরনে আলাদা গতি নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন সড়কে সবচেয়ে আলোচিত মোটরযান মোটরসাইকেল চালানোর গতি সড়কের মান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে, জাতীয় মহাসড়কে ৫০, আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪০, ঢাকাসহ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় ৩০ এবং শহরের সংকীর্ণ সড়কে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। একইভাবে যাত্রীবাহী গণপরিবহন, পণ্যবাহী যান, ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার জরুরি পরিস্থিতিতে সব গাড়ির ক্ষেত্রে আইন শিথিল থাকবে।

মূলত গতিসীমা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সড়কে চলা গাড়ির বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সড়কে গাড়ির গতি কমিয়ে দুর্ঘটনা কমাতে চায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কে যানের গতি কমিয়ে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে শৃঙ্খলা দরকার। শুধু যানের গতি কমলে শৃঙ্খলা কমে আসার কোনো সুযোগ নেই। পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘গতি হতে হবে লেনভিত্তিক। প্রথম লেনে গতি বেশি থাকবে, দ্বিতীয় লেনে কম। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা তৈরি হবে। পাশের দেশে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩০ কিলোমিটার গতিতেও গাড়ি চলে।

আমরা শুধু মনে করি, গতি কমালে দুর্ঘটনা কমবে, কিন্তু এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। উল্টো লেনভিত্তিক গতি আলাদা না করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। দেশে এক্সপ্রেসওয়ের মতো মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ হচ্ছে শুধু চলার গতি বাড়ানোর জন্য। এমনকি গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। একদিকে উচ্চগতির বাহন আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে যানের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এই দুটি সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক কি না, এমন প্রশ্নও তৈরি হচ্ছে।

যদিও বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের  সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গতিসীমার বাস্তবায়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। সড়কের নকশা অনুযায়ী নির্ধারণ করা গতি ঠিক আছে। তারপরও আমরা মনেকরি পরিবহন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিকল্পনাগুলো করলে তা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে এ প্রত্যাশা দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও।

নিউজ লাইট ৭১