ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডলারের দাম বৃদ্ধি: বিকল্প পথ বের করা জরুরি

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪
  • / 28

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ খাত সংশ্লিষ্টরা। কারণ সুদহার ও ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ ও পণ্যমূল্য বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরিবর্তে উল্টো আরও বাড়তে পারে।

এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে অবশেষে ব্যাংকের সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে তুলে দেয়া হলো সুদের স্মার্ট পদ্ধতি। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে সব ধরনের সুদের হার আগের চেয়ে বাড়বে।

বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে সুদের হার ও ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল আইএমএফ। ওই ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সফররত মিশনটির সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের আগেই আইএমএফের চাহিদানুযায়ী নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি এবং সুদের হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে স্মার্ট ফর্মুলা বাতিল করে সব ধরনের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে পৃথক সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসঙ্গে অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে আরেকটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে প্রতি ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। ব্যাংকগুলো এই রেটকে ভিত্তি ধরে ডলারের দাম আরও বাড়ানোর সুযোগ পাবে, যা ১ টাকা কম বা বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর ফলে ব্যবসায়ীদের এক লাফে প্রতি ডলারে খরচ বাড়বে অন্তত ৮ টাকা, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যমূল্যের ওপরই পড়বে। অন্যদিকে নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণায় সব ধরনের ঋণের সুদহার আগের চেয়ে আরও বাড়বে। স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় ইতোমধ্যেই ঋণের সুদহার প্রায় ১৪ শতাংশ উঠেছে। ফলে ব্যাংকঋণ পেতে আগের চেয়ে বাড়তি সুদ গুনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে বাড়তি সুদ গুনতে হবে। এমনিতেই ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে আছে। তাই পলিসি রেট বাড়ার কারণে ঋণের সুদের হার বাড়লেই ঋণ কম যাবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। যারা ঋণ নেবে, তারা নেবেই এবং বেশি সুদের কারণে খেলাপি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। স্মার্ট পদ্ধতির পরে এখন সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো।

এভাবে সিদ্ধান্তগুলো দ্রুততার সঙ্গে নিলে ব্যবসা-বাণিজ্য সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত। এখন সুদের হার আরও বাড়বে। এত সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে ঋণের টাকা ফেরত দেয়াও কঠিন হবে। ঋণ যথাসময়ে ফেরত দিতে না পারলে খেলাপি ঋণ বাড়বে। অন্যদিকে সুদহার বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। আর উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যমূল্য বাড়াটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রার ওপরও। মানুষের সংকটের অবস্থা বাড়বে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ বের না করলে জনসংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই বিকল্প পথ বের করা জরুরি।

নিউজ লাইট ৭১

Tag :

শেয়ার করুন

ডলারের দাম বৃদ্ধি: বিকল্প পথ বের করা জরুরি

আপডেট টাইম : ১১:৪৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ খাত সংশ্লিষ্টরা। কারণ সুদহার ও ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ ও পণ্যমূল্য বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরিবর্তে উল্টো আরও বাড়তে পারে।

এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে অবশেষে ব্যাংকের সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে তুলে দেয়া হলো সুদের স্মার্ট পদ্ধতি। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে সব ধরনের সুদের হার আগের চেয়ে বাড়বে।

বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে সুদের হার ও ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল আইএমএফ। ওই ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সফররত মিশনটির সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের আগেই আইএমএফের চাহিদানুযায়ী নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি এবং সুদের হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে স্মার্ট ফর্মুলা বাতিল করে সব ধরনের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে পৃথক সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসঙ্গে অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে আরেকটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে প্রতি ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। ব্যাংকগুলো এই রেটকে ভিত্তি ধরে ডলারের দাম আরও বাড়ানোর সুযোগ পাবে, যা ১ টাকা কম বা বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর ফলে ব্যবসায়ীদের এক লাফে প্রতি ডলারে খরচ বাড়বে অন্তত ৮ টাকা, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যমূল্যের ওপরই পড়বে। অন্যদিকে নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণায় সব ধরনের ঋণের সুদহার আগের চেয়ে আরও বাড়বে। স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় ইতোমধ্যেই ঋণের সুদহার প্রায় ১৪ শতাংশ উঠেছে। ফলে ব্যাংকঋণ পেতে আগের চেয়ে বাড়তি সুদ গুনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে বাড়তি সুদ গুনতে হবে। এমনিতেই ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে আছে। তাই পলিসি রেট বাড়ার কারণে ঋণের সুদের হার বাড়লেই ঋণ কম যাবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। যারা ঋণ নেবে, তারা নেবেই এবং বেশি সুদের কারণে খেলাপি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। স্মার্ট পদ্ধতির পরে এখন সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো।

এভাবে সিদ্ধান্তগুলো দ্রুততার সঙ্গে নিলে ব্যবসা-বাণিজ্য সমন্বয় করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত। এখন সুদের হার আরও বাড়বে। এত সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে ঋণের টাকা ফেরত দেয়াও কঠিন হবে। ঋণ যথাসময়ে ফেরত দিতে না পারলে খেলাপি ঋণ বাড়বে। অন্যদিকে সুদহার বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। আর উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যমূল্য বাড়াটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রার ওপরও। মানুষের সংকটের অবস্থা বাড়বে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ বের না করলে জনসংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই বিকল্প পথ বের করা জরুরি।

নিউজ লাইট ৭১