চালু হোক বীমা-ক্ষতিপূরণ
- আপডেট টাইম : ১২:১২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
- / 31
অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গত এক যুগে রেলের উন্নয়নে খরচ হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা। এরপরও সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নয়ন তো হয়নি, উল্টো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই চালানো হচ্ছে ট্রেন।
রেলের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন ৬৩ শতাংশ। নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঠের স্লিপার আর জং ধরা ফিশপ্লেটেই ঘুরছে ট্রেনের চাকা। ৭০ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন আর কোচ দিয়েই চলছে যাত্রী পরিবহন। লোকবল সংকটের কারণে ভাড়া করা অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে অপারেশনাল কাজ। ফলাফল প্রতি বছর বাড়ছে দুর্ঘটনা। তাই নিরাপদ এই বাহনের যাত্রীদের চোখেমুখে এখন ভয় আর শঙ্কা।
যাত্রীরা বলছেন, বাসগুলো চলাচলের সময় প্রতিযোগিতা করে। তাই ট্রেনকেই নিরাপদ মনে করি। কিন্তু এখন তো দেখছি ট্রেনও দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। অব্যবস্থাপনার কারণেই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। গত শুক্রবার গাজীপুরের জয়দেবপুরের আউটার স্টেশনে মুখোমুখি ট্রেন সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকার দিকে যাচ্ছিল টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন। উল্টো পথে আসে একটি তেলবাহী ট্রেন। এতে অন্তত ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুমড়েমুচড়ে যায় বগির একাংশ। কমিউটার ট্রেন সাধারণত যাত্রীতে ভরপুর থাকে। কিন্তু গত শুক্রবার ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় যাত্রীবিহীন ছিল। পথে যাত্রাবিরতির সময় দু-একজন উঠে থাকতে পারে।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত চার বছরে ট্রেন দুর্ঘটনায় এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। অথচ জানমালের ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথা হচ্ছে না। দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় বাস, বিমান ও নৌযান তিন খাতেই যানের জন্য বীমার প্রচলন রয়েছে। এতে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পান পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিমানে যাত্রীর জন্য বীমা এবং বাসে যাত্রীর জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু নৌযানে যাত্রীর জন্য কোনোটিই নেই। ট্রেন দুর্ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। স্থায়ীভাবে পঙ্গু হচ্ছে অনেকে।
এমন পরিস্থিতিতে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ নেই কেন? ২০১৯ সালে বীমা করার পরিকল্পনা করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেটি আগায়নি। রেলওয়ে এখনো ১৮৯০ সালের আইনে পরিচালিত হচ্ছে। বহু বছর আগের আইন বর্তমানের সঙ্গে কতটা মানানসই, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নতুন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করে সরকার। সেই আইনের বিধিমালার মধ্য দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক তহবিল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু রেলের আইন অনেক পুরনো হওয়ায় সেই সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আইনের সংশোধন জরুরি। নতুন আইনের মধ্য দিয়ে রেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ তহবিল তৈরি করা যেতে পারে।
বিশ্বের বহু দেশে গণপরিবহনে বীমার প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে বীমাব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিক খাতে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ব্যক্তিগত বীমার ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বীমাপ্রক্রিয়া আরো সহজ করা প্রয়োজন। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশে দূরপাল্লার গণপরিবহনের যাত্রীর বীমার ব্যবস্থা থাকে। এমনকি ভারত ও শ্রীলঙ্কায়ও এই প্রথা রয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশেও বিমানের যাত্রীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বীমার আওতায় চলে আসে। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীর পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে থাকে। কিন্তু দেশের রেলব্যবস্থায় ট্রেন ও যাত্রী কেউ বীমার আওতায় নেই। রেল যাত্রীদের বীমা ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা আমাদের।
নিউজ লাইট ৭১