মানসিক চাপে উপকূলের মানুষ
- আপডেট টাইম : ১০:৩৩:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪
- / 31
আমাদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত। এদেশের উপর দিয়ে চলে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। এছাড়াও দেশে ছড়িয়ে আছে অজস্র নদী, জলাধার। ফলে জল-জংলার এই জনপদে ভরা গ্রীষ্মেও তাপমাত্রা থাকে সহনীয়। কিন্তু হালে তাপমাত্রা অসহনীয়ভাবে বেড়েছে। তাপদাহ ক্রমশ প্রাণসংহারী হয়ে উঠছে। জলবায়ু ও পরিবেশ গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন ছাড়াও শহরে দ্রুত দালানকোঠাসহ সব ধরনের ভৌত অবকাঠামো ও জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। একইসঙ্গে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের ভুক্তভোগী দেশের প্রায় সব মানুষ। তবে সীমিত আর্থ সামাজিক সহায়তা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অপ্রতুলতা, ওষুধের ঘাটতি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপ্রতুলতা এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিসেবা নাগালের বাইরে থাকায় জলবায়ু সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে উপকূলের মানুষের ওপর। এসব সংকটে উপকূলের প্রায় অর্ধেক মানুষই মানসিক চাপ নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। ‘দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এতে গুরুতর দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, মানসিক বৈকল্য এবং ঘুম না হওয়ার মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে। সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ও সিভিল সোসাইটি প্লাটফর্ম এই যৌথ গবেষণা চালিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, উপকূলীয়দের মধ্যে মানসিক চাপ নিয়ে বসবাস করছেন ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ মানুষ। একইসঙ্গে উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, বিষণ্নতায় ভুগছেন প্রায় ২২ শতাংশ, দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে ২০ শতাংশের এবং ভালো ঘুম হয় না প্রায় ৪৪ শতাংশ উপকূলবাসীর। গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার বিধান বাড়ানো, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা, কাউন্সেলিং ইউনিট স্থাপন এবং ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এবং জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযোজন পরিকল্পনার সঙ্গে একীভূতকরণ, দুর্বল জনগোষ্ঠীর প্রতি গুরুত্ব দেয়া, নীতি ও আইনি কাঠামোর পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্যস্বাস্থ্য সুবিধা এবং বিধানগুলো উন্নত করার সুপারিশ করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন সাধারণতই মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব জানতে এখন উপকূলীয় এলাকার পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে আরও তথ্য জানা যাবে যেটা এ সময়ের জন্য একান্ত জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সমন্বয়মূলক প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের ব্যক্তিত্বের নানা সমস্যা দেখা যায়। গবেষণা পরিচালনার সময় গবেষকদের বিষয়গত গুরুত্ব দেয়া উচিত।’ জলবায়ু পরিবর্তন বিপজ্জনক, সুইডেনে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ প্রভাব জেনে তাদের বাচ্চাদের হত্যা করেছে এমনও উদাহরণ আছে। সুতরাং জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে ভালো করে না জানলে এবং এই প্রভাবের বলয় থেকে বেরিয়ে আসার পথ বুঝতে না পারলে পরবর্তী সংকট মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের দেশের মানুষ যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে, এমন ভাবনা তারা কোনোদিনই ভাবেনি। কিন্তু এবারে তাপে রেল লাইন গলে যাওয়া, বা অজস্র মানুষ হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়া বড় ঘটনা। আমাদের দেশের মানুষ গত পাঁচ বছরেও এমন ভাবনা ভাবেনি। সুতরাং জলবায়ুর পরিবর্তনে যে তাপদাহ চলছে এর মোকাবিলার কথা এখন থেকেই ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর একযোগে কাজ করা দরকার।
নিউজ লাইট ৭১