দরকার তদারকি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের
- আপডেট টাইম : ১০:৪৩:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
- / 29
গত কয়েকদিন ধরে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অসহনীয় গরমের তীব্রতা। এমন অবস্থায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ। আর নয় বছরের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত চার এপ্রিল থেকেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল তাপমাত্রা, যা ১৫ এপ্রিল এসে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকার তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এপ্রিলে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবারের তাপমাত্রা বেড়েছে ক্রমান্বয়ে। অন্যান্য বছরের তুলনায় রোদের প্রখরতাও অনেক বেশি। এর মধ্যে লোডশেডিং থাকছে দীর্ঘ সময় ধরে। এসব কারণে দোকানে নির্দেশিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ওষুধের গুণগত মান কমে যাচ্ছে।
সংরক্ষণের বিষয়ে দোকানিদের নানা পরামর্শ দিয়ে গত বছরের মে মাসে চিঠি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে তদারকি না থাকায় পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। শুধু দোকানে নয়, সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থায়ও অনেক ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ৯০ শতাংশ ওষুধের মোড়কে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওষুধ সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা প্রয়োজন এমন ওষুধ মাইনাস ৪ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হবে। দেশে জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দোকানের নিবন্ধন দেওয়ার বিধান নেই। তবে বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এর মধ্যে ৫২৮টি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে বেশিরভাগ দোকানে সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। দীর্ঘ সময় ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকলে ওষুধের গুণগত মান কমে যায় বা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কার্যকারিতা কমে যায়। এই ওষুধ রোগ সারাতে পারে না।
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করলেও ওষুধের দোকানিরা তা করছেন না। দেশের ফার্মেসিগুলোতে ৯০ শতাংশ ওষুধ ঠান্ডা জায়গায় রাখা হচ্ছে না। আমরা বারবার বলে আসছি, ফার্মেসিগুলোতে যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে। তা না হলে দোকানদারের অজান্তেই ওষুধের মান নষ্ট হয়ে যায়। টিকা, ব্লাড প্রডাক্ট, বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনস্টিক কিট বেশি ঠান্ডায় যেমন ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। এ বিষয়গুলো আমাদের দেশে মানা হচ্ছে না, অধিকাংশ দোকানে রেফ্রিজারেটর নেই। এভাবে চলতে থাকলে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। এগুলো তদারকির দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ওষুধের ক্ষেত্রে তালিকা দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, টিকা সংরক্ষণ ক্রয় ও বিক্রয়ে সতর্ক হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি জরুরি।
নিউজ লাইট ৭১