জলাধার সুরক্ষা ও বনায়ন জরুরি
- আপডেট টাইম : ১২:১৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪
- / 33
সার্বিকভাবেই লক্ষ্য করা গেছে দেশের তাপামাত্রা বাড়ছেই। আমাদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে হওয়ার পরেও ক্রমশ বদলে যাচ্ছে ঋতু বৈচিত্র্য। যে কারণে এপ্রিলের শুরুতে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। দেশের চার বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ঢাকাসহ চার বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদদের ধারণা এ বছর গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বেশি থাকবে এবং আরও দীর্ঘ হবে। সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে, প্রত্যেক ঋতুতেই বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। চার দশকের বেশি সময়ের আবহাওয়ার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে আমরা নানা ধরনের পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। এর মধ্যে আছে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরন, সূর্যালোক ও মেঘের প্রবণতার পরিবর্তন।
তাপমাত্রার পরিবর্তন বুঝতে দেশের ৩৫টি আবহাওয়া স্টেশনের ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রার পরিবর্তনের দিকটি উঠে এসেছে। সব ঋতুতেই তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে। ঢাকার তাপমাত্রার ক্ষেত্রে ৪০ বছরে দেখা গেছে প্রাক্-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী তিন সময়েই প্রতি দশকেই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৯, শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শূন্য দশমিক ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শুধু শীতকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেছে শূন্য দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ গবেষণার পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে পরিকল্পনার জন্য গবেষণায় আসা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যৎ নীতিমালা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। এর মধ্যে গত ৪০ বছরে রংপুর বিভাগে সূর্যালোক সবচেয়ে বেশি কমেছে। এরপর সূর্যালোক কমেছে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে। সূর্যালোক কমছে, বাড়ছে মেঘ, বাড়ছে দূষণ। চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ছয়টির মতো তাপপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হতে পারে অতি তীব্র। এতে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা।
গত বছরের মতো তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি চলতি বছরও চলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, আগে তাপপ্রবাহ বর্ষাকাল, মানে জুনের শুরুতে শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। তাপপ্রবাহের সময়সীমা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এপ্রিলে শুরু হয়ে এটি অক্টোবর পর্যন্ত চলছে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য অজীব ও জীব প্রতিটি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অত্যধিক হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কারণ ওই গ্যাস তাপ শোষণ করে রাখে। বর্তমানে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া নামে যা সুপরিচিত, সেটা এ কারণেই হয়। উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার প্রভাবে উদ্ভিদ বায়ুদূষণ কম করে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কমে যায়। সিটি করপোরেশনের তদারকির অভাবেই ঢাকা থেকে সবুজ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন স্থপতিরা। তাপমাত্রা কমানোর জন্য অনেক প্রয়াসের মাঝে পরিকল্পিত বনায়ন অন্যতম। এ জন্য অঞ্চলভিত্তিক বনায়ন অতি জরুরি। যে অঞ্চলে বনভূমি কম, সেই অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ, জলাধার রক্ষার অভিযান জোরদার করতে হবে।
নিউজ লাইট ৭১