ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আড়ংয়ের বনানী শাখার সাবেক কর্মী গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০
  • / 155

নিউজ লাইট ৭১: রাজধানীর বনানীতে আড়ং-য়ের এক শো-রুমের ট্রায়াল রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় প্রায় ১৩ তরুণীর ১২০টি ভিডিও বানিয়েছেন এক যুবক। তার নাম সিরাজুল ইসলাম সজীব (২২)। তিনি তরুণীর পোশাক পরিবর্তন করার সময় এসব ভিডিও ধারণ করতেন বলে জানা গেছে।

এরপর যাদের ভিডিও ধারণ করতেন, তাদের কাছে সেই ভিডিও পাঠাতেন ফেসবুক মেসেঞ্জারে। কখনও অর্থ দাবি কখনও বিকৃত চাহিদার কথা জানাতেন তাদের। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি তার। এক তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ যুবকটিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আড়ংয়ের বনানী শাখার সাবেক কর্মী।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার সজীব বাবার নাম মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সী। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদে। রাজধানীর ১০৯৮ নম্বর পূর্ব শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় থাকতো সজীব।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, আড়ংয়ের একজন অফিসার আমাদের কাছে এসেছিল। তাদের দেওয়া তথ্য মতেই আমরা সজীবকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করি। সজীবকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারী ১৬ জানুয়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সিরাজুল ইসলাম সজীব তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে সীমান্ত সৈকত নামে আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলে।

ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে, পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে। এ সময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে এবং তার কথা মতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সজীবের কাছ থেকে একটি রেডমি ৫ প্লাস ফোন জব্দ করা হয়েছে। ওই মোবাইলে তার নিজের ফেসবুক আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আড়ংয়ের ওই নারীকর্মীর ভিডিও করা এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব জানিয়েছে, আড়ংয়ে চাকরিরত অবস্থায় সজীব চতুর্থ তলার কর্মচারী চেঞ্জরুমের বাইরের সানসেট-এ দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে নারী কর্মচারীদের অজান্তে তাদের নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার ভিডিও ধারণ করতো। তার কাছ থেকে ১৩ জন তরুণীর ১২০টি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক নারীকর্মীর ভিডিও করার অভিযোগে ডিসেম্বর মাসে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তার কাছে আগের করা সব ভিডিওগুলো সংরক্ষিত ছিল। তাকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তার কাছ থেকে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছি। মামলা দায়ের করার ব্যাপারে অভিযোগকারীকে শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছি। আড়ং যৌন হয়রানিমূলক যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সর্বদা কঠোর অবস্থানে থাকে।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় গত বছরের ডিসেম্বরে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আড়ংয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Tag :

শেয়ার করুন

আড়ংয়ের বনানী শাখার সাবেক কর্মী গ্রেপ্তার

আপডেট টাইম : ১১:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০

নিউজ লাইট ৭১: রাজধানীর বনানীতে আড়ং-য়ের এক শো-রুমের ট্রায়াল রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় প্রায় ১৩ তরুণীর ১২০টি ভিডিও বানিয়েছেন এক যুবক। তার নাম সিরাজুল ইসলাম সজীব (২২)। তিনি তরুণীর পোশাক পরিবর্তন করার সময় এসব ভিডিও ধারণ করতেন বলে জানা গেছে।

এরপর যাদের ভিডিও ধারণ করতেন, তাদের কাছে সেই ভিডিও পাঠাতেন ফেসবুক মেসেঞ্জারে। কখনও অর্থ দাবি কখনও বিকৃত চাহিদার কথা জানাতেন তাদের। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি তার। এক তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ যুবকটিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আড়ংয়ের বনানী শাখার সাবেক কর্মী।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার সজীব বাবার নাম মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সী। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদে। রাজধানীর ১০৯৮ নম্বর পূর্ব শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় থাকতো সজীব।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, আড়ংয়ের একজন অফিসার আমাদের কাছে এসেছিল। তাদের দেওয়া তথ্য মতেই আমরা সজীবকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করি। সজীবকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারী ১৬ জানুয়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সিরাজুল ইসলাম সজীব তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে সীমান্ত সৈকত নামে আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলে।

ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে, পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে। এ সময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে এবং তার কথা মতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সজীবের কাছ থেকে একটি রেডমি ৫ প্লাস ফোন জব্দ করা হয়েছে। ওই মোবাইলে তার নিজের ফেসবুক আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আড়ংয়ের ওই নারীকর্মীর ভিডিও করা এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব জানিয়েছে, আড়ংয়ে চাকরিরত অবস্থায় সজীব চতুর্থ তলার কর্মচারী চেঞ্জরুমের বাইরের সানসেট-এ দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে নারী কর্মচারীদের অজান্তে তাদের নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার ভিডিও ধারণ করতো। তার কাছ থেকে ১৩ জন তরুণীর ১২০টি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক নারীকর্মীর ভিডিও করার অভিযোগে ডিসেম্বর মাসে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তার কাছে আগের করা সব ভিডিওগুলো সংরক্ষিত ছিল। তাকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তার কাছ থেকে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছি। মামলা দায়ের করার ব্যাপারে অভিযোগকারীকে শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছি। আড়ং যৌন হয়রানিমূলক যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সর্বদা কঠোর অবস্থানে থাকে।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় গত বছরের ডিসেম্বরে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আড়ংয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।