সবার চোখ এখন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ভোটে
- আপডেট টাইম : ০৮:০৯:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০
- / 112
নিউজ লাইট ৭১: হামলা অভিযোগে গরম ভোটের মাঠ। রাজনৈতিক নেতাদের বাকবিতণ্ডায় চোখ রাখছেন সবাই। ক্ষমতাসীন দল বলছে, বিছিন্ন হামলা বিএনপির তৈরি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই তারা ভোটে অংশ নিয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবি— হামলার ঘটনার তথ্য প্রমাণ নির্বাচন কমিশনকে জমা দিলেও উপরের নির্দেশে তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। ভোট প্রচারণার এমন অবস্থায় রাজনৈতিক মহলের সবার চোখ এখন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ভোটে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘বিএনপি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে রক্ষা করার জন্য নির্বাচনের নামে আন্দোলনের কর্মসূচি বেগবান করতে চাচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট করা নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের এই মেয়রপ্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ভোট দেয়ার একটা আধুনিক পদ্ধতি ইভিএম। ঢাকাবাসী এ আধুনিক প্রযুক্তি সাদরে গ্রহণ করেছে। কারও মধ্যে এটা নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছি না।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছে জানিয়ে শেখ ফজলে নূর বলেন, আমাদের কাছে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে পাঁচটি লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
প্রতিটি জায়গায় নগরবাসীর কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছি। ঢাকার মানুষ পয়লা ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় রয়েছে। পয়লা ফেব্রুয়ারি সারা দিন তারা নৌকার পক্ষে রায় দেবে। নৌকার বিজয় হলে নব সূচনা হবে। আর সেই নব সূচনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে নবযাত্রা।
আচরণবিধির কারণেই মেয়র সাঈদ খোকন নির্বাচনি প্রচারে নামছেন না বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এবার মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন, এটা স্বাভাবিক। তিনিও তো দল করেন। তবে কষ্ট পেলেও সাঈদ খোকন আমার পক্ষে আছেন। তিনি আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।
ভোটবিহীন সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে দাবি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, যে এলাকাতেই যাচ্ছি, মানুষের গণজোয়ার দেখছি।
আপনারা ১ ফেব্রুয়ারি দল বেঁধে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে শরিক হবেন।
এই সরকারের কোনো ষড়যন্ত্রই ধানের শীষের বিজয় ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। গতকাল ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় হাজী হোসাইন প্লাজার সামনে নির্বাচনি প্রচারণায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিলো গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা। এ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু কোনো অপশক্তির কাছে আমাদের সেই চেতনাকে বিলীন হতে দিতে পারি না। আমরা এটা মানবো না। এই দেশ আমাদের সবার। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।
বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, তারা নিজেরা সংঘর্ষ বাধাতে পারেন। গতকাল উত্তর সিটির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত নির্বাচনি সমাবেশে আতিকুল ইসলাম একথা বলেন।
বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মিছিলে হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আতিকুল আরও বলেন, আমার প্রতিপক্ষ আর আমি কয়েকবার কিন্তু সামনা-সামনি হয়েছি। কোনো সমস্যা কিন্তু আমি দেখতে পাই নাই। হয়তো বা তারা নিজেরাই বানাতে পারেন। নির্বাচন কমিশন আছেন।
তাদের অনুরোধ করবো আপনারা সবাই আরও বেশি নজর দিন এ ব্যাপারে। এ সময় নৌকা মার্কার পক্ষে গণজোয়ারের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলেন, যতই গণসংযোগ করা হচ্ছে, ততই মানুষের ভালোবাসা বাড়ছে।
নির্বাচনি প্রচারণায় হামলার ঘটনাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, তারা আমাদের নানাভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। তবে যত চেষ্টাই করুক আমরা নির্বাচন থেকে পিছু হটবো না।
দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং এলাকাবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন। আমরা আমাদের গণসংযোগ চালিয়ে যাবো। গতকাল রাজধানীর গাবতলীতে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।
একটু আগে আমরা ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছিলাম ?উল্লেখ করে তাবিথ আউয়াল বলেন, কিন্তু পেছন দিক থেকে কাপুরুষের মতো আমাকে টার্গেট করে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমার সঙ্গের সহকর্মী নেতকর্মীদের মারা হয়েছে। জাতীয় নেতাদের টার্গেট করে মারা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো— এ হামলা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সামনেই হয়েছে।
পুলিশের প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করে তাবিথ বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনেই এই হামলা হয়েছে। এলাকার ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুম ও তার গুন্ডাবাহিনী করেছে। আমি আশা করবো ওনারা তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আমার ওপর হামলা বিশেষ করে আমার মনোবল ভাঙবে না। পিছু হটাতে পারবেন না। গণসংযোগ এগিয়ে নেব। ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তা প্রমাণ করবো।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তাবিথ বলেন, ‘আমরা দেখবো কমিশন আইনানুযায়ী কি ব্যবস্থা নেয়। কারণ আমরা এর আগে যখন নিরাপত্তার জন্য শঙ্কা প্রকাশ করে আবেদন করেছিলাম। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।’