বিএনপি সবসময়ই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরোধীতা করে
- আপডেট টাইম : ০৯:৩৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২০
- / 98
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সবসময়ই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরোধীতা করে। তাই তারা আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ইলেক্ট্রোনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তেরও বিরোধীতা করছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) তার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
ড.হাছান বলেন,‘বিএনপি বুঝতে পেরেছে দেশবাসী আর তাদের সাথে নেই। তাই তারা সব সময়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।’
মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইভিএম ব্যবহৃত হয়। ‘কিন্তু আমি জানি না বিএনপি কেন সব সময়ই এর ব্যবহারের বিরোধীতা করে। শুধু ইভিএমই নয়,এমনকি ব্যালট পেপারে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও বিরোধী। আসলে, তারা নির্বাচনে তাদের নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি বুঝতে পেরেই এমনটা করছে।’
ড.হাছান বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল আনার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন। ‘পরে বিপুল অথের্র বিনিময়ে আমরা সাবমেরিন ক্যাবল ক্রয় করি।’
মন্ত্রী বলেন,তাদের (বিএনপি) বিবৃতিতে বুঝা যায় তারা আসন্ন নির্বাচনে পরাজিত হবে। ‘তাদের মুল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও তার মুক্তি নিয়ে ড. কামাল হোসেনের এক মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তিনি (ড. কামাল) যে কোন ইস্যুতেই সংবিধানকে টেনে আনেন।
তিনি বলেন, শুধু ড. কামাল হোসেনই নন, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যগত ইস্যুতে, বিএনপিও অসুস্থ্য-রাজনীতি করে আসছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একমাত্র বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব। এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। খালেদার মুক্তির ব্যাপারে সরকারের আইনগত কোন এক্তিয়ার নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে বরাবরই অসুস্থ্য রাজনীতি করে আসছে। বস্তুত, সরকার তাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
ড.হাছান বলেন, খালেদা জিয়াকে দেশের সর্বোচ্চ মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা চিকিৎসা করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার স্বাস্থ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছেন খালেদা জিয়া বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভূগছেন। পাশাপাশি তার হাঁটু ও কোমরে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাথা আছে। চিকিৎসকরা তাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরকে ধারাবাহিক সাফল্যের আরো একবছর বলে অভিহিত করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সেই সাথে তিনি বলেন, নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে দেশের অগ্রগতি আরো বেশি হতো।
তথ্য মন্ত্রী বলেন, ‘গতবছরের ৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে জনগণের রায় নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এদিন টানা তৃতীয়বার এবং দেশে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। একইসাথে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ শপথ গ্রহণ করেছিলেন। সেই হিসেবে সরকারের আজকে একবছর পূর্তি।’
দশ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গতবছরও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্যের বছর ছিল, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৯ সালের দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে, ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
সেই অভিযাত্রায় বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পোন্নত নয়, ইতিমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর খাদ্য ঘাটতির দেশ নয়, খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
ড. হাছান বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
একইসাথে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশের নিচে, এবং গত ১১ বছরে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রসমূহের যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যোগফল নেয়া হয় তাহলে, বাংলাদেশে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অর্জন জাতিকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে, স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার স্বাক্ষর।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেটি ২০০৮ সালে ছিল ৬শ’ ডলার, সেটি গত বছর প্রায় ২০০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী আয় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারে যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার।
আজকে বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য সেখানেই পাকিস্তানে টেলিভিশনে আলোচনা হয় পাকিস্তানকে যেন পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বানানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অকপটে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ আজকে সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।
আমি আরো কিছু তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই-উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার প্রায় ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়।
এতো ব্যাপকভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে নাই। ২০২০ সালে ১ জানুয়ারি ৪ কোটি ২৬ লক্ষ ১৯ হাজার ৮শ ৬৫জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
শুধুমাত্র বাংলা বই বিতরণ করা হয় তা নয়, দেশে ৫টি নৃ-গোষ্ঠির জন্য তাদের ভাষা ৭৭ লক্ষ বই বিতরণ করা হয়েছে। মায়ের হাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মায়েদের কাছে মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হচ্ছে, যা পৃথিবীতে একটি অনন্য নজির।
বিদ্যুৎ খাত প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন দেশে ৪০ শতাংশের মতো মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩৩শ’ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সূচনাকাল ১৯০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১০৬ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৩শ’ মেগাওয়াট।
আর ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে সেই উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট। ৯৫ শতাংশ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মুজিববর্ষে আমরা আশা করছি দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।
সরকার পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পদ্মাসেতুর ৮৪.৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
ড. হাছান বলেন, উপমহাদেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে মোটর টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দ্রুত নির্মাণ হচ্ছে, যার ৪০ শতাংশের এর বেশি কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকায় চলাচলের সুবিধার্থে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে, যা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
খাদ্য উৎপাদন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১৯৫০ এর দশকে দেশের জনসংখ্যা যখন ৪ কোটি ছিল, তখন দেশ ছিল খাদ্যঘাটতির। এখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে কম আয়তনের জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্তের দেশ, যা শুধু অন্য দেশগুলোর কাছে নয়, বিশ্ব খাদ্যসংস্থা কাছেও বিস্ময়।
বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ কোটি ৪৪ লাখ মেট্রিক টন যা ২০০৬ সাল অর্থাৎ তুলনায় ৬১ ভাগ বেশি। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। আলু উৎপাদনে সপ্তম। বিএনপি-জামায়াত আমলে কৃষি ভর্তুকি ছিল না বললেই চলে।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সম্মেলন কক্ষে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতিবাচক রাজনীতি ও সংঘর্ষের রাজনীতি পরিহারের পক্ষে।
কিন্তু একপক্ষ হাত প্রসারিত করলে তা সম্ভব নয়, বিরোধী পক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
নিজ মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখানো প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল কয়েক যুগ আগে থেকে। কিন্তু সেটি সম্ভপর হয়নি। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে দুরদর্শনের ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শিত হচ্ছে।
এ মাসেই বাংলাদেশ বেতারও সমগ্র ভারতে সম্প্রচারিত হবে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রম নির্ধারণের জন্য বারং বার তাগাদা দেয়া হয়েছিল, যা গত বছর আমরা ঠিক করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে যার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
ড. হাছান বলেন, বিদেশি টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছি। অনেকগুলো টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল কোনো অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটিকে আমরা একটি নিয়মনীতির মধ্যে এনেছি। অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল কোর্ট চলছে।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।