ঢাকা ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেষ হতে চলেছে আরো একটি বছর তোলপাড় ৪ হত্যাকাণ্ডে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৭:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 145

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: শেষ হতে চলেছে আরো একটি বছর। ২০১৯ সালে অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশের বিবেকবান প্রত্যেক মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। বছরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশি গণমাধ্যমেও ঠাঁই পেয়েছিল।

২০১৯ সালের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া ছেলেধরার গুজবে দেশে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগমের রেণু হত্যাকাণ্ড।

আবরার ফাহাদ হত্যা : ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বুয়েটে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবরার হত্যার ৩৭ দিনের মাথায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত হয়। জড়িত ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এরপরই ৪ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা।

রিফাত শরীফ হত্যা : গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তা পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এরপর তদন্ত করে গত ১ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা : চলতি বছরের ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল অধ্যক্ষের সহযোগীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে যায় নুসরাত। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিকিৎসাধীন ১০ এপ্রিল রাতে সে মারা যায়। দেশব্যাপী আলোচিত এ মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদ- দেন। আসামিদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে সেই টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেণু হত্যা : চলতি বছরে ছেলেধরা গুজবে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনায় মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে গত ২০ জুলাই সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু। তাসলিমা মূলত ওই স্কুলে তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। পরে পিটিয়ে মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাসলিমাকে মারার দৃশ্য ভিড় করে মানুষ দেখছিলেন এবং অনেকে ভিডিও করছিলেন সেই দৃশ্য। কেউ তাকে বাঁচাতে আসেননি।

Tag :

শেয়ার করুন

শেষ হতে চলেছে আরো একটি বছর তোলপাড় ৪ হত্যাকাণ্ডে

আপডেট টাইম : ১১:৩৭:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: শেষ হতে চলেছে আরো একটি বছর। ২০১৯ সালে অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশের বিবেকবান প্রত্যেক মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। বছরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশি গণমাধ্যমেও ঠাঁই পেয়েছিল।

২০১৯ সালের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া ছেলেধরার গুজবে দেশে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগমের রেণু হত্যাকাণ্ড।

আবরার ফাহাদ হত্যা : ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বুয়েটে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবরার হত্যার ৩৭ দিনের মাথায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত হয়। জড়িত ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এরপরই ৪ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা।

রিফাত শরীফ হত্যা : গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তা পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এরপর তদন্ত করে গত ১ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা : চলতি বছরের ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল অধ্যক্ষের সহযোগীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে যায় নুসরাত। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিকিৎসাধীন ১০ এপ্রিল রাতে সে মারা যায়। দেশব্যাপী আলোচিত এ মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদ- দেন। আসামিদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে সেই টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেণু হত্যা : চলতি বছরে ছেলেধরা গুজবে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনায় মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে গত ২০ জুলাই সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু। তাসলিমা মূলত ওই স্কুলে তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। পরে পিটিয়ে মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাসলিমাকে মারার দৃশ্য ভিড় করে মানুষ দেখছিলেন এবং অনেকে ভিডিও করছিলেন সেই দৃশ্য। কেউ তাকে বাঁচাতে আসেননি।