সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখার প্রবনতা বেড়েই চলেছে
- আপডেট টাইম : ০৮:২৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 97
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো ঘিরে সন্নিহিত এলাকার সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখার প্রবনতা বেড়েই চলেছে। চার আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের ভেতরে যত গাড়ি রাখা হয় তার চেয়ে বেশি থাকে রাস্তায়।টার্মিনালে প্রবেশ এবং বের হওয়ার ক্ষেত্রেও চলছে চরম বিশৃংখলা। ফলে নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট, জনসাধারনের ভোগান্তি চরমে পৌছাচ্ছে। সড়কে যাতায়াতেও দুর্ভোগ বাড়ছে। শুধু তাই নয়, রাজধানী জুড়েই যত্রতত্র এখন দূরপালার বাস কাউন্টারের ছড়াছড়ি। ধানমন্ডি, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও পান্থপথসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দূরপালার বাস ডিপো। অধিকাংশ কাউন্টারের সামনে থেকে যাত্রী তুলছে বাস।এতে পথ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী।এ নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের কোন উদ্যোগ বা নির্দেশনা কাজে আসছে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিনের মেয়র একাধিক বার বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও ফলাফল শূন্য। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ ও বাস মালিকরা বলছেন,টার্মিনালের ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত বাস বৃদ্ধির কারনে রাস্তায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে চালকরা। আবার অনেক দুরপালার চালক টার্মিনালে প্রবেশে গাড়ির লম্বা লাইন থাকলে রাস্তার পাশেই গাড়ি রেখে বিশ্রামে চলে যান।
তবে এই বিশৃংখলা এবং টার্মিনালের স্থান সংকুলান সমস্যা সুরাহার জন্য নগরীর ভেতর থেকে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান,বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করে ক্রমান্বয়ে ঢাকা মহানগরী থেকে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়া হবে। এজন্য স্থান নির্ধারনসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ বলেন, আন্ত:জেলা বাস সার্ভিসের জন্য রাজধানীর প্রবেশ মুখে ৯ টি বাস টার্মিনাল নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অক্টোবর থেকে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সমীক্ষার কাজ শেষ হবে।
ঢাকার যানজট ভোগান্তি কমাতে শহরের ভেতরের টার্মিনালগুলোয় শুধু সিটির ভেতরে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো রাখা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন,রাজধানী বা শহরের ভেতরে ১৯৮৪ সালে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করাই ভুল ছিল।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্রে জানা গেছে,আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও ডিপোর জন্য প্রাথমিকভাবে যেসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের দক্ষিণ পাশে ঝিলমিল তেগুরা, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের উত্তর, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের দক্ষিণ পাশ, ঢাকা-আরিচা হাইওয়ের উত্তর পাশ, নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ের পশ্চিম পাশ, গাজীপুর-ঢাকা-ময়মনংসিহ হাইওয়ের পশ্চিম পাশ, উত্তরা বিরুলিয়া এমআরটি লাইন-৬ এর কাছাকাছি, আতিবাজার বসিলা এবং রাজউকের পূর্বাচল ঢাকা বাইপাসের দক্ষিণ পাশ।
জানা গেছে,মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের ধারণক্ষমতার ৪ গুণ বেশি বাস রাখা হয়। অতিরিক্ত বাস থাকায় প্রধান সড়কসহ আশপাশের রাস্তাগুলোয় পার্কিং করা হচ্ছে দূরপালার এসব যানবাহন। এতে মহাখালী থেকে আবদুলাহপুর পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। দূরপালার এসব পরিবহনের কারণে নগরীর মহাখালী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এয়ারপোর্ট রোডের যানজট ক্রমেই বাড়ছে।সড়কটির কোনো কোনো অংশে দীর্ঘ যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। এ সড়কের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ দখলে রাখছে মহাখালী টার্মিনালের গাড়ি। বাসগুলো মূলত আবদুলাহপুর হয়ে মহাসড়কে যাচ্ছে। টার্মিনালটিতে আড়াইশ’র মতো বাস রাখা যায়। ধারণক্ষমতা না থাকায় টার্মিনালের সামনে শহীদ তাজউদ্দিন সড়ক ও আশপাশের রাস্তায় পার্কিং করা হচ্ছে শত শত বাস। দেখা যায়, টার্মিনালের বাইরেও অবাধে ওঠানামা করছেন দূরপালার যাত্রীরা। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, টার্মিনালে তুলনামূলক জায়গা খুবই কম। একটি গাড়ি বের হলে ১০টি গাড়ি প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করে। সড়কে যানজট কমাতে টার্মিনালে বাস এক লাইনে প্রবেশের নিয়ম করে দেওয়া হলেও মানছে না বাসচালক ও হেলপাররা। কিছু সময় একাধিক লাইন হওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু বাস লাইন ছাড়া এসে টার্মিনালে প্রবেশের চেষ্টা করে। এতে যানজট আরও বেড়ে যায়। একজন ড্রাইভার নিউজ লাইট ৭১ কে বলেন, টার্মিনালে প্রবেশের জন্য দীর্ঘলাইন ধরে থাকতে হয়। দু’শ থেকে তিনশ’ কিলোমিটার জার্নি করে কোনো চালকই টার্মিনালে প্রবেশের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে চায় না। বহুদূর থেকে এসে বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকা যায় না।
এদিকে মহাখালী ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখার জায়গা আছে দু’শ। অথচ টার্মিনালের বাস আছে দেড় হাজারেরও বেশি। মহাখালী আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জানান, টার্মিনালটি মূলত ৩০০ বাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে ভেতরে ২৫০টি গাড়ি রাখা যায়। কিন্তু বর্তমানে এ টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত ২০ রুটে ৯০০ থেকে ১০০০ বাস চলাচল করে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন,মহাখালীতে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল কোনক্রমেই রাখা হবে না।
এদিকে সায়েদাবাদ টার্মিনালের ভেতর বাসের কাউন্টার ও কাউন্টারসংলগ্ন খোলা জায়গায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকলেও বাসগুলো থাকে সায়েদাবাদ মূল সড়কের ওপর। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরাও সেই সড়ক থেকেই গাড়িতে ওঠেন। যাত্রী পাওয়ার জন্য সবগুলো পরিবহন কর্তৃপক্ষ নিয়ম অমান্য করে টার্মিনালের বাইরে একাধিক কাউন্টার দিয়েছে। সেখান থেকেই বিক্রি করছে টিকিট ও গাড়িতে তুলছে যাত্রী।সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল দেশের ১৮ জেলার জনসাধারণের সড়কপথের একমাত্র ভরসা। এখান থেকে প্রতিদিন পৌনে ১ লাখ মানুষ ও দেড় হাজারের মতো গাড়ি বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যায়। এ টার্মিনালটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত। টার্মিনালের দুই প্রান্তে মিশেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের দুটি শাখা। টার্মিনাল থেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রয়েছে তিনটি পথ। বাস পরিবহন মালিকদের সাধারন সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউলাহ বলেন, যানজটের ব্যাপারে আমরা আমাদের দোষ স্বীকার করছি। সেই সঙ্গে পুলিশকেও তাদের দোষ স্বীকার করতে হবে। সায়েদাবাদ টার্মিনালের বাইরে শত-শত বাস দাঁড়িয়ে থাকে। সড়কের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে এসব বাস কোম্পানির কাউন্টার। এ কারণে যাত্রীরা টার্মিনালের ভেতর যেতে চান না। দূরপালার অনেক বাস মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত চলে আসে। অথচ এসব বাসের সায়েদাবাদ টার্মিনালে যাওয়ার কথা। এ জন্য ফ্লাইওভারের লুপ রয়েছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ করা হোক।
রাজধানীতে গাবতলী বাস টার্মিনালটি সবচেয়ে বড়। উত্তবঙ্গ ও দক্ষিনবঙ্গের প্রায় সব বাস এখান থেকে চলাচল করে। এখানে ১৪০০ বাস রাখার ধারন ক্ষমতা থাকলেও চলাচল করে ৩ হাজারের বেশি গাড়ি। ফলে এই টার্মিনালের বাস শ্যামলী থেকে কল্যানপুর,মীরপুর পর্যন্ত সড়কের ওপর এলোপাথাড়িভাবে রাখা হচ্ছে। রাস্তার পাশে কয়েকটি পরিবহনের ডিপো থাকলেও তাদের বেশিরভাগ গাড়ি থাকতে দেখা যায় সড়কের পাশে।
রাজধানীর পুরানো ফুলবাড়িয়া আন্ত:জেলা বাসটার্মিনাল থেকে খুলনা,মাওয়া,গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলে। পুরানো ঢাকার প্রবেশমুখের এই টার্মিনালের জায়গা খুবই কম। ফলে অধিকাংশ বাস থকে রাস্তায়। স্টপওভার টার্মিনালও এখানে । এতে করে বিশাল এলাকাজুড়ে যানজট চলে আসছে দীর্ঘ দিন যাবত। এর কোন সুরাহা হচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফুলবাড়িয়া স্টপওভার টার্মিনালের বাস পাশ্বর্বতী আনন্দবাজার বস্তির খালি জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে। সড়কের ওপর কোনও বাস দাঁড়াতে পারবে না। এ জন্য পুলিশকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েতউলাহ বলেন, গুলিস্তান সুন্দরবন মার্কেটের সামনের সড়কে কাপ্তানবাজারের দু-শতাধিক মুরগির ট্রাক প্রতি রাতে দাঁড়িয়ে থেকে যানজটকে আরও খারাপ করে তুলছে। মাওয়ার বাসগুলো দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে।