ঢাকা ১০:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে গত বুধবার থেকেই গরম কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়।

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০১:২৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 126

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: শীত বাংলা সনের পঞ্চম ঋতু। নিয়ম অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ মাস শীত ঋতু। সে অনুযায়ী চার দিন আগে শীত ঋতু শুরু হলেও সারা দেশে হানা দিয়েছে আরও কিছু দিন আগে।

তবে রাজধানীতে গত বুধবার থেকেই কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। বুধবারই গরম কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়।

গতকাল ছিলো প্রচণ্ড ভিড়। বিশেষ করে রাজধানীর গুলিস্তান এবং বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম পাশে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। সাথে সাথে পুরো রাজধানীর গরম কাপড়ের বেচাকেনা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

হঠাৎ ঠাণ্ডা বাতাসে ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে ক্রেতাদের দাবি। তবে ক্রেতারা মনে করেন, ন্যায্য দামেই তারা বিক্রি করছেন।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম রাস্তায় কম্বল কিনতে এসেছেন শিউলি আক্তার। তিনি পেশায় ব্যাংকার। প্রচণ্ড শীতের কারণে লাঞ্চ বিরতিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম পাশে কম্বল কিনতে এসেছেন।

তিনি দাবি করেন, গত চার দিন আগে যে কম্বল তিন হাজার বলে জোর করেছে, আজ তা চার হাজারেও বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে একই অবস্থা ছিলো বঙ্গ মার্কেটের দোকানগুলোতে। এক দোকানিকে বলতে শোনা যায়, ‘আপা, আপনার লগে দামাদামি করার মতো সময় অহন নেই। এক দামে নিলে নেন, না নিলে আসতে পারেন।’

রাজধানীর বঙ্গবাজারের কম্বলের মার্কেটের দোকানদার এক নারী ক্রেতাকে এ কথা বলছিলেন। কথাটি বলা শেষ করেই চোখ অন্য ক্রেতার দিকে। এই ক্রেতা আছেন না চলে যাচ্ছেন এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।

রাজধানীসহ সারা দেশে হঠাৎ করে শীত ঝেঁকে বসায় কম্বলসহ গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। কয়েক দিন ধরেই হালকা শীত পড়ার পর গরম কাপড় কেনাবেচা শুরু হয়।

তবে গত বুধবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমলে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, কার্ডিগান, শাল, হাতমোজা ও কানটুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দোকানিরা বেশ খুশি।

গতকাল দুপুরে গুলিস্তানে সরেজমিন দেখা যায়, কম্বলসহ গরম কাপড়ের প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অন্য সময় ক্রেতা দেখলেই ডাকাডাকি করেন বিক্রেতারা।

তবে গতকাল ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের ডাকাডাকি করতে দেখা যায়নি। গরমের কাপড়ও কম দামাদামিতেই বিক্রি হতে দেখা যায়। ফুটপাতের দোকানের কারণে কাপ্তান বাজার থেকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট পর্যন্ত সাধারণ মানুষের হাঁটার রাস্তাও ছিলো না। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গুলিস্তানে জ্যাম ছিলো অনেক বেশি।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা গৃহবধূ শিরিন আক্তার তার ১৫ বছরের ছেলের জন্য জ্যাকেট কিনতে এসেছেন।

দোকানদার দেড় হাজার টাকা দাম চাইলে তিনি এক হাজার ২০০ টাকা দাম বলেন। এসময় দোকানি এক দাম হলে তার দোকান থেকে নেয়ার অনুরোধ জানান।

কবে থেকে শীতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে, জানতে চাইলে মাহবুব নামে গুস্তািনের এক দোকানি বলেন, ‘এমন প্রচণ্ড ভিড়ে এসব জিজ্ঞাসা কইরেন না। পরে আইসেন।’

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিনি বলেন, ‘এবার সিজনের গরমের মালামাল বিক্রি দিন দশেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ বেচাবিক্রি অনেক ভালো।’

অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমরা সবসময় যে দামি বিক্রি করি, আজও সে দামেই বিক্রি করছি।’ সদরঘাটের ফুটপাতে ব্যবসা করেন সলিমুল্লাহ মুন্সি। তিনি ছোটদের গরম কাপড় বিক্রি করেন। তুলনামূলক দাম বেশি বলায় তর্ক করছেন কেরানিগঞ্জের বাসিন্দা হাফছা আক্তার। দোকনদার বুঝানোর চেষ্টা করছেন শীত বেশি পড়ায় তাদের বেশি দামে মাল কিনতে হয়েছে। তাই দাম একটু বেশি।

অপরদিকে ক্রেতা বলছেন, কাপড় তো আপনি শীত পড়ার পরে কিনেন নি। আগেই কিনেছেন। তাহলে দাম বাড়বে কিভাবে? মিথ্যা বলেন কেন? দোকানি এই দামে নিলে নেন না হয় চলে যান। আমি এর কমে বিক্রি করবো না।

অন্যদিকে, কালিগঞ্জে গিয়েও প্রচণ্ড ভিড় চোখে পড়ে। একদিকে পাইকারি মাল বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খুচরা মাল। সব মিলিয়ে কাপড় তৈরি এলাকা হিসেবে পরিচিত কালিগঞ্জ এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে।

দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এভাবে শীত থাকলে এবারে তাদের আশার তুলনায় বেশি বিক্রি হবে।

অন্যদিকে কারখানার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের কথা চিন্তা করে এবার মাল কম তৈরি করা হয়েছে। যা বানানো হয়েছে তা আজ-কালকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পুরনো মাল শেষ হয়ে যাওয়াতে আবারো নতুন মাল বানানো শুরু করছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা ভালো হবে বলে তারা ধারণা করছেন ।

Tag :

শেয়ার করুন

রাজধানীতে গত বুধবার থেকেই গরম কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়।

আপডেট টাইম : ০১:২৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: শীত বাংলা সনের পঞ্চম ঋতু। নিয়ম অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ মাস শীত ঋতু। সে অনুযায়ী চার দিন আগে শীত ঋতু শুরু হলেও সারা দেশে হানা দিয়েছে আরও কিছু দিন আগে।

তবে রাজধানীতে গত বুধবার থেকেই কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। বুধবারই গরম কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়।

গতকাল ছিলো প্রচণ্ড ভিড়। বিশেষ করে রাজধানীর গুলিস্তান এবং বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম পাশে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। সাথে সাথে পুরো রাজধানীর গরম কাপড়ের বেচাকেনা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

হঠাৎ ঠাণ্ডা বাতাসে ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে ক্রেতাদের দাবি। তবে ক্রেতারা মনে করেন, ন্যায্য দামেই তারা বিক্রি করছেন।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম রাস্তায় কম্বল কিনতে এসেছেন শিউলি আক্তার। তিনি পেশায় ব্যাংকার। প্রচণ্ড শীতের কারণে লাঞ্চ বিরতিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম পাশে কম্বল কিনতে এসেছেন।

তিনি দাবি করেন, গত চার দিন আগে যে কম্বল তিন হাজার বলে জোর করেছে, আজ তা চার হাজারেও বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে একই অবস্থা ছিলো বঙ্গ মার্কেটের দোকানগুলোতে। এক দোকানিকে বলতে শোনা যায়, ‘আপা, আপনার লগে দামাদামি করার মতো সময় অহন নেই। এক দামে নিলে নেন, না নিলে আসতে পারেন।’

রাজধানীর বঙ্গবাজারের কম্বলের মার্কেটের দোকানদার এক নারী ক্রেতাকে এ কথা বলছিলেন। কথাটি বলা শেষ করেই চোখ অন্য ক্রেতার দিকে। এই ক্রেতা আছেন না চলে যাচ্ছেন এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।

রাজধানীসহ সারা দেশে হঠাৎ করে শীত ঝেঁকে বসায় কম্বলসহ গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। কয়েক দিন ধরেই হালকা শীত পড়ার পর গরম কাপড় কেনাবেচা শুরু হয়।

তবে গত বুধবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমলে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, কার্ডিগান, শাল, হাতমোজা ও কানটুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দোকানিরা বেশ খুশি।

গতকাল দুপুরে গুলিস্তানে সরেজমিন দেখা যায়, কম্বলসহ গরম কাপড়ের প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অন্য সময় ক্রেতা দেখলেই ডাকাডাকি করেন বিক্রেতারা।

তবে গতকাল ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের ডাকাডাকি করতে দেখা যায়নি। গরমের কাপড়ও কম দামাদামিতেই বিক্রি হতে দেখা যায়। ফুটপাতের দোকানের কারণে কাপ্তান বাজার থেকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট পর্যন্ত সাধারণ মানুষের হাঁটার রাস্তাও ছিলো না। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গুলিস্তানে জ্যাম ছিলো অনেক বেশি।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা গৃহবধূ শিরিন আক্তার তার ১৫ বছরের ছেলের জন্য জ্যাকেট কিনতে এসেছেন।

দোকানদার দেড় হাজার টাকা দাম চাইলে তিনি এক হাজার ২০০ টাকা দাম বলেন। এসময় দোকানি এক দাম হলে তার দোকান থেকে নেয়ার অনুরোধ জানান।

কবে থেকে শীতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে, জানতে চাইলে মাহবুব নামে গুস্তািনের এক দোকানি বলেন, ‘এমন প্রচণ্ড ভিড়ে এসব জিজ্ঞাসা কইরেন না। পরে আইসেন।’

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিনি বলেন, ‘এবার সিজনের গরমের মালামাল বিক্রি দিন দশেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ বেচাবিক্রি অনেক ভালো।’

অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। আমরা সবসময় যে দামি বিক্রি করি, আজও সে দামেই বিক্রি করছি।’ সদরঘাটের ফুটপাতে ব্যবসা করেন সলিমুল্লাহ মুন্সি। তিনি ছোটদের গরম কাপড় বিক্রি করেন। তুলনামূলক দাম বেশি বলায় তর্ক করছেন কেরানিগঞ্জের বাসিন্দা হাফছা আক্তার। দোকনদার বুঝানোর চেষ্টা করছেন শীত বেশি পড়ায় তাদের বেশি দামে মাল কিনতে হয়েছে। তাই দাম একটু বেশি।

অপরদিকে ক্রেতা বলছেন, কাপড় তো আপনি শীত পড়ার পরে কিনেন নি। আগেই কিনেছেন। তাহলে দাম বাড়বে কিভাবে? মিথ্যা বলেন কেন? দোকানি এই দামে নিলে নেন না হয় চলে যান। আমি এর কমে বিক্রি করবো না।

অন্যদিকে, কালিগঞ্জে গিয়েও প্রচণ্ড ভিড় চোখে পড়ে। একদিকে পাইকারি মাল বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খুচরা মাল। সব মিলিয়ে কাপড় তৈরি এলাকা হিসেবে পরিচিত কালিগঞ্জ এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে।

দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এভাবে শীত থাকলে এবারে তাদের আশার তুলনায় বেশি বিক্রি হবে।

অন্যদিকে কারখানার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের কথা চিন্তা করে এবার মাল কম তৈরি করা হয়েছে। যা বানানো হয়েছে তা আজ-কালকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পুরনো মাল শেষ হয়ে যাওয়াতে আবারো নতুন মাল বানানো শুরু করছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা ভালো হবে বলে তারা ধারণা করছেন ।