ঢাকা ০৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হতে পারে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০১:১৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 117

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে তিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হতে দেবেন না।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা কিন্তু মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা ভারতে এর আগে হয়নি। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, রাজ্য যদি আইন না মানার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তাহলে কী হবে? সে ক্ষেত্রে কি কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে এ রাজ্যে?

সিএএকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের এ রকম পরিস্থিতিতে কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। আইনজ্ঞ, সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও তাদের মতামত জানাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো আইন করলে রাজ্য সরকার সেই আইন মানতে বাধ্য। এক্ষেত্রে আইন না মানা রাজ্যে কার্যত ভারতীয় সংবিধান অকার্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা বলে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হতে পারে।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেল, আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্ব কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়। সে বিষয়ে কেন্দ্র যদি কোনো আইন আনে তবে রাজ্যকে তা মানতেই হবে।’

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দীপন সরকার বলেন, ‘সংবিধানের ২৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে দেওয়া রয়েছে, সংসদে প্রণীত আইন মেনে চলতে হবে রাজ্যকে। এমনকি রাজ্যকে সেই আইন মানার সরাসরি নির্দেশও দিতে পারে কেন্দ্র।’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারিভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করছেন যে তিনি সিএএ মানবেন না। এটা ২৫৬ ধারার বিরুদ্ধে।’ অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী।

সংবিধানে খুব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, ‘২৫৬ ধারা অনুযায়ী যদি কেন্দ্রের নির্দেশ না মেনে নেয় রাজ্য এবং ওই কেন্দ্রীয় আইন না মানে, তাহলে ধরে নেওয়া হবে ওই রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা চলছে।

সেক্ষেত্রে রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থার কারণে কেন্দ্র সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির শাসন ঘোষণা করতে পারে।’

কিন্তু বিশ্লেষকরা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাস্তবে ভারতীয় সংবিধানের বিস্তৃতি এতটাই বেশি যে, অনেক বিষয় নিয়েই চূড়ান্ত কী হতে পারে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

অমল মুখোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ‘আইন না মানার সিদ্ধান্তে যদি রাজ্য সরকার অনড় থাকে তাহলে কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে তা সংবিধানবিরোধী হবে না।

কিন্তু এটাও ঠিক যে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলে রাজনৈতিকভাবে অ্যাডভান্টেজ পাবেন মমতা।’ তাই সুযোগ থাকলেও কেন্দ্র সেই পথে যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অমলবাবু।

সূত্র-আনন্দবাজার

Tag :

শেয়ার করুন

মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হতে পারে

আপডেট টাইম : ০১:১৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে তিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হতে দেবেন না।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা কিন্তু মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা ভারতে এর আগে হয়নি। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, রাজ্য যদি আইন না মানার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তাহলে কী হবে? সে ক্ষেত্রে কি কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে এ রাজ্যে?

সিএএকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের এ রকম পরিস্থিতিতে কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। আইনজ্ঞ, সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও তাদের মতামত জানাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো আইন করলে রাজ্য সরকার সেই আইন মানতে বাধ্য। এক্ষেত্রে আইন না মানা রাজ্যে কার্যত ভারতীয় সংবিধান অকার্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা বলে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হতে পারে।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেল, আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্ব কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়। সে বিষয়ে কেন্দ্র যদি কোনো আইন আনে তবে রাজ্যকে তা মানতেই হবে।’

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দীপন সরকার বলেন, ‘সংবিধানের ২৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে দেওয়া রয়েছে, সংসদে প্রণীত আইন মেনে চলতে হবে রাজ্যকে। এমনকি রাজ্যকে সেই আইন মানার সরাসরি নির্দেশও দিতে পারে কেন্দ্র।’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারিভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করছেন যে তিনি সিএএ মানবেন না। এটা ২৫৬ ধারার বিরুদ্ধে।’ অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী।

সংবিধানে খুব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, ‘২৫৬ ধারা অনুযায়ী যদি কেন্দ্রের নির্দেশ না মেনে নেয় রাজ্য এবং ওই কেন্দ্রীয় আইন না মানে, তাহলে ধরে নেওয়া হবে ওই রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা চলছে।

সেক্ষেত্রে রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থার কারণে কেন্দ্র সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির শাসন ঘোষণা করতে পারে।’

কিন্তু বিশ্লেষকরা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাস্তবে ভারতীয় সংবিধানের বিস্তৃতি এতটাই বেশি যে, অনেক বিষয় নিয়েই চূড়ান্ত কী হতে পারে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

অমল মুখোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ‘আইন না মানার সিদ্ধান্তে যদি রাজ্য সরকার অনড় থাকে তাহলে কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে তা সংবিধানবিরোধী হবে না।

কিন্তু এটাও ঠিক যে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলে রাজনৈতিকভাবে অ্যাডভান্টেজ পাবেন মমতা।’ তাই সুযোগ থাকলেও কেন্দ্র সেই পথে যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অমলবাবু।

সূত্র-আনন্দবাজার