কৃষি ব্যাংকে কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি
- আপডেট টাইম : ১২:৫১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 758
নিউজ লাইট ৭১ রিপোর্ট: কুষ্টিয়ার এনএস রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এনএস রোড শাখায় কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই ঋণ জালিয়াতি সংঘঠিত হয়েছে স্বয়ং ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের যোগসাজশে।
গত ২০১৫ সালে ব্যাংকের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের যোগসাজশে বিভিন্ন কৃষকের নামে প্রায় কোটি টাকার ঋণ উত্তোলন করে এই চক্রটি। যা এতদিন আড়ালে থাকলেও এক ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তা সামনে আসে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন কৃষি ব্যাংক এনএস রোড শাখার মাঠ কর্মকর্তা আবু তালেব বিভিন্ন মেয়াদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার কথা বলে কৃষকদের কাছ থেকে জমির কাগজপত্র জমা নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সে সকল কৃষকদের জানানো হয়, এই শাখা থেকে তাদের ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু পরবর্তীতে কৃষকরা না জানলেও অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও দালালরা সুকৌশলে তাদের জমির কাগজপত্রের ফটোকপি ব্যাংকে দাখিলের মাধ্যমে ওইসব কৃষকদের নামে ঋণ উত্তোলন করে। এভাবে ব্যাংক কর্মকর্তা আবু তালেব ও দালালদের যোগসাজশে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের নামে কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জিয়ারখী ইউনিয়নের শৈলগাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী সজিব হোসেন জানায়, আমি ২০১৫ সালে একটি শস্য ঋণ নেয়ার জন্য এনএস রোডস্থ কৃষি ব্যাংক শাখায় দ্বারস্থ হয়, সে সময় এনএস রোড কৃষি ব্যাংক শাখার মাঠ কর্মকর্তা আবু তালেবের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার কাছে জমির আসল কাগজপত্র ও ফটোকপি জমা দিই।
কিছুদিন পর তৎকালীন ব্যাংকের ম্যানেজার আমাদের জানায়, আপনাদের জিয়ারখী ইউনিয়নের সব কৃষিঋণ কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া বড় বাজার শাখায় প্রদান করা হয়, তাই আমরা জমির আসল কাগজপত্র নিয়ে চলে আসি আর ফটোকপিগুলো আবু তালেবের কাছে থেকে যায়।
গত মাসে আমি কৃষি ব্যাংক এনএস রোড শাখার বর্তমান মাঠ কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পারি, গত ১৮-০২-২০১৫ তারিখে ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা অবৈধভাবে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। যার ফলিও নাম্বার চ-৪৮৬(৩৯১), কম্পিউটার নাম্বার ২৮৯৯৫, যা এখন সুদসহ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০৮ টাকা। যে ঋণ সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই। তাই নিজেকে বাঁচাতে ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গত ২৫-১১-২০১৯ কুষ্টিয়া কৃষি ব্যাংক এনএস রোড শাখার ব্যবস্থাপক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি আরও বলেন, আমি এইসব অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়াও অন্য কৃষকের মতো জিয়ারখী ইউনিয়নের শৈলগাড়ী গ্রামের মো. শামীমুর রহমানেরও জমির নকল কাগজপত্র ব্যবহার করে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে কৃষি ব্যাংকের এনএস রোড শাখা থেকে। যার কম্পিউটার নাম্বার ২৮৯৯৪, ঋণ তোলে ১৯-২-২০১৫ তারিখে টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা, তবে এখন সুদে আসলে টাকার পরিমাণ হয়েছে ২ লাক ৪১ হাজার ৬৮০ টাকা। যে ঋণ সম্পর্কে শামীমুর কিছুই জানে না বলে অভিযোগ করে।
এভাবে জিয়ারখী ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের জমির দলিলের ফটোকপি দিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতে নিয়েছে এই অসাধু চক্রটি। ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কুষ্টিয়ায় কৃষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে অনেকেই মনে করেন, মূল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও যেখানে ঋণের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, সেখানে কিভাবে মূল কাগজপত্র ছাড়াই এত টাকার ঋণ প্রদান করা হলো, তা কারো বোধগম্য নই। তাই তারা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
কুষ্টিয়া কৃষি ব্যাংক এনএস রোড শাখার বর্তমান ম্যানেজার রিয়াজুল হক জানায়, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত তৎকালীন কুষ্টিয়া কৃষি ব্যাংক এনএস রোড শাখার মাঠ কর্মকর্তা আবু তালেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান তিনি।