রক্তের বাধন আলাদা করতে পারেনি কাঁটাতার
- আপডেট টাইম : ১০:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯
- / 166
নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই বাংলার মিলনমেলা। এই মিলনমেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায় প্রিয়জনের সাথে দেখা করতে। সীমান্তের কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি তাদের রক্তের বাধনকে।
গতকাল শুক্রবার হরিপুর উপজেলার চাঁপাসার ও কোঁচল সীমান্তে অবস্থিত গোবিন্দপুর জামর কালিমন্দিরে পূজা উপলক্ষে অস্থায়ী এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। আর দেশ বিভক্তির ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই দেশের স্বজনদের কিছু সময় কথা বলার সুযোগ করে দেয় বিজিবি ও বিএসএফ। তবে মিলনমেলার উপচেপড়া ভিড়ের মাঝেও পুরো এলাকা ছিল কঠোর নিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত।
শুক্রবার সকাল থেকেই হরিপুরের কুলিক নদী পার হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাসার ও কোঁচল এবং ভারতের মাকড়হাট ও নারগাঁও সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৪৪/৪৫ নং মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকার কাঁটাতারের দুই প্রান্তে ভিড় করে দুই বাংলার হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ সব বয়সি মানুষ। তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন, কুশল বিনিময় করছেন। কেউ কেউ কাঁটাতারের ওপর দিয়ে বিস্কুট, চানাচুর ছুড়ে দিচ্ছেন একে অপরকে। কেউবা আত্মীয়স্বজনদের দেয়ার জন্য ঠাণ্ডা পানীয় বোতল ছুড়ে দিচ্ছেন।
এমন আবেগঘন পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলছেন। তবে সে কান্না বিরহের নয়, মধুর মিলনের।
সীমান্তবাসীরা জানান, ভারত আর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারে না, তারা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এই দিনে তারা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে।
হরিপুরের নীপেন্দ্র নাথ বলেন, বোনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। দেখাও হয়েছে। কিন্তু বোনকে আদর করতে পারিনি। তারপরও অনেক খুশি। কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের ননি রানি এসেছেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। শিলিগুড়িতে থাকা মেয়ে রিনা রানীকে ১১ বছর ধরে দেখেন না মা ননি রানি।
মেলা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল জানান, প্রতি বছর দুই দেশের মিলনমেলার জন্যই পাথরকালী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএসফ দুই দেশের মানুষদের সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়।
হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আমিরুজ্জামান জানান, মেলায় আইনশৃঙ্খলার জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় মেলাটি সুনামের সাথে প্রতিবছরই বসে থাকে তাই অন্যবারের মতো এবারো কোনোরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই মেলা শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সামিউন নবি চৌধুরী জানান, এ মেলাটি স্থানীয়ভাবে হয় এবং এবারো হয়েছে। এ মেলা উপলক্ষে দুই সীমান্তের হাজারো মানুষ তাদের আত্মীয়দের খুঁজে পান দেখে ভালোই লাগে। তবে মেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিলো এবং বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ সহায়তা ছিল।