ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান কমছে

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯
  • / 132

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) রেমিটেন্সের অবদান কমে যাচ্ছে। দেশে প্রতি বছর জিডিপির আকার যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ।

এছাড়া দেশে রেমিটেন্স এসে সেগুলো পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ব্যবহৃত হচ্ছে ভোগবিলাসে। যে কারণে রেমিটেন্স জিডিপিতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট জিডিপির আকার ছিল সাড়ে ২২ লাখ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৩৬২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ লাখ কোটি টাকা। প্রতি বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি বাড়ছে। কিন্তু রেমিটেন্সের গতি সেভাবে বাড়ছে না।

এদিকে রেমিটেন্স খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ৩২ শতাংশ। এরপর তা কমে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। তারপর থেকে ওঠানামা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। এই বছর রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। পরিমাণে বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হারে কমছে। তবে গত দুই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল নেতিবাচক।এদিকে মোট জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ২০০৭-০৮ অর্থবছরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পরে তা বেড়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। এর পর থেকে রেমিটেন্সে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। গত অর্থবছরে তা কমে ৫ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। বিদায়ী অর্থবছরে তা সামান্য বাড়তে পারে। এ হার বেড়ে সাড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর যে রেমিটেন্স আসে তার মধ্যে ৫৩ শতাংশই ভোগবিলাসে ব্যবহৃত হয়। বাকি ৪৭ শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদিকে রেমিটেন্সকে উৎপাদনমুখী খাতে ব্যবহার করতে সরকার থেকে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেয়া হলেও তা খুব বেশি একটা কাজে আসেনি। প্রবাসীদের রেমিটেন্স সঞ্চয় খাতে নিতে সরকারি উদ্যোগে দুটি বন্ড ছাড়া হয়েছে।

এগুলোর মুনাফার হার সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। ওয়েজ আর্নার্স স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মুনাফার হার ১২ শতাংশ। আগে এসব খাতে সঞ্চয়ের মুনাফার ওপর কোনো কর ছিল না। চলতি অর্থবছর থেকে এসব খাতে কর আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ করযোগ্য হলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে ব্যাংকগুলোও আকর্ষণীয় মুনাফার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে রেমিটেন্সকে সঞ্চয়মুখী করা হচ্ছে। সঞ্চয় বাড়লে সেগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হবে। এ বিনিয়োগ থেকে জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান বাড়বে। এছাড়াও রেমিটেন্স থেকে পাওয়া অর্থ বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে এখন সমীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বিপরীতে নগদ ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল নিুমুখী। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলারে। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল দেড় হাজার কোটি ডলার। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এখনও দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণে রফতানি হয়, তার চেয়ে বেশি আমদানি হয়। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ঘাটতি হচ্ছে। রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় এ ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রেমিটেন্স বড় ভূমিকা রাখছে। দেশের মোট আমদানির মধ্যে ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় মেটানো হচ্ছে রেমিটেন্সের অর্থ দিয়ে।

Tag :

শেয়ার করুন

জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান কমছে

আপডেট টাইম : ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) রেমিটেন্সের অবদান কমে যাচ্ছে। দেশে প্রতি বছর জিডিপির আকার যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ।

এছাড়া দেশে রেমিটেন্স এসে সেগুলো পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ব্যবহৃত হচ্ছে ভোগবিলাসে। যে কারণে রেমিটেন্স জিডিপিতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট জিডিপির আকার ছিল সাড়ে ২২ লাখ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৩৬২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ লাখ কোটি টাকা। প্রতি বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি বাড়ছে। কিন্তু রেমিটেন্সের গতি সেভাবে বাড়ছে না।

এদিকে রেমিটেন্স খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ৩২ শতাংশ। এরপর তা কমে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। তারপর থেকে ওঠানামা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। এই বছর রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। পরিমাণে বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হারে কমছে। তবে গত দুই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল নেতিবাচক।এদিকে মোট জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ২০০৭-০৮ অর্থবছরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পরে তা বেড়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। এর পর থেকে রেমিটেন্সে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। গত অর্থবছরে তা কমে ৫ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। বিদায়ী অর্থবছরে তা সামান্য বাড়তে পারে। এ হার বেড়ে সাড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর যে রেমিটেন্স আসে তার মধ্যে ৫৩ শতাংশই ভোগবিলাসে ব্যবহৃত হয়। বাকি ৪৭ শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদিকে রেমিটেন্সকে উৎপাদনমুখী খাতে ব্যবহার করতে সরকার থেকে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেয়া হলেও তা খুব বেশি একটা কাজে আসেনি। প্রবাসীদের রেমিটেন্স সঞ্চয় খাতে নিতে সরকারি উদ্যোগে দুটি বন্ড ছাড়া হয়েছে।

এগুলোর মুনাফার হার সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। ওয়েজ আর্নার্স স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মুনাফার হার ১২ শতাংশ। আগে এসব খাতে সঞ্চয়ের মুনাফার ওপর কোনো কর ছিল না। চলতি অর্থবছর থেকে এসব খাতে কর আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ করযোগ্য হলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সংগ্রহ করতে ব্যাংকগুলোও আকর্ষণীয় মুনাফার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে রেমিটেন্সকে সঞ্চয়মুখী করা হচ্ছে। সঞ্চয় বাড়লে সেগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হবে। এ বিনিয়োগ থেকে জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান বাড়বে। এছাড়াও রেমিটেন্স থেকে পাওয়া অর্থ বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে এখন সমীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বিপরীতে নগদ ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল নিুমুখী। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলারে। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল দেড় হাজার কোটি ডলার। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এখনও দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণে রফতানি হয়, তার চেয়ে বেশি আমদানি হয়। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ঘাটতি হচ্ছে। রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় এ ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রেমিটেন্স বড় ভূমিকা রাখছে। দেশের মোট আমদানির মধ্যে ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় মেটানো হচ্ছে রেমিটেন্সের অর্থ দিয়ে।