পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
- আপডেট টাইম : ০৫:১২:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০২২
- / 34
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যায় পানিবন্দি মানবেতর জীবন কাটছে জেলার ছয় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের চরম সংকট। বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাটে পানি উঠায় অন্যত্র উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যার্ত অনেক পরিবার। কেউ কেউ উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঘরের উপরে মাচা তৈরি করে বা খাটের উপরে অনিশ্চিত সময় পার করছেন। এসব বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ রয়েছে। রান্না ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা।
যেসব এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেসব এলকায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ত্রাণ সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তবে এখনো অনেক এলাকায় কোনো ধরনের ত্রাণ সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বানবাসী মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বানবাসীর সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এগিয়ে আশার আহ্বান সর্বসাধারণের।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলার সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয়, আসাম সীমান্তে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুরমা নদী তীরবর্তী সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, ধর্মপাশা উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বন্যার কারণে পানি উঠায় জেলার ছাতক-সুনামগঞ্জ-সিলেট, তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ-হালুয়াঘাট-মঙ্গলকাটা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় পানি উঠায় যান চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে সিলেট-ঢাকাগামী যাত্রীদের।
এদিকে প্রবল স্রোতে পানির চাপে জেলার দোয়ারাবাজারে দুটি ও বিশ্বম্ভরপুরে ১টি এবং তাহিরপুর উপজেলার ১টিসহ এলজিইউডির ৪টি কালভার্ড বা ছোট সেতু ভেঙে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রবল পানির চাপে মুহূর্তের মধ্যে হঠাৎ ধসে যায় দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের মধ্যকার দোহালিয়া ইউনিয়নের বিয়ানীবাজর সেতুটি। এতে এই দুই উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও বন্যার পানিতে এলজিইডির ২৫টির উপরে গ্রামীণ ও অভ্যন্তরীণ সড়ক ডুবে গেছে। এতে অনেক পাকা সড়েক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা যায়, জেলার ২৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যাকবলিত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে পাঠাদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার্ত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ২৮টি বিদ্যালয়ের ফ্লাড সেন্টার খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দর রহমান।
বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা হিসেবে জেলায় ৩০ মে.টন জিআর চাল ও নগদ সাড়ে ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বন্যাকবলিকতদের মাঝে এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
নিউজ লাইট ৭১