ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না দুগ্ধ খামারিরা
- আপডেট টাইম : ০৫:১৯:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২
- / 33
দুধ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার না থাকায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নওগাঁর রাণীনগরের খামারিরা। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দুগ্ধজাত গরু পালন ছেড়ে দিয়েছে এ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খামারি। উদ্যোক্তা ধরে রাখতে স্থানীয় ভাবে নির্দিষ্ট দুধের বাজার গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন দুধ উৎপাদনকারী খামার মালিকরা।
উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামের মেসার্স দুই বোন ডেইরি ফার্মের মালিক আতোয়ার রহমান জানান, তার ৮টি গরু থেকে প্রতিদিনই শতাধিক লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রতি লিটার দুধ ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা লিটার বিক্রি করতে হয়।
মালশন গ্রামের আমিন হাসান এগ্রো লিমিটেডের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, তার খামারে প্রায় ৪০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুধ উৎপাদনে গরু রয়েছে ৭টি। দুধের বাজার ভালো না থাকায় ৪০ টাকা লিটার দরে স্থানীয় ঘোষের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় দুধ বিক্রিতে স্থানীয় ভাবে বাজার গড়ে তোলা, দুধের মজুদসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধার কথা গত দুই বছর ধরে শুনে আসছি কিন্তু এর কোন বাস্তবায়ন দেখছি না।
লোকসানের কবলে পড়ে দুধ উৎপাদন ছেড়ে দেওয়া ঘোষগ্রামের রাবেয়া ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মের মালিক জাবেদ ইকবাল জানান, তার ফার্মে ১৬টি গরু ছিল। প্রতিদিনের উৎপাদিত দুধ শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করতে হতো। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে গত দেড় মাস আগে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। আবহাওয়াজনিত কারণে অথবা অন্য কোন কারণে শ্রমিক না আসলে দুধ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়তে হতো। তার গ্রামের আরও দুইজন খামারি একই সমস্যার কারণে খামার ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খামারিদের মতে, সরকার পর্যায় থেকে দুধের দর নির্ধারণ করে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করলে রাণীনগর উপজেলার শত শত শিক্ষিত বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের জায়গা করে নিতে পারবে। বর্তমান গো-খাদ্যের লাগামহীন বাজার দর অনুযায়ী দুধ বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই দুধ বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট বাজার গড়ে উঠলে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি এবং দই-মিষ্টি তৈরিতে পাইকাররা এসে দুধ ক্রয় করতে পারবে। এতে ন্যায্য মূল্যও নিশ্চিত হবে।
রাণীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় নিজ নিজ প্রচেষ্টায় মোট ১৭৫টি দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছিলেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক খামার ছেড়ে দিয়েছেন তারা। বর্তমানে ১২০টি খামারে দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তবে এসব খামার থেকে প্রতিদিন কি পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয় সে ব্যাপারে তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে লাইভ স্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) রাণীনগর উপজেলা লাইভ স্টক এক্সটেনশন কর্মকর্তা (এলইও) শরিফ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, প্রকল্পের আওতায় জরুরি কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত রমজান মাসে দেড় মাসের মতো সময় ধরে খামারিদের নিকট থেকে দুধ, ডিম, মাংস ক্রয় করে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে দুধের বাজার গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিষয়টি জানা নেই।
রাণীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তা কামরুন্নাহার আকতার বলেন, দুধ বিক্রিতে নির্দিষ্ট বাজার না থাকায় খামারিদের চরম ভোগান্তি ও খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। দেশের অন্যান্য উপজেলায় নির্দিষ্ট বাজার রয়েছে, যেখানে খামারিরা প্রতিদিন দুধ নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এই উপজেলায় এ রকম কোন বাজার নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত নির্দিষ্ট বাজার গড়ে তোলার ব্যাপারে চেষ্টা করব।
নিউজ লাইট ৭১