বেপরোয়া সেলু মেশিনচালিত চার চাক্কার ট্রলি
- আপডেট টাইম : ০৪:১৬:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / 33
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সর্বত্র বেপরোয়া সেলু মেশিনচালিত চার চাক্কার ট্রলি। অবৈধ হ্যান্ডট্রলির অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কের চালকের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই ঘটছে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
বেপরোয়া ওইসব গাড়ি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা সংঘটিত করলেও প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চলাচল করছে। যেন দেখার কেউ নেই। হ্যান্ডচালিত ট্রলি বন্ধে নেই কোনো উদ্যোগ।
সীমান্ত এলাকায় অবৈধ ট্রলি গুলো প্রতিনিয়ত ভারত থেকে চোরাই পথে আসা পাথর এবং উপজেলার হকনগর শহীদ মিনার কোয়ারি এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে উত্তোলন করা পাথর বহন করে। প্রকাশ্যে পাথর চুরি করে অবৈধ ট্রলি চলাচল করলেও এসব গাড়ি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন যেন নির্বিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একমাসে বেপরোয়া ওইসব ট্রলি চাপায় শিশুসহ দুইজনের প্রাণহানি এবং অন্তত অর্ধশত মানুষ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বেপরোয়া ওইসব ট্রলি চাপায় উপজেলার অসংখ্য মানুষের প্রাণহানিসহ পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছে অনেক নারী ও পুরুষ। অবৈধ ওইসব ট্রলির বন্ধে গত তিন বছর পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন রেজুলেশন করলেও এরপরে আর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
সম্প্রতি উপজেলার সবকটি সড়কে ট্রলি চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। গত একমাসে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ট্রলি চাপায় অন্তত একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের শারফিন নগর গ্রামের আফিজ আলীর শিশুপুত্র জাহাঙ্গীর (১২) হাদাটিলায় বেপরোয়া গতিতে চলা অবৈধ ট্রলি চাপায় নিহত হয়।
গত একসপ্তাহ আগে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রসরাই মোড়ে ট্রলি চাপায় নিহত হন মাটিকাটার শ্রমিক চিনুমিয়া (৩৫)। তিনি একই ইউনিয়নের এরুয়াখাই তিলোরা কান্দি।
একইভাবে উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের বিয়ানিবাজার এলাকায় ট্রলি চাপায় রাসেল মিয়া (২০) নামের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়। নিহত রাসেল মিয়া উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পান্ডারগাঁও গ্রামের আলী হায়দারের ছেলে।
চলতি সপ্তাহে উপজেলার বাঁশতলা-হকনগরে মৌলা নদীর স্লুইসগেটের নিকটে বেপরোয়া গতিতে আসা পাথর বোঝাই ট্রলি চাপায় পড়েন দুইজন সংবাদ কর্মী। কোনোরকম প্রাণে রক্ষা পেলেও দোয়ারাবাজার প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ মোতালিব ভুঁইয়ার মোটরসাইকেলটি ট্টলির চাকার নিচে চলে যায়। এর তিনদিন পরে ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়কে উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের নিকটে ট্রলির ধাক্কায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে। এতে একটি সিএনজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ অন্তত তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দানবের মতো ধেয়ে আসা এসব গাড়ির গতিবিধি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর মাঝে চলাচলরত অবস্থায় চালকের সিগারেট টানা এবং মোবাইল হাতে কথোপকথনে এগিয়ে যাওয়ার খামখেয়ালিপনায় যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। মাঝে মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রলি পার্শ্ববর্তী বাড়ি কিংবা খেতে নেমে পড়ার ঘটনাও ঘটছে।
দোহালিয়া ইউনিয়নের রাজনপুর গ্রামের নুর হোসেন আবদুল্লাহ বলেন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অদক্ষরা এসব ট্রলি চালাচ্ছে। এসব ট্রলি ও চালকদের প্রশাসন কর্তৃক নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে আনা জরুরী।
স্থানীয় সংবাদ কর্মী এম এ মোতালিব ভুঁইয়া বলেন, ট্রলি কারা চালাচ্ছে, তার এতো বড় একটি যানবাহন চালানোর দক্ষতা আছে কি-না, এসব যাচাই হয় বলে জানা নেই আমার। সম্প্রতি আমি নিজেও ট্রলি চাপার শিকার হয়েছি। শারীরিক মারাত্মক আহত হওয়াসহ আমার মোটরসাইকেলটি সম্পূর্ণ গাড়ির নিচে চলে যায়। মোটরসাইকেলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, যেসব ড্রাইভার ট্রলি চালায় এদের বয়স কম। এছাড়া এই ট্রলি সম্পূর্ণ অবৈধ। কয়দিন আগে উপজেলার নরসিংপুর ও রসরাই গ্রামে দুইজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। প্রাপ্তবয়স্ক দক্ষ চালক যেন সতর্কতার সাথে এটা চালায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আহসান হাবিব বলেন, এই গাড়ি যারা চালাচ্ছে তারা আনকোরা এবং অদক্ষ। এদের আচরণও মূর্খের মতো। কেউ কিছু বলতে চাইলে তারা খারাপ আচরণ করছে মানুষের সাথে। ধান কাটা মাড়াইয়ের হাওরে ট্রলি কৃষকদের উপকারে আসে। কিন্তু মাঝে মধ্যে বাজারে উপজেলা সদরের অলিগলিতে বেপরোয়া ট্রলি চালানোয় জননিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ছে।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোছাইন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দেখে আসছি সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ গাড়িগুলো পাথর পরিবহন করে আসছে। সীমান্তের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের পোষা চোরাই সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় হকনগর শহীদমিনার থেকে চোরাই পাথর পরিবহন করছে। এছাড়া যত্রতত্র কমবয়সী ছেলেরা ট্রলি চালাচ্ছে। যে কয়টা এক্সিডেন্ট ঘটছে সেগুলোও শিশুবয়সী এবং অদক্ষ চালকেরাই ঘটিয়েছে। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে শীঘ্রই ওইসব গাড়ি বন্ধের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, অদক্ষ চালক ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এবং হ্যান্ড ট্রলির ব্যাপারে সড়ক আইন বাস্তবায়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিউজ লাইট ৭১