ঢাকা ১০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার ইতি ইতিহাসের পাতায়

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 99

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: তীর-ধনুকের অনুশীলন শেষে একদিন বাড়িতে এসে দেখেন পরিবার ইতিকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। পাত্রপক্ষ বসা বাড়ির বারান্দায়। এরপর বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে আসেন ইতি।

চুয়াডাঙ্গার সেই মেয়েটি এখন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের মধ্যমনি। এই ছোট্ট মেয়েটি যা অর্জন করেছেন সেটা দেখে বিশ্ব অবাক হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাসে এর আগে কোনো খেলোয়াড় একই গেমসে তিনটি সোনা জিততে পারেননি।

গতকাল পোখারার অন্নপূর্ণার কোলে দাঁড়িয়ে যে ইতিহাস লিখলেন ইতি, তাতে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে সাতারু মোশাররফ হোসেনের দুটি সোনা জেতার রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এককভাবে তিনটি স্বর্ণ জিতে ৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেন এই চুয়াডাঙ্গার মেয়ে ইতি।

গত রোববার রিকার্ভে মেয়েদের দলগত ও মিশ্র দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেন তিনি। গতকাল একটা রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে খেলতে নেমেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পেরেছেন ইতি। রিকার্ভ মেয়েদের এককের ফাইনালে ভুটানের কিনলে শেরিংকে ৭-৩ সেট পয়েন্টে হারিয়ে জিতেন সোনা।

ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিজেকে চিনিয়েছেন ইতি। এ বছর জাতীয় জুনিয়র রিকার্ভেও ব্যক্তিগত ইভেন্টে জিতেন রুপা, জুনিয়র ক্যাডেট বিভাগে জিতেন সোনা। টানা তিনটি স্বর্ণ জেতা ইতি এমন রেকর্ডের কথা জানতেন না।

গতকাল এই ডেকর্ডটির কথা জানান পর ইতি বলেন, ‘আমি এটা জানার পর আরও বেশি করে চেষ্টা করেছি যেন এই সোনার পদকটাও জিততে পারি। শেষ পর্যন্ত পেরেছি, এ জন্য ভালো লাগছে। গত রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি।

এতদিন কিছু নিয়ে টেনশন করিনি। কিন্তু কাল ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিল ঘুমের ঘোরেও কাঁপছি। এরপর সকালে একটু স্বাভাবিক হয়ে অনুশীলন করেছি।’ বিস্ময়ের ঘোর ছিলো ইতির কণ্ঠে, ‘আমি ভাবতেও পারিনি এ পর্যন্ত আসতে পারবো। আমার মা-বাবা শুরুতে চাইতেন না আর্চারি খেলি। কিন্তু ভালো করার পর তারা সহাযোগিতা করেন। এমনকি আমার স্কুলের ম্যাডাম পর্যন্ত ফোন দিয়েছেন। আমি খুব খুশি।’

বাংলাদেশের আর্চারির ইতিহাসে এই বিস্ময়বালিকার আজ হয়তো এখানে আসাই হতো না। আর্চারিতে না এলে কোনো এক গ্রামে ঘরকন্যায় ব্যস্ত থাকতেন এতদিন। কতই বা বয়স হবে তখন? ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন ইতি খাতুন।

পাড়ার সাথীদের সঙ্গে পুতুল খেলেই সময়টা কেটে যেত বেশ। আরও একটা খেলার প্রতি ভীষণ টান ছিলো ইতির। তীর-ধনুকের খেলায় এতটাই মজে গিয়েছিলেন যে, মা-বাবার বকুনিকেও পরোয়া করতেন না।

তীরে নবম জাতীয় আর্চারিতে ২০১৮ সালে জেতেন প্রথম পদক। তিরন্দাজ সংসদের হয়ে মেয়েদের রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন চুয়াডাঙ্গার কিশোরী। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) প্রতিভা অন্বেষণের আবিষ্কার ইতি। চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে আর্চারির প্রাথমিক বাছাইয়ে হয়েছিলেন প্রথম।

চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রথমবার আন্তর্জাতিক আসরে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন। বাবা ইবাদত আলী হোটেলের কর্মচারী। তিন মেয়ে ইভা খাতুন, ইতি খাতুন ও স্মৃতি খাতুনকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

মেয়েদের স্কুলের খরচ জোগাতে পারেন না বেশির ভাগ সময়। তাই তো মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে কত বড় ভুল ছিলো, সেটা পরে স্বীকার করেন।

মেয়ের এই কীর্তিতে গর্বিত ইতির বাবা সাংবাদিকদের কাছে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো। আমি আমার মেয়েকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোপর্দ করলাম। তিনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে’।

বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে অনেক আগেই একটা যুদ্ধে জিতে গেছেন ইতি। মাঠের লড়াইয়ে একের পর এক জিতে এবার নাম লেখালেন ইতিহাসে। সেই ইতি এখন এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাস ভেঙে দিয়ে একই ইভেন্টে টানা তিনটি স্বর্ণ জিতে এখন বাংলাদেশের সোনায় মেয়ে হিসিবে সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন।

স্বর্ণ জয়ী ইতিকে সম্বার্ধনা দেবে জেলা প্রশাসন : এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাস ভেঙে দেয়া ইতিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিকে অনেক অভিনন্দন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সাথে দেশে আসলে তাকে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন চুয়াডাঙ্গার মাঠে বিরচিত সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

ইতির স্থানীয় কোচ সোহেল আকরাম বলেন, আমার প্রশিক্ষনের ১ম দিনেই আমার মন কেড়েছিল ইতি। আমি সে-দিনই ওর মধ্যে বড় কিছু হবার সম্ভাবনা দেখেছিলাম। আজ আমার সে স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে।

স্বর্ণ জয়ের এ অসামান্য সম্মান অর্জন করায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, চুয়াডাঙ্গার জন্য এটি একটি গৌরবের বিষয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিকে অনেক অনেক অভিনন্দন শুভেচ্ছা।

এছাড়া ইতি যদি চুয়াডাঙ্গায় আসে তাহলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন তাকে মাঠে দেওয়া হবে বিরচিত সংবর্ধনা । ইতি খাতুন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মুসলিম পাড়ার দিন মুজুর হোটেল শ্রমিক ইবাদত আলী ও গৃহিনী আলিয়া বেগমের মেয়ে। ইতি চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর জে এসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক শীলা জানান, বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ১০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে দৌড়ানো দেখে ৬ষ্ট শ্রেনীর একজন মেয়েকে আমার খুব ভাল লাগলো । তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার নাম কি? সে বললো আমার নাম ইতি। আমি তখন তাকে বললাম তুমি আর কি কি খেলতে পারো।

ইতি বললো ম্যাডাম আমি হ্যান্ডবল, ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে পারি। সেই থেকে আমি তাকে সব খেলায় নিয়মিত খেলতে দিয়েছি ও প্রশিক্ষন দিয়েছি। হঠাৎ একদিন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেহেল আকরাম বললো আর্চারী প্রশিক্ষনের জন্য কিছু মেয়ে লাগবে।

কোন প্রশ্ন না করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমতি নিয়ে ৭ জন মেয়েকে আর্চারী প্রশিক্ষনে পাঠায়। ইতি একদিনেই সকলের নজর কেড়ে আর্চারীতে জায়গা করে নেয়।

স্থানীয় কোচ হিসেবে সোহেল আকরাম ইতিকে অতি অল্পদিনেই প্রশিক্ষন দিয়ে ভাল খেলোয়াড় করে তোলেন। এরপর শুনেছি ঢাকা থেকে কোচ এসে প্রশিক্ষন দিয়ে ইতিকে ঢাকায় নিয়ে গেছে। আজ যখন জানতে পেলাম সাউথ এশিয়ান গেমসে ইতি রিকার্ভের (আর্চারী) ৩টি ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেছে। তখন গর্বে আমার বুক ভরে গেল।

Tag :

শেয়ার করুন

চুয়াডাঙ্গার ইতি ইতিহাসের পাতায়

আপডেট টাইম : ০৯:০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: তীর-ধনুকের অনুশীলন শেষে একদিন বাড়িতে এসে দেখেন পরিবার ইতিকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। পাত্রপক্ষ বসা বাড়ির বারান্দায়। এরপর বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে আসেন ইতি।

চুয়াডাঙ্গার সেই মেয়েটি এখন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের মধ্যমনি। এই ছোট্ট মেয়েটি যা অর্জন করেছেন সেটা দেখে বিশ্ব অবাক হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাসে এর আগে কোনো খেলোয়াড় একই গেমসে তিনটি সোনা জিততে পারেননি।

গতকাল পোখারার অন্নপূর্ণার কোলে দাঁড়িয়ে যে ইতিহাস লিখলেন ইতি, তাতে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে সাতারু মোশাররফ হোসেনের দুটি সোনা জেতার রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এককভাবে তিনটি স্বর্ণ জিতে ৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেন এই চুয়াডাঙ্গার মেয়ে ইতি।

গত রোববার রিকার্ভে মেয়েদের দলগত ও মিশ্র দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেন তিনি। গতকাল একটা রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে খেলতে নেমেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পেরেছেন ইতি। রিকার্ভ মেয়েদের এককের ফাইনালে ভুটানের কিনলে শেরিংকে ৭-৩ সেট পয়েন্টে হারিয়ে জিতেন সোনা।

ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিজেকে চিনিয়েছেন ইতি। এ বছর জাতীয় জুনিয়র রিকার্ভেও ব্যক্তিগত ইভেন্টে জিতেন রুপা, জুনিয়র ক্যাডেট বিভাগে জিতেন সোনা। টানা তিনটি স্বর্ণ জেতা ইতি এমন রেকর্ডের কথা জানতেন না।

গতকাল এই ডেকর্ডটির কথা জানান পর ইতি বলেন, ‘আমি এটা জানার পর আরও বেশি করে চেষ্টা করেছি যেন এই সোনার পদকটাও জিততে পারি। শেষ পর্যন্ত পেরেছি, এ জন্য ভালো লাগছে। গত রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি।

এতদিন কিছু নিয়ে টেনশন করিনি। কিন্তু কাল ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিল ঘুমের ঘোরেও কাঁপছি। এরপর সকালে একটু স্বাভাবিক হয়ে অনুশীলন করেছি।’ বিস্ময়ের ঘোর ছিলো ইতির কণ্ঠে, ‘আমি ভাবতেও পারিনি এ পর্যন্ত আসতে পারবো। আমার মা-বাবা শুরুতে চাইতেন না আর্চারি খেলি। কিন্তু ভালো করার পর তারা সহাযোগিতা করেন। এমনকি আমার স্কুলের ম্যাডাম পর্যন্ত ফোন দিয়েছেন। আমি খুব খুশি।’

বাংলাদেশের আর্চারির ইতিহাসে এই বিস্ময়বালিকার আজ হয়তো এখানে আসাই হতো না। আর্চারিতে না এলে কোনো এক গ্রামে ঘরকন্যায় ব্যস্ত থাকতেন এতদিন। কতই বা বয়স হবে তখন? ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন ইতি খাতুন।

পাড়ার সাথীদের সঙ্গে পুতুল খেলেই সময়টা কেটে যেত বেশ। আরও একটা খেলার প্রতি ভীষণ টান ছিলো ইতির। তীর-ধনুকের খেলায় এতটাই মজে গিয়েছিলেন যে, মা-বাবার বকুনিকেও পরোয়া করতেন না।

তীরে নবম জাতীয় আর্চারিতে ২০১৮ সালে জেতেন প্রথম পদক। তিরন্দাজ সংসদের হয়ে মেয়েদের রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন চুয়াডাঙ্গার কিশোরী। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) প্রতিভা অন্বেষণের আবিষ্কার ইতি। চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে আর্চারির প্রাথমিক বাছাইয়ে হয়েছিলেন প্রথম।

চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রথমবার আন্তর্জাতিক আসরে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন। বাবা ইবাদত আলী হোটেলের কর্মচারী। তিন মেয়ে ইভা খাতুন, ইতি খাতুন ও স্মৃতি খাতুনকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

মেয়েদের স্কুলের খরচ জোগাতে পারেন না বেশির ভাগ সময়। তাই তো মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে কত বড় ভুল ছিলো, সেটা পরে স্বীকার করেন।

মেয়ের এই কীর্তিতে গর্বিত ইতির বাবা সাংবাদিকদের কাছে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো। আমি আমার মেয়েকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোপর্দ করলাম। তিনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে’।

বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে অনেক আগেই একটা যুদ্ধে জিতে গেছেন ইতি। মাঠের লড়াইয়ে একের পর এক জিতে এবার নাম লেখালেন ইতিহাসে। সেই ইতি এখন এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাস ভেঙে দিয়ে একই ইভেন্টে টানা তিনটি স্বর্ণ জিতে এখন বাংলাদেশের সোনায় মেয়ে হিসিবে সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন।

স্বর্ণ জয়ী ইতিকে সম্বার্ধনা দেবে জেলা প্রশাসন : এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ বছরের ইতিহাস ভেঙে দেয়া ইতিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিকে অনেক অভিনন্দন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সাথে দেশে আসলে তাকে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন চুয়াডাঙ্গার মাঠে বিরচিত সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

ইতির স্থানীয় কোচ সোহেল আকরাম বলেন, আমার প্রশিক্ষনের ১ম দিনেই আমার মন কেড়েছিল ইতি। আমি সে-দিনই ওর মধ্যে বড় কিছু হবার সম্ভাবনা দেখেছিলাম। আজ আমার সে স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে।

স্বর্ণ জয়ের এ অসামান্য সম্মান অর্জন করায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, চুয়াডাঙ্গার জন্য এটি একটি গৌরবের বিষয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিকে অনেক অনেক অভিনন্দন শুভেচ্ছা।

এছাড়া ইতি যদি চুয়াডাঙ্গায় আসে তাহলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন তাকে মাঠে দেওয়া হবে বিরচিত সংবর্ধনা । ইতি খাতুন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মুসলিম পাড়ার দিন মুজুর হোটেল শ্রমিক ইবাদত আলী ও গৃহিনী আলিয়া বেগমের মেয়ে। ইতি চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর জে এসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক শীলা জানান, বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ১০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে দৌড়ানো দেখে ৬ষ্ট শ্রেনীর একজন মেয়েকে আমার খুব ভাল লাগলো । তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার নাম কি? সে বললো আমার নাম ইতি। আমি তখন তাকে বললাম তুমি আর কি কি খেলতে পারো।

ইতি বললো ম্যাডাম আমি হ্যান্ডবল, ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে পারি। সেই থেকে আমি তাকে সব খেলায় নিয়মিত খেলতে দিয়েছি ও প্রশিক্ষন দিয়েছি। হঠাৎ একদিন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেহেল আকরাম বললো আর্চারী প্রশিক্ষনের জন্য কিছু মেয়ে লাগবে।

কোন প্রশ্ন না করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমতি নিয়ে ৭ জন মেয়েকে আর্চারী প্রশিক্ষনে পাঠায়। ইতি একদিনেই সকলের নজর কেড়ে আর্চারীতে জায়গা করে নেয়।

স্থানীয় কোচ হিসেবে সোহেল আকরাম ইতিকে অতি অল্পদিনেই প্রশিক্ষন দিয়ে ভাল খেলোয়াড় করে তোলেন। এরপর শুনেছি ঢাকা থেকে কোচ এসে প্রশিক্ষন দিয়ে ইতিকে ঢাকায় নিয়ে গেছে। আজ যখন জানতে পেলাম সাউথ এশিয়ান গেমসে ইতি রিকার্ভের (আর্চারী) ৩টি ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেছে। তখন গর্বে আমার বুক ভরে গেল।