ঢাকা ০৬:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯
  • / 137

সারা দেশে অতি ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নামা ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের নদ-নদীগুলোর পানি ক্রমেই বেড়ে চলছে। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তলিয়ে গেছে ফসল, গ্রামীণ সড়ক। বন্ধ হয়ে গেছে তিন শতাধিক বিদ্যালয়। এরই মধ্যে দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত দশ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হলো।

কলমাকান্দা (নেত্রকোণা) : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২৫০টি গ্রাম ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, টানা বর্ষণ ও সুনামগঞ্জ জেলার উব্দি পানিতে নতুন ১০০টি গ্রামসহ ৩৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্গত অঞ্চলে নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এতে প্রায় দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার সাথে জেলা ও ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলার মাধ্যমিক ৮টি ও ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১৫০০টি পুকুরে ডুবে গেছে। গো খাদ্যের অভাবে কৃষকরা নিরুপায়। দুর্গত অঞ্চলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে নেত্রকোণা ১ আসনের সংসদ সদস্য মানু মজুমদার শনিবার উপজেলার বড়খাপন রংছাতি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

বিশ্বনাথ (সিলেট) : সিলেটের বিশ্বনাথে গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলাজুড়ে বন্যা দেখা দিতে পারে। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের বেশ কয়েক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের সুরমা পাড়ে অবস্থিত মাহতাবপুর, মাধবপুর, শাহপুর, খূজার পাড়া, পূর্ব সোনাপুর, মির্জারগাও ও সাহেব নগর গ্রামের নিম্নাঞ্চলের রাস্তঘাট ইতোমধ্যে পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘরে এখনো পানি ওঠেনি তবে ছুঁইছুঁই করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কাল রবিবার সকালের মধ্যে পানি ওঠার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারী করা হচ্ছে। ঐ এলাকার নাগরিকদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। অবস্থার অবনতি ঘটলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। এ ছাড়াও লামাকাজী সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড় ভাঙছে।

জামালপুর : যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার দুপুরের পর থেকে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারি বৃষ্টিপাত ও ওজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে দেওয়ানগঞ্জ পৌর এলাকা এবং আটটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আজ শনিবার বিকেল ৩টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বলে রেকর্ড করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার প্রায় ৩ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জকিগঞ্জ (সিলেট) : সারা দেশে অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেটের সীমান্ত উপজেলা এখন বন্যা কবলিত। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে একাধিক স্থান দিয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নদীতীরের হাজারো মানুষ রয়েছেন চরম আতঙ্কে।

আজ শনিবার উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা দিনভর বিভিন্ন স্থানে ডাইক মেরামতের চেষ্টা করেছেন।

সুরমা-কুশিয়ারার উৎস মুখ জকিগঞ্জ বন্যা কবলিত হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ,দক্ষিণ সুরমাসহ সিলেটের ভাটি অঞ্চল। বিগত কয়েক বছর থেকে ভাঙনের কবলে পড়ে ভূমিহীন হয়েছেন জকিগঞ্জের হাজারো পরিবার। হাটবাজার, ঘরবাড়ি, গাছপালা, জায়গা-জমি, মসজিদ-মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর গর্ভে। তবুও ভাঙন পিছু ছাড়ছে না নদীবর্তী লোকজনের। ভাঙনের কবলে পড়ে ভূমিহীনরা যাযাবরের মত দিন যাপন করছেন। পুরো উপজেলা জুড়ে রয়েছে ভাঙনের ভয়াল চিত্র।

ধুনট (বগুড়া) : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনা পাড়ের মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা নদীর পানি ১৬.৭০ সেন্টিমিটার বিপদসীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি বাড়ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদীর কূল উপচে পানি চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দিকে আসছে। নদীর পূর্বতীর ডুবে পুকুরিয়া, নিউসারিয়াকান্দি, বৈশাখী ও রাধানগর চরের আবাদি জমিতে পানি প্রবেশ করছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভাঙছে হবিগঞ্জ-সিলেট সাবেক মহাসড়ক। চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশে রামগঙ্গা চা বাগান এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আজ শনিবার রাতেই এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে সড়কের পাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মহাসড়কের ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙা সড়কটির পাশে লাল পতাকা লাগিয়ে দিয়ে শেষ করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা। এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে পাহাড়ি ঢলে রাতেই সড়কটি ধেবে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে ফেসবুকে লাইভ দিলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

রাজশাহীর (বাঘা) : রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার তীরবর্তী পাড়। ধসে পড়ছে মাটি। ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর ও গোকুলপুর এলাকায়। ইতিমধ্যে গ্রাম দুটির পদ্মাপাড়ের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পদ্মাপাড়ের তোজাম্মেল মাস্টার, তাহেরুদ্দীন, আনিসুর রহমান আমারুল, তাজমুল ও তামরুলের ঘরবাড়ি।

এসব পরিবার ঘর-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে। পদ্মার পাড়ে তাদের বসতি যেখানে তার থেকে ৪০-৫০ গজ দূরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। উদ্যোগের অভাবে অরক্ষিত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূলবাঁধও।

পঞ্চগড় : কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে আসা পানিতে পঞ্চগড়ের তালমা রাবার ড্যামের রাবারের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে আপনা আপনি রাবারটি ফুলে গেছে। এমনকি অস্বাভাবিকভাবে ফুলতে ফুলতে চৌদ্দ ফুট পর্যন্ত ফুলে গেছে। এতে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উজানে থাকা এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

চা বাগানসহ ফসলের ক্ষেতে ঢুকেছে পানি। এই অবস্থা চলতে থাকলে উজানের ১০টি গ্রামের ২ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। একই সাথে চা বাগানসহ প্রায় ২’শ একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ : গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের নিম্নাঞ্চলসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  আজ শনিবার থেকে উপজেলার দুটি সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের  পাইলগাঁও, রমাপতিপুর, মশাজান, কাতিয়া, বড়ফেচি, চিলাউড়া, দাসনাগাঁও, পৌরএলাকার হবিবনগর বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

Tag :

শেয়ার করুন

লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি

আপডেট টাইম : ১১:০৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯

সারা দেশে অতি ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নামা ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের নদ-নদীগুলোর পানি ক্রমেই বেড়ে চলছে। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তলিয়ে গেছে ফসল, গ্রামীণ সড়ক। বন্ধ হয়ে গেছে তিন শতাধিক বিদ্যালয়। এরই মধ্যে দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত দশ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হলো।

কলমাকান্দা (নেত্রকোণা) : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২৫০টি গ্রাম ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, টানা বর্ষণ ও সুনামগঞ্জ জেলার উব্দি পানিতে নতুন ১০০টি গ্রামসহ ৩৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্গত অঞ্চলে নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এতে প্রায় দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার সাথে জেলা ও ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলার মাধ্যমিক ৮টি ও ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১৫০০টি পুকুরে ডুবে গেছে। গো খাদ্যের অভাবে কৃষকরা নিরুপায়। দুর্গত অঞ্চলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে নেত্রকোণা ১ আসনের সংসদ সদস্য মানু মজুমদার শনিবার উপজেলার বড়খাপন রংছাতি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

বিশ্বনাথ (সিলেট) : সিলেটের বিশ্বনাথে গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলাজুড়ে বন্যা দেখা দিতে পারে। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের বেশ কয়েক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের সুরমা পাড়ে অবস্থিত মাহতাবপুর, মাধবপুর, শাহপুর, খূজার পাড়া, পূর্ব সোনাপুর, মির্জারগাও ও সাহেব নগর গ্রামের নিম্নাঞ্চলের রাস্তঘাট ইতোমধ্যে পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘরে এখনো পানি ওঠেনি তবে ছুঁইছুঁই করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কাল রবিবার সকালের মধ্যে পানি ওঠার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারী করা হচ্ছে। ঐ এলাকার নাগরিকদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। অবস্থার অবনতি ঘটলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। এ ছাড়াও লামাকাজী সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড় ভাঙছে।

জামালপুর : যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার দুপুরের পর থেকে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারি বৃষ্টিপাত ও ওজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে দেওয়ানগঞ্জ পৌর এলাকা এবং আটটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার পরিবার।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আজ শনিবার বিকেল ৩টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বলে রেকর্ড করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার প্রায় ৩ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জকিগঞ্জ (সিলেট) : সারা দেশে অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেটের সীমান্ত উপজেলা এখন বন্যা কবলিত। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে একাধিক স্থান দিয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নদীতীরের হাজারো মানুষ রয়েছেন চরম আতঙ্কে।

আজ শনিবার উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা দিনভর বিভিন্ন স্থানে ডাইক মেরামতের চেষ্টা করেছেন।

সুরমা-কুশিয়ারার উৎস মুখ জকিগঞ্জ বন্যা কবলিত হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ,দক্ষিণ সুরমাসহ সিলেটের ভাটি অঞ্চল। বিগত কয়েক বছর থেকে ভাঙনের কবলে পড়ে ভূমিহীন হয়েছেন জকিগঞ্জের হাজারো পরিবার। হাটবাজার, ঘরবাড়ি, গাছপালা, জায়গা-জমি, মসজিদ-মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর গর্ভে। তবুও ভাঙন পিছু ছাড়ছে না নদীবর্তী লোকজনের। ভাঙনের কবলে পড়ে ভূমিহীনরা যাযাবরের মত দিন যাপন করছেন। পুরো উপজেলা জুড়ে রয়েছে ভাঙনের ভয়াল চিত্র।

ধুনট (বগুড়া) : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনা পাড়ের মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা নদীর পানি ১৬.৭০ সেন্টিমিটার বিপদসীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি বাড়ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদীর কূল উপচে পানি চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দিকে আসছে। নদীর পূর্বতীর ডুবে পুকুরিয়া, নিউসারিয়াকান্দি, বৈশাখী ও রাধানগর চরের আবাদি জমিতে পানি প্রবেশ করছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভাঙছে হবিগঞ্জ-সিলেট সাবেক মহাসড়ক। চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশে রামগঙ্গা চা বাগান এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আজ শনিবার রাতেই এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে সড়কের পাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মহাসড়কের ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙা সড়কটির পাশে লাল পতাকা লাগিয়ে দিয়ে শেষ করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা। এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে পাহাড়ি ঢলে রাতেই সড়কটি ধেবে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে ফেসবুকে লাইভ দিলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

রাজশাহীর (বাঘা) : রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার তীরবর্তী পাড়। ধসে পড়ছে মাটি। ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর ও গোকুলপুর এলাকায়। ইতিমধ্যে গ্রাম দুটির পদ্মাপাড়ের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পদ্মাপাড়ের তোজাম্মেল মাস্টার, তাহেরুদ্দীন, আনিসুর রহমান আমারুল, তাজমুল ও তামরুলের ঘরবাড়ি।

এসব পরিবার ঘর-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে। পদ্মার পাড়ে তাদের বসতি যেখানে তার থেকে ৪০-৫০ গজ দূরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। উদ্যোগের অভাবে অরক্ষিত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূলবাঁধও।

পঞ্চগড় : কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে আসা পানিতে পঞ্চগড়ের তালমা রাবার ড্যামের রাবারের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে আপনা আপনি রাবারটি ফুলে গেছে। এমনকি অস্বাভাবিকভাবে ফুলতে ফুলতে চৌদ্দ ফুট পর্যন্ত ফুলে গেছে। এতে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উজানে থাকা এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

চা বাগানসহ ফসলের ক্ষেতে ঢুকেছে পানি। এই অবস্থা চলতে থাকলে উজানের ১০টি গ্রামের ২ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। একই সাথে চা বাগানসহ প্রায় ২’শ একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ : গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের নিম্নাঞ্চলসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  আজ শনিবার থেকে উপজেলার দুটি সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের  পাইলগাঁও, রমাপতিপুর, মশাজান, কাতিয়া, বড়ফেচি, চিলাউড়া, দাসনাগাঁও, পৌরএলাকার হবিবনগর বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।