প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসী স্বামী!
- আপডেট টাইম : ০৪:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১
- / 40
প্রবাসে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সামান্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন প্রবাসী ইসরাব আলী। স্বপ্ন ছিলো প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে নিজস্ব কোন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করে পরিবারের যোগান দিবেন। কিন্তু হতভাগা ইসরাবের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন স্ত্রী নিজেই। কে জানত? প্রবাসের কষ্টার্জিত অর্থে ঘাপটি মেরে আত্মসাৎ করবে নিজেরই অর্ধাঙ্গীনি! জমি ক্রয় করে দেয়ার নাম করে স্ত্রী, শ্বশুড় ও শ্যালক মিলে প্রবাসী ইসরাব আলীর মোট ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কাঁদতে কাঁদতে এ প্রতিবেদকের কাছে কথাগুলো জানান দুবাই প্রবাসী ইসরাব আলী। তিনি অভিযোগ করে জানান, ঘটনার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কোন কূলকিনারা পাচ্ছেন না। যদিও তার (প্রবাসী ইসরাব) পক্ষে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন বড় ভাই রাশিদ আলী।
ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২২ জুলাই ২০১৯ সালে ঘটনার সূত্রপাত। প্রবাসী ইসরাবের স্ত্রী (মামাত বোন) পারভীন বেগম (৩০), শ্বশুড় (মামা) মো: উস্তার আলী (৫৯), শ্যালক (মামাত ভাই) রুবেল মিয়া একত্রে স্থানীয় বাজারে জমি (দোকানের পজিশনসহ) ক্রয় করে দেয়ার নাম করে ইসরাবের কাছ থেকে শ্বশুড় ৬ লক্ষ টাকা নেন। টাকা নেয়ার ২ মাসের মধ্যে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার কথা। কিন্তু নানা অজুহাতে রেজিষ্ট্রি করে না দেয়ায় শ্বশুড়ের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বুঝতে পারেন তিনি। পরে স্ত্রী পারভীন বেগম, শ্বশুড় উস্তার আলী ও শ্যালক রুবেলের নামে দুবাই থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ইসরাব আলী।
দূতাবাসের অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে অভিযুক্ত পারভীন আক্তার (প্রবাসীর স্ত্রী) কুলাউড়া থানায় ৬ জনের নামে হয়রানিমূলক মামলা করেন। এরই মধ্যে সাবেক এমপি এড. নওয়াব আলী আব্বাস খান, স্থানীয় চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান ও স্থানীয় ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বসে। সালিশে ৬ লক্ষ টাকার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্তরা। সাথে পৃথক সময়ে টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে একটি আপোষনামাও সম্পাদন হয়। সেই আপোষনামা কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়।
এদিকে প্রবাসী ইসরাবের ভাই রাশিদ আলী জানান, আপোষনামা দাখিল করে দূতাবাসের অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে যায় অভিযুক্তরা। কিন্তু আপোষনামায় টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও বিবাদীরা আমার ভাইয়ের টাকা আজও অবধি ফেরত দেয়নি।
রাশিদ আরও জানান, কোন উপায় না পেয়ে আদালতে মামলা (২১৫/২০২০) করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মামলার তদন্তের দায়িত্ব ডিবি পুলিশকে দিলে, ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি বিনয় ভূষণ রায় ঘটনার সত্যতা পেয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, আমি তদন্ত করে ৪০৬, ৪২০ ও ৫০৬ ধারার অপরাধের সত্যতা পেয়েছি। সাবেক এমপি এড. নওয়াব আলী আব্বাছ খান, স্থানীয় চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান, মনু মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মাননান, নবাব আলী নকী খান, স্থানীয় ব্যবসায় আব্দুস শহীদসহ অনেকেই এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০ তারিখে আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সাবেক এমপি এড. নওয়াব আলী আব্বাছ খান, স্থানীয় চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান, মনু মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মাননান, নবাব আলী নকী খান ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস শহীদ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উস্তার আলী মুঠোফানে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার মেয়েকে তাড়ানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। এসব মিথ্যা সালিশ অনেকবার হয়েছে। তবে কোন সিদ্ধান্ত আমি জানি না।
নিউজ লাইট ৭১