ঢাকা ০১:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০১৯ সালে বাংলাদেশে নতুন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯১৯ জন।

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৭:২৪:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / 90

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নতুন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯১৯ জন। এরমধ্যে ১০৫ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বিবাহিতদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা ৫৮৭ জন। এছাড়া ১৭৫ জন অবিবাহিত, ১৭ জন ডিভোর্স, ১০ জন বিধবা ও চার জন ভিন্নমতের বলে জানা গেছে। তবে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন বলেও জানা গেছে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম।

ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৪ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪২ জন। ২০১৯ সালে দেশে ২৭ হাজার ১৬৮ জন সাধারণ মানুষের এইডস টেস্টিং ও ৪১ হাজার ৩০৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭৪%, নারী ২৫% ও ১% ট্রান্সজেন্ডার। ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের হার বেশি। নতুন আক্রান্তদের ৬০৫ জন অর্থাৎ ৭৪.৪২% এই বয়সী। দেশে আনুমানিক এইডস রোগী ১৪ হাজার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি এইডস রোগী রয়েছেন। সে তুলনায় বাংলাদেশে এইডস রোগীর হার দশমিক শূন্য এক শতাংশ। ওষুধ দেয়ার যে কাভারেজ, তাতেও বাংলাদেশ এগিয়ে। বিশ্বে ৫০ ভাগ ওষুধের কাভারেজ রয়েছে। আর আমাদের দেশে তা ৬১ ভাগ। তবে আমরা এতে সন্তুষ্ট না, আরও বাড়াতে হবে।

সচেতনতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ১ কোটি মানুষ বাইরে থাকে। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে তারা এ রোগ থেকে রক্ষা পাবে। আগে যক্ষ্মা রোগীকে একঘরে করা হতো এখন এইডসের মধ্যে তা আছে। তারা আমাদের দেশের লোক। তাদের ত্যাগ না করে চিকিৎসা করাতে হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এইচআইভি ডিটেকশন রেট বাড়ানো। এখন সেটি ৫২% রয়েছে। আমাদের তা শতভাগ করতে হবে। অল্প বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। সেজন্য তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর সচেতনতা বাড়াতে হবে। আক্রান্তদের মধ্যে নারীদের তুলনায় পুরুষ তিনগুণ। তাই পুরুষদের সচেতন করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূলে প্ল্যান ওয়েতে কাজ করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের এইডস আক্রান্তের হার আমাদের তুলনায় বেশি। আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আজ রোববার ২০১৯ সালের নতুন আক্রান্ত, মৃত ও অন্যান্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিকভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত নতুন রোগী এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আগে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এ বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী/পুরুষ যৌনকর্মী এবং হিজড়া এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বেশি। ইউএনএইডসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, সাধারণ মানুষের চেয়ে যৌনকর্মীদের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি ২১ গুণ বেশি।

বাংলাদেশে এক লাখের বেশি নারী যৌনকর্মী আছে। তাদের মধ্যে কিশোরীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনের সময় অনেকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলছেন, এইচআইভি আক্রান্তদের ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাদের এই রোগ হয়েছে। যাঁরা জানেন, তাঁদের এক–তৃতীয়াংশের বেশি চিকিৎসা নেন না।

Tag :

শেয়ার করুন

২০১৯ সালে বাংলাদেশে নতুন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯১৯ জন।

আপডেট টাইম : ০৭:২৪:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক: ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নতুন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯১৯ জন। এরমধ্যে ১০৫ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বিবাহিতদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা ৫৮৭ জন। এছাড়া ১৭৫ জন অবিবাহিত, ১৭ জন ডিভোর্স, ১০ জন বিধবা ও চার জন ভিন্নমতের বলে জানা গেছে। তবে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন বলেও জানা গেছে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম।

ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৪ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪২ জন। ২০১৯ সালে দেশে ২৭ হাজার ১৬৮ জন সাধারণ মানুষের এইডস টেস্টিং ও ৪১ হাজার ৩০৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭৪%, নারী ২৫% ও ১% ট্রান্সজেন্ডার। ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের হার বেশি। নতুন আক্রান্তদের ৬০৫ জন অর্থাৎ ৭৪.৪২% এই বয়সী। দেশে আনুমানিক এইডস রোগী ১৪ হাজার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি এইডস রোগী রয়েছেন। সে তুলনায় বাংলাদেশে এইডস রোগীর হার দশমিক শূন্য এক শতাংশ। ওষুধ দেয়ার যে কাভারেজ, তাতেও বাংলাদেশ এগিয়ে। বিশ্বে ৫০ ভাগ ওষুধের কাভারেজ রয়েছে। আর আমাদের দেশে তা ৬১ ভাগ। তবে আমরা এতে সন্তুষ্ট না, আরও বাড়াতে হবে।

সচেতনতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ১ কোটি মানুষ বাইরে থাকে। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে তারা এ রোগ থেকে রক্ষা পাবে। আগে যক্ষ্মা রোগীকে একঘরে করা হতো এখন এইডসের মধ্যে তা আছে। তারা আমাদের দেশের লোক। তাদের ত্যাগ না করে চিকিৎসা করাতে হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এইচআইভি ডিটেকশন রেট বাড়ানো। এখন সেটি ৫২% রয়েছে। আমাদের তা শতভাগ করতে হবে। অল্প বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। সেজন্য তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর সচেতনতা বাড়াতে হবে। আক্রান্তদের মধ্যে নারীদের তুলনায় পুরুষ তিনগুণ। তাই পুরুষদের সচেতন করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূলে প্ল্যান ওয়েতে কাজ করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের এইডস আক্রান্তের হার আমাদের তুলনায় বেশি। আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আজ রোববার ২০১৯ সালের নতুন আক্রান্ত, মৃত ও অন্যান্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিকভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত নতুন রোগী এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আগে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এ বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, সমকামী/পুরুষ যৌনকর্মী এবং হিজড়া এই চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বেশি। ইউএনএইডসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, সাধারণ মানুষের চেয়ে যৌনকর্মীদের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি ২১ গুণ বেশি।

বাংলাদেশে এক লাখের বেশি নারী যৌনকর্মী আছে। তাদের মধ্যে কিশোরীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনের সময় অনেকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলছেন, এইচআইভি আক্রান্তদের ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাদের এই রোগ হয়েছে। যাঁরা জানেন, তাঁদের এক–তৃতীয়াংশের বেশি চিকিৎসা নেন না।