ঢাকা ০৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যমুনা নদী ভাঙন শুরুঃ হুমকির মুখে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সি ইন্সটিটিউড,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান,বহু ঘরবাড়ি।

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৭:২১:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯
  • / 130

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক- অসময়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ খুকনী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি ও জালালপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রামে যমুনা নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সি ইন্সটিটিউড, দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, ৬টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, একাধিক তাঁত কারখানাসহ বহু ঘরবাড়ি। গত তিনদিনে ১৫টি বসতভিটাসহ যমুনা তীর সংরক্ষণ কাজের দুটি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় ধস নেমেছে।

এদিকে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার পশ্চিম পাড়ের খুকনী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দিচর ও জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর, টাকুরপুর, পাকুরতলা ও ভ্যাকা গ্রামে দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন।

এ ব্যাপারে খুকনী ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চান ও ইউপি সদস্য সোহরাব আলী জানান, এবার বর্ষায় যমুনার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়। বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা না থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এসে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার একাধিক পয়েন্টে যমুনায় ভয়াবহ ভাঙন দেখে দেওয়ায় এলাকাবাসী এখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গততিন দিনে এ পর্যন্ত ব্রাহ্মণগ্রামে দুটি স্থানে প্রায় সোয়া ২০০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। এবার এসব স্থানে বর্ষা মৌসুমে বালুভর্তি জিও ব্যাগে দিয়ে ডাম্পিং করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন দেখা দেওয়ায়  আড়কান্দি জামে মসজিদের পূর্ব পার্শে নজরুল ও হোসেন আলী বসত ভিটাসহ প্রায় ১২টি বাড়ি চোখের পলকেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ব্রাহ্মণগ্রাম তারকা জামে মসজিদের ইমাম নজরুল ইসলাম জানান, ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো কর্মকর্তারা স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছেন না। এলাকার সবাই অসময়ে যমুনার ভাঙন দেখে আতঙ্কিত।

শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুলতান মাহমুদ জানান, গত তিনদিনে তার ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, বাওইকোলা, পাকুরতলা ও ভ্যাকা গ্রামের ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। প্রতিরোধের কোনো পদক্ষেপ নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এনায়েতপুর থানা শাখার সভাপতি মো. শেখ শামীম জানান, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীতে নতুন নতুন চর জেগে ওঠায় যমুনার পশ্চিম তীরে স্রোতে অসময়ে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় হুমকির মুখে এনায়েতপুর থানার বিস্তৃর্ণ এলাকা।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরে ভাঙনের বিষয়টা জেনেছি। তিনি বলেন, ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে ‘যমুনা মেঘনা রিভার ইরোশান মেটিগেশন প্রজেক্ট’ (জেএমআরাইএমপি) এর অধীনে পাউবোর পাবনার বেড়া কৈটলার অফিসের অধীনে শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর কৈজুরী থেকে গালা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তীররক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে যমুনার এ অংশে ভাঙন  আর দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, অনুরূপ আর একটি তীররক্ষা বাঁধ এনায়েতপুর থেকে কৈজরীর পাচিল পর্যন্ত নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমতি মিলেছে। অর্থ পাওয়া গেলে কাজটি শুরু হলে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত যমুনার এ অংশে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তবে কবে নাগাদ নতুন বাঁধের কাজ শুরু হবে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

অপরদিকে পাউবোর পাবনার বেড়া কৈটলা নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে ‘যমুনা মেঘনা রিভার ইরোশান মেটিগেশন প্রজেক্ট’ (জেএমআরাইএমপি) অধীনে পাউবোর পাবনার বেড়া কৈটলার অফিসের তত্ত্বাবধানে প্রায় দেড়শত কোটি টাকা ব্যয় শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেনুটিয়া থেকে কৈজুরী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার বাঁধ জেও ব্যাগ দিয়ে তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তিতে কম খরচে জিও ব্যাগের মাধ্যমে শাহজাদপুরে যমুনার ভাঙন রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের সুফল মানুষ এখন পাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তিতে কম খরচে তীররক্ষা এ বাঁধটি নির্মাণের পর যমুনার এ অংশে ভাঙন রোধ হওয়ায় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। যমুনা তীরবর্তী এ এলাকায় তাঁত শিল্পসহ বিভিন্ন কুঠির শিল্প গড়ে উঠে।

তিনি বলেন, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুরী ইউনিয়নের পাচিল পর্যন্ত নতুন তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে এর সাথে কৈজুরী থেকে গালার বেনুটিয়া পর্যন্ত যমুনা তীররক্ষা বাঁধটি আরো মজবুত করতে বাঁধ ঘেসে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। কাজটি শিগগির শুরু করার জন্য সিরাজগঞ্জ পাওবো অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলার বিরাট একটি অংশ যমুনার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

Tag :

শেয়ার করুন

যমুনা নদী ভাঙন শুরুঃ হুমকির মুখে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সি ইন্সটিটিউড,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান,বহু ঘরবাড়ি।

আপডেট টাইম : ০৭:২১:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

নিউজ লাইট ৭১ ডেস্ক- অসময়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ খুকনী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি ও জালালপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রামে যমুনা নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সি ইন্সটিটিউড, দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, ৬টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, একাধিক তাঁত কারখানাসহ বহু ঘরবাড়ি। গত তিনদিনে ১৫টি বসতভিটাসহ যমুনা তীর সংরক্ষণ কাজের দুটি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় ধস নেমেছে।

এদিকে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার পশ্চিম পাড়ের খুকনী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দিচর ও জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর, টাকুরপুর, পাকুরতলা ও ভ্যাকা গ্রামে দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন।

এ ব্যাপারে খুকনী ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চান ও ইউপি সদস্য সোহরাব আলী জানান, এবার বর্ষায় যমুনার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়। বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা না থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এসে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার একাধিক পয়েন্টে যমুনায় ভয়াবহ ভাঙন দেখে দেওয়ায় এলাকাবাসী এখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গততিন দিনে এ পর্যন্ত ব্রাহ্মণগ্রামে দুটি স্থানে প্রায় সোয়া ২০০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। এবার এসব স্থানে বর্ষা মৌসুমে বালুভর্তি জিও ব্যাগে দিয়ে ডাম্পিং করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন দেখা দেওয়ায়  আড়কান্দি জামে মসজিদের পূর্ব পার্শে নজরুল ও হোসেন আলী বসত ভিটাসহ প্রায় ১২টি বাড়ি চোখের পলকেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ব্রাহ্মণগ্রাম তারকা জামে মসজিদের ইমাম নজরুল ইসলাম জানান, ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো কর্মকর্তারা স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছেন না। এলাকার সবাই অসময়ে যমুনার ভাঙন দেখে আতঙ্কিত।

শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুলতান মাহমুদ জানান, গত তিনদিনে তার ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, বাওইকোলা, পাকুরতলা ও ভ্যাকা গ্রামের ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। প্রতিরোধের কোনো পদক্ষেপ নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এনায়েতপুর থানা শাখার সভাপতি মো. শেখ শামীম জানান, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীতে নতুন নতুন চর জেগে ওঠায় যমুনার পশ্চিম তীরে স্রোতে অসময়ে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় হুমকির মুখে এনায়েতপুর থানার বিস্তৃর্ণ এলাকা।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরে ভাঙনের বিষয়টা জেনেছি। তিনি বলেন, ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে ‘যমুনা মেঘনা রিভার ইরোশান মেটিগেশন প্রজেক্ট’ (জেএমআরাইএমপি) এর অধীনে পাউবোর পাবনার বেড়া কৈটলার অফিসের অধীনে শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর কৈজুরী থেকে গালা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তীররক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে যমুনার এ অংশে ভাঙন  আর দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, অনুরূপ আর একটি তীররক্ষা বাঁধ এনায়েতপুর থেকে কৈজরীর পাচিল পর্যন্ত নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমতি মিলেছে। অর্থ পাওয়া গেলে কাজটি শুরু হলে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত যমুনার এ অংশে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তবে কবে নাগাদ নতুন বাঁধের কাজ শুরু হবে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

অপরদিকে পাউবোর পাবনার বেড়া কৈটলা নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে ‘যমুনা মেঘনা রিভার ইরোশান মেটিগেশন প্রজেক্ট’ (জেএমআরাইএমপি) অধীনে পাউবোর পাবনার বেড়া কৈটলার অফিসের তত্ত্বাবধানে প্রায় দেড়শত কোটি টাকা ব্যয় শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেনুটিয়া থেকে কৈজুরী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার বাঁধ জেও ব্যাগ দিয়ে তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তিতে কম খরচে জিও ব্যাগের মাধ্যমে শাহজাদপুরে যমুনার ভাঙন রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের সুফল মানুষ এখন পাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তিতে কম খরচে তীররক্ষা এ বাঁধটি নির্মাণের পর যমুনার এ অংশে ভাঙন রোধ হওয়ায় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। যমুনা তীরবর্তী এ এলাকায় তাঁত শিল্পসহ বিভিন্ন কুঠির শিল্প গড়ে উঠে।

তিনি বলেন, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুরী ইউনিয়নের পাচিল পর্যন্ত নতুন তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে এর সাথে কৈজুরী থেকে গালার বেনুটিয়া পর্যন্ত যমুনা তীররক্ষা বাঁধটি আরো মজবুত করতে বাঁধ ঘেসে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। কাজটি শিগগির শুরু করার জন্য সিরাজগঞ্জ পাওবো অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলার বিরাট একটি অংশ যমুনার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।