জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার
- আপডেট টাইম : ০৬:১৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মে ২০২১
- / 79
সাবেক এসপি বাবুল আক্তার আদালতে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার কাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, আবার তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবে কি না সেটা পিবিআই সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে গতকাল সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের খাস কামরায় তাকে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিচারকের খাস কামরায় বাবুল আক্তার ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে কোনো জবাববন্দি দেননি। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী মিতু হত্যার অভিযোগে শ্বশুরের করা মামলায় ১২ মে গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে। এর দুদিন আগে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায় পিবিআই।
এদিকে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রথম তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদে নিরুত্তর ছিলেন বাবুল আক্তার। পরে কিছু কথা বলেছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচলিত বোধ করেন। কথা বলার সময় দু-একবার কেঁদেছেন।
অবশ্য মিতু হত্যার কারণ সম্পর্কিত সব প্রশ্নই এড়িয়ে গেছেন বাদী থেকে প্রধান আসামি হয়ে যাওয়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিনি শুধু এটুকু বলছেন, ‘সবই তো জানেন, আমি কী বলব।’
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে খুন হন মিতু। সেদিন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে উঠিয়ে দিতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ের কাছে তাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তখন তার স্বামী বাবুল আক্তার ছিলেন ঢাকায়। খুনের ঘটনার কয়েক দিন আগে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান তিনি। এর আগে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ছিলেন। খুনের ঘটনার পর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন তিনি। এজাহারে উল্লেখ করেছিলেন জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে খুন করতে পারেন। কিন্তু কিছুদিন পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের চাকরি থেকে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, মিতু হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া কামরুল ইসলাম মুসাকে নিজের সোর্স হিসেবে স্বীকার করেছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। স্ত্রীকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশেন (পিবিআই)। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা একথা জানিয়েছেন।
বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারে পর গত ১২ মে সকালে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার অভিযোগ করেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সোর্স মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন বাবুল। তিনি বলেন, ‘মিতু হত্যার পর উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজে আমরা একজনকে দেখেছিলাম। তার নাম কামরুল ইসলাম মুসা। মুসা এখনো নিখোঁজ। আমরা জেনেছি মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যাতায়াত করতেন। বাবুলের বাসায় মুসা বাজারও করে দিতেন। মুসাকে শুধু বাবুল আক্তারই চিনতেন।
‘ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট এই মুসাকে চেনা গেছে, কিন্তু তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। সেখান থেকে সন্দেহ হলে আরো তদন্ত করে পিবিআই। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হই, বাবুল ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে সন্দেহ করেনি বা সন্দেহজনক বলে পুলিশকে জানাননি।’
এর পাশাপাশি বাবুলের দুই বন্ধু মিতু হত্যায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন গাজী আল মামুন ও সাইফুল হক। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মুসা পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মুসাসহ তিনজন পলাতক : গত ১২ মে মিতুর বাবার করা মামলায় বাবুল আক্তরসহ আটজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে মুসাসহ পলাতক রয়েছেন তিনজন। অন্য দুজন হলেন তিন নম্বর আসামি এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়্যা এবং ছয় নম্বর আসামি খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু ওরফে কসাই কালু।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমাও বলেন, মিতু হত্যার প্রথম মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনজন। তারা হলেন মোতালেব মিয়া অরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়া। আর নতুন মামলা হওয়ার পর বাবুল আক্তার ও সাইদুল ইসলাম সিকদার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নিউজ লাইট ৭১