হারিকেন ব্যবহার হতো বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে
- আপডেট টাইম : ০৭:১৪:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১
- / 81
এখন বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করলেও একটা সময় ছিল যখন হারিকেনই ছিল গ্রামীন মানুষের আলোর উৎস। প্রাত্যহিক গ্রামীণ জীবনে বিশেষ করে রাত্রিকালীন গৃহস্থালি কাজ, লেখাপড়াসহ সকল কাজকর্মে আলোর দিশারি ছিল কুপিবাতি ও হারিকেন।
হারিকেন ও কুপি জ্বালিয়ে রাতে হাট-বাজারে যেতো গ্রামের লোকজন। নালবাতি বা খুটিবাতি জ্বালিয়ে দোকানিরা বেচা-কেনা করত। গরুরগাড়ি, ঘোড়ারগাড়ি, পালকি, টমটম ও রিকশাচালকেরা হারিকেন বা কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করত। গৃহিণীরা ঘরের কাজ ও উঠানে কিংবা বারান্দায় অথবা ঘরে পড়াশোনা করত ছেলেমেয়েরা।
তবে কুপির চেয়ে হারিকেনের ব্যবহারটা ছিল বেশি। তখনকার দিনে শুধু ঘরে নয় ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে এ গাঁও থেকে ও গাঁয়ে, এ পাড়া থেকে ও পাড়া যেতে লোকেরা হারিকেন ব্যবহার করতো। রাতের আঁধারে মনের মানুষের সাথে দেখা করতে হারিকেন ছিল অন্যতম সঙ্গী। প্রিয় মানুষটার অবস্থান জানান দিতেই হারিকেন ব্যবহার করা হতো। মনের সখি বুঝে যেতো ওই বুঝি সুজন দাঁড়িয়ে আছে। এই আলোটা সুজনেরই।
হারিকেনের আলো জ্বেলেই গায়ের বঁধুরা অপেক্ষায় থাকতো স্বামীর। এভাবেই হারিকেন ব্যবহার হতো বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে।
তবে এক সময়ের আলোর দিশারি হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। আগে যে হারিকেন আলোর অন্যতম বাহন ছিল সেই হারিকেন এখন খুঁজলে হয়তো দুই একটা বাড়িতে পাওয়া যাবে। সেটইও হয়তো শখের বশে রেখে দিয়েছেন কিংবা অগোচরে রয়ে গেছে ভুলেই গেছেন সেটির কথা।
মূলত হারিকেন কাঁচের আবরণ বিশিষ্ট একটি আলোর প্রদীপ। গোলাকার একটি কাঁচ পিন্ড যার উপরে ও নিছে আনারসের মতো। নিচের অংশে টিনের একটি তেলের ট্যাংক থাকতো। আর ট্যাংকের ভেতর ঢালা হতো কেরোসিন। পেঁচানো রশি দিয়ে বানানো হতো রেশা। সেই রেশার এক চতুর্থাংশ তেলের ট্যাংকটিতে চুবানো হতো। বাকি এক অংশ কাঁচের উপরে থাকতো। দিয়াশলাই দিয়ে আগুন দিলেই আলো দিতে শুরু করতো হারিকেন। পাশেই একটি র্যাগুলেটর থাকতো যা দিয়ে আলো কমানো-বাড়ানো যেতো। উপরের অংশে তারের একটি হাতল থাকতো। মূলত এই হাতল দিয়ে সহজেই হারিকেন বহন করা যেত।
টর্চলাইট, বিদ্যুতবিহীন সেই যুগে গোধূলি বেলা শেষে মানুষের ঘরে আলোকিত করতো এই হারিকেন। কিন্তু এক সময়ের আঁধারে আলোর সাথী হারিকেন বিদ্যুতের দাপটে হারিয়ে গেছে। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। রাস্তা-ঘাট, হাঁট-বাজারে এখন বিদ্যুতের দাপট। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে জাতির কল্যাণ বয়ে এনেছে। তবে হারিয়ে গেছে আমাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস।
এক সময় হয়তো চিরতরে বিলুপ্ত হবে হারিকেন। তাই হারিকেন নিয়ে ছন্দের সুরে বলা যায়- ‘যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি’। হয়ত একসময় কুপিবাতি ও হারিকেন দেখতে যেতে হবে যাদুঘরে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী নির্দেশনটি টিকিয়ে রাখার দাবি নতুন প্রজন্মেরও।
নিউজ লাইট ৭১