ঢাকা ০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন সড়ক আইন কার্যকর হচ্ছে আজ

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ১০:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯
  • / 106

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে সোমবার (১১ নভেম্বর)। নতুন সড়ক আইন কার্যকরে এরই মধ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। তবে নতুন সড়ক আইনে নাখোশ বেশিরভাগ চালক।

রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে নতুন সড়ক আইনের ব্যাখ্যা সম্মিলিত ফেস্টুন ব্যানার টানিয়ে মাইকে সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচার করছেন। এর পরেও চালকরা দাবি করছেন, নতুন আইন সম্পর্কে পুরোপুরি তারা জানেন না। তবে নতুন এই আইন সম্পর্কে জানার আগ্রহও তাদের অনেকটাই কম।

এদিকে নতুন আইন কার্যকরে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে চালক সংকট দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, নতুন সড়ক আইন হওয়া ও জেল জরিমানা বাড়ানোর কারণে লাইসেন্সবিহীন ও জাল লাইসেন্সধারী চালকরা ভয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। এদের সংখ্যাও কম নয়। প্রায় ৬৫ হাজারের মত। তারা গাড়ি না চালানোর ফলে রাস্তায় চালক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যার কারণে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। গাড়ির কাগজপত্র সমস্যা থাকায় ও গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন না বহু মালিক। রাস্তা গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ার এটিও একটি কারণ বলে জানায় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এসকল গাড়ির মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে লেগুনা, হিউম্যান হলার, মিনিবাসসহ গণপরিবহন।

রাজধানীর বিভিন্ন যান চালকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই আইনে বিপুল পরিমাণে জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে অনেক চালকরাই আতঙ্কে রয়েছেন। লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় নামলে জেল-জরিমানার আওতায় পড়ার ভয়ে আছেন অনেকে। এ বিষয়ে ঢাকার এক বাস চালক লাবলু বলেন, নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন হলে একটি সুফল পাবো আমরা। সেটি হচ্ছে নকল লাইসেন্স, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালকের সংখ্যা কমে যাবে। আর মালিকরা সচেতন হয়ে লাইসেন্সবিহীন বা জাল লাইসেন্স থাকা চালকদের গাড়ি চালাতে দেবেন না।

গত ২২ অক্টোবর বহুল আলোচিত ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করে সরকার। নতুন আইনে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। তবে প্রথম কিছুদিন দণ্ড না দিয়ে জনসচেতনতা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ সূত্র জানায়, নতুন আইনের ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের সফটওয়্যার এখনও আপডেট সম্পন্ন হয় নি। রিসিট বইসহ তৈরি হয় নি আইনের প্রয়োজনীয় বিধিমালাও। এসব কারণে গত সপ্তাহে নতুন হারে জরিমানা আদায় করা যায় নি।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে নতুন আইনে জরিমানা আদায় হবে না বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার কথায় ট্রাফিক পুলিশ এই আইনটি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে গত দেড় সপ্তাহ ধরে। তারপর জরিমানা আদায়সহ অন্যান্য বিধান কার্যকর হবে। ওবায়দুল কাদের দাবি করে বলেন, আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হলে সড়ক শৃঙ্খলা আসবে।

অন্যদিকে নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় অনেকেই ভিড় করছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে। অফিসের বারান্দায় লম্বা লাইন। কেউ এসেছেন নতুন লাইসেন্স করাতে, কেউ এসেছেন গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিতে, কেউবা এসেছেন লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড নিতে।

‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ আইন কার্যকর হওয়ার থেকেই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিআরটিএ অফিসে বেড়েছে ভিড়। নতুন আইনে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বাড়িয়ে কঠোর শাস্তির বিধান রাখায় গাড়ির মালিক ও চালকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বিআরটিএ অফিসে। গাড়ির কাগজপত্র দেখা, ফিটনেস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের। গত ৩ নভেম্বর থেকে বিআরটিএ অফিসে সেবা-গ্রহীতাদের ভিড় অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন বিআরটিএ অফিসের প্রাঙ্গণেও। তবে এই লাইনে শুধু মানুষ নয় গাড়িও রয়েছে। মোটর সাইকেল, অটোরিকশা, ট্রাক, লরি, বাসের বিশাল লাইন। এই লাইন গিয়ে শেষ হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাঠ পর্যন্ত। পুরো মাঠ যানবাহনে ভরপুর।

নতুন মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে আসা এক বালকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, নতুন মোটর সাইকেল কিনেছি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য পরিবহন বিআরটিএ অফিসে দেখাতে হয় তাই বাইক নিয়ে এসেছি।

লাইনে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চালক রহিম মিয়াঁ বলেন, গাড়ির কাগজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নবায়ন করতে নিয়ে এসেছি। অনেক লম্বা লাইন। সকালে গাড়ি নিয়ে এসেছি এখনো আমার সিরিয়াল আসেনি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, এই আইন ঠিক মতো কার্যকর হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আশা করি। কিন্তু এর জন্য ব্যাপক প্রচার দরকার। আর আইনের বিধিমালা করাও প্রয়োজন। বিধিমালা না করে আইনের প্রয়োগে নানা সমস্যা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, চালকদের শাস্তি বাড়ানো ও কিছু নিয়ম কঠিন করায় সঙ্কট হতে পারে। কারণ দেশে প্রয়োজনের তুলনায় লাইসেন্সধারী চালক অনেক কম। এতে চালক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

নতুন আইনে বিভিন্ন অনিয়মের জন্য জরিমানার পরিমাণ পাঁচ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগের আইনে যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ন বাজালে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এখন তা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। এই আইনে শুধু চালক ও পরিবহন মালিক নয়, এবার পথচারীদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। চালককে সঙ্কেত মানতে হবে। পথচারীকেও সড়ক, মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ব্যবহার করতে হবে। যত্রতত্র রাস্তা পার হলে পথচারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও চালক যদি দুর্ঘটনার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটান তাহলে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায়ই মামলা হবে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্য চালকদের সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর এবং এই অপরাধ জামিন অযোগ্য।

এর আগে এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জামিনযোগ্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ যানবাহন চালালে তার শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। নিবন্ধনহীন যানবাহনের জন্য শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এর জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। উল্টোপথে গাড়ি চালালেও জরিমানা গুনতে হবে। ফিটনেস, রেজিষ্ট্রেশন এসব বিষয়েও জরিমানা অনেক বাড়ানো হয়েছে। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বললে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে এক মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। চালকদের সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১৮ বছর। মোটরবাইক থেকে শুরু করে সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য হবে আইনটি।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক বিভাগ জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১ নভেম্বর (শুক্রবার) সড়ক নতুন আইন কার্যকর হয়। এরপরই বাংলাদেশ পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা ও বিআরটিএ কর্মকর্তা এবং ডিএমপি কমিশনার সমন্বয়ে সারাদেশের ৮০০ ট্রাফিক অফিসারকে নতুন সড়ক আইন ও তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের নতুন সড়ক আইন ও জেল জরিমানা সম্পর্কে বিষদ আলোচনা ও প্রয়োগের কৌশল জানানো হয়েছে। ট্রাফিক সার্জেন্টগণ রাস্তায় নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দেবে না।

Tag :

শেয়ার করুন

নতুন সড়ক আইন কার্যকর হচ্ছে আজ

আপডেট টাইম : ১০:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে সোমবার (১১ নভেম্বর)। নতুন সড়ক আইন কার্যকরে এরই মধ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। তবে নতুন সড়ক আইনে নাখোশ বেশিরভাগ চালক।

রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে নতুন সড়ক আইনের ব্যাখ্যা সম্মিলিত ফেস্টুন ব্যানার টানিয়ে মাইকে সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচার করছেন। এর পরেও চালকরা দাবি করছেন, নতুন আইন সম্পর্কে পুরোপুরি তারা জানেন না। তবে নতুন এই আইন সম্পর্কে জানার আগ্রহও তাদের অনেকটাই কম।

এদিকে নতুন আইন কার্যকরে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে চালক সংকট দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, নতুন সড়ক আইন হওয়া ও জেল জরিমানা বাড়ানোর কারণে লাইসেন্সবিহীন ও জাল লাইসেন্সধারী চালকরা ভয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। এদের সংখ্যাও কম নয়। প্রায় ৬৫ হাজারের মত। তারা গাড়ি না চালানোর ফলে রাস্তায় চালক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যার কারণে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। গাড়ির কাগজপত্র সমস্যা থাকায় ও গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন না বহু মালিক। রাস্তা গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ার এটিও একটি কারণ বলে জানায় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এসকল গাড়ির মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে লেগুনা, হিউম্যান হলার, মিনিবাসসহ গণপরিবহন।

রাজধানীর বিভিন্ন যান চালকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই আইনে বিপুল পরিমাণে জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে অনেক চালকরাই আতঙ্কে রয়েছেন। লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় নামলে জেল-জরিমানার আওতায় পড়ার ভয়ে আছেন অনেকে। এ বিষয়ে ঢাকার এক বাস চালক লাবলু বলেন, নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন হলে একটি সুফল পাবো আমরা। সেটি হচ্ছে নকল লাইসেন্স, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালকের সংখ্যা কমে যাবে। আর মালিকরা সচেতন হয়ে লাইসেন্সবিহীন বা জাল লাইসেন্স থাকা চালকদের গাড়ি চালাতে দেবেন না।

গত ২২ অক্টোবর বহুল আলোচিত ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করে সরকার। নতুন আইনে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। তবে প্রথম কিছুদিন দণ্ড না দিয়ে জনসচেতনতা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ সূত্র জানায়, নতুন আইনের ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের সফটওয়্যার এখনও আপডেট সম্পন্ন হয় নি। রিসিট বইসহ তৈরি হয় নি আইনের প্রয়োজনীয় বিধিমালাও। এসব কারণে গত সপ্তাহে নতুন হারে জরিমানা আদায় করা যায় নি।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে নতুন আইনে জরিমানা আদায় হবে না বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার কথায় ট্রাফিক পুলিশ এই আইনটি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে গত দেড় সপ্তাহ ধরে। তারপর জরিমানা আদায়সহ অন্যান্য বিধান কার্যকর হবে। ওবায়দুল কাদের দাবি করে বলেন, আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হলে সড়ক শৃঙ্খলা আসবে।

অন্যদিকে নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় অনেকেই ভিড় করছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে। অফিসের বারান্দায় লম্বা লাইন। কেউ এসেছেন নতুন লাইসেন্স করাতে, কেউ এসেছেন গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিতে, কেউবা এসেছেন লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড নিতে।

‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ আইন কার্যকর হওয়ার থেকেই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিআরটিএ অফিসে বেড়েছে ভিড়। নতুন আইনে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বাড়িয়ে কঠোর শাস্তির বিধান রাখায় গাড়ির মালিক ও চালকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বিআরটিএ অফিসে। গাড়ির কাগজপত্র দেখা, ফিটনেস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের। গত ৩ নভেম্বর থেকে বিআরটিএ অফিসে সেবা-গ্রহীতাদের ভিড় অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন বিআরটিএ অফিসের প্রাঙ্গণেও। তবে এই লাইনে শুধু মানুষ নয় গাড়িও রয়েছে। মোটর সাইকেল, অটোরিকশা, ট্রাক, লরি, বাসের বিশাল লাইন। এই লাইন গিয়ে শেষ হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাঠ পর্যন্ত। পুরো মাঠ যানবাহনে ভরপুর।

নতুন মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে আসা এক বালকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, নতুন মোটর সাইকেল কিনেছি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য পরিবহন বিআরটিএ অফিসে দেখাতে হয় তাই বাইক নিয়ে এসেছি।

লাইনে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চালক রহিম মিয়াঁ বলেন, গাড়ির কাগজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নবায়ন করতে নিয়ে এসেছি। অনেক লম্বা লাইন। সকালে গাড়ি নিয়ে এসেছি এখনো আমার সিরিয়াল আসেনি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, এই আইন ঠিক মতো কার্যকর হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আশা করি। কিন্তু এর জন্য ব্যাপক প্রচার দরকার। আর আইনের বিধিমালা করাও প্রয়োজন। বিধিমালা না করে আইনের প্রয়োগে নানা সমস্যা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, চালকদের শাস্তি বাড়ানো ও কিছু নিয়ম কঠিন করায় সঙ্কট হতে পারে। কারণ দেশে প্রয়োজনের তুলনায় লাইসেন্সধারী চালক অনেক কম। এতে চালক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

নতুন আইনে বিভিন্ন অনিয়মের জন্য জরিমানার পরিমাণ পাঁচ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগের আইনে যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ন বাজালে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এখন তা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। এই আইনে শুধু চালক ও পরিবহন মালিক নয়, এবার পথচারীদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। চালককে সঙ্কেত মানতে হবে। পথচারীকেও সড়ক, মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ব্যবহার করতে হবে। যত্রতত্র রাস্তা পার হলে পথচারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও চালক যদি দুর্ঘটনার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটান তাহলে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায়ই মামলা হবে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্য চালকদের সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর এবং এই অপরাধ জামিন অযোগ্য।

এর আগে এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জামিনযোগ্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ যানবাহন চালালে তার শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। নিবন্ধনহীন যানবাহনের জন্য শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এর জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। উল্টোপথে গাড়ি চালালেও জরিমানা গুনতে হবে। ফিটনেস, রেজিষ্ট্রেশন এসব বিষয়েও জরিমানা অনেক বাড়ানো হয়েছে। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বললে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে এক মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। চালকদের সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১৮ বছর। মোটরবাইক থেকে শুরু করে সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য হবে আইনটি।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক বিভাগ জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১ নভেম্বর (শুক্রবার) সড়ক নতুন আইন কার্যকর হয়। এরপরই বাংলাদেশ পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা ও বিআরটিএ কর্মকর্তা এবং ডিএমপি কমিশনার সমন্বয়ে সারাদেশের ৮০০ ট্রাফিক অফিসারকে নতুন সড়ক আইন ও তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের নতুন সড়ক আইন ও জেল জরিমানা সম্পর্কে বিষদ আলোচনা ও প্রয়োগের কৌশল জানানো হয়েছে। ট্রাফিক সার্জেন্টগণ রাস্তায় নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দেবে না।