বিন্না ফুলেই সংসার
- আপডেট টাইম : ০৫:৪২:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০
- / 81
৭১: বিন্না ফুলেই চলে তাদের সংসার। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে। হাতে থাকে না কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে এই ফুলের সংগ্রহ। আঁটি বেঁধে মাথায় করে আনা হয় ঘরে। পরে সেগুলো শুকিয়ে তৈরি করা হয় ঝাড়ু। তারপর তা স্থানীয় খুচরা ও পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয়। সেই ঝাড়ু ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এভাবেই কেটে যায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষা মৌসুম। এ কাজে বেশি এগিয়ে এই নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তাড়াশ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা দল বেঁধে বর্ষায় ডুবে যাওয়া সড়কের পাশে থাকা বিন্নার ফুল সংগ্রহ করছে। কেউ কেউ রোদে দিচ্ছে। আবার অনেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে।
বাসাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিন্নার ফুল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঝাড়ু। জানা যায়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ প্রায় ৩০ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে উড়াও, মাহাতো, রাজবংশী, বিদাস, কনকদাস ও স্বল্পসংখ্যক সাঁওতাল নারী-পুরুষ রয়েছেন।
এক সময় এসব সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা বনে-জঙ্গলে ঘুরে শিয়াল, খরগোশ, কচ্ছপসহ নানা প্রভৃতির পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বন-জঙ্গল উজার হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী ও পুরুষরা ধান লাগানো, ধানকাটা, মাড়াইসহ ইটভাটায়ও কাজ নেয়।
একদিকে কঠোর পরিশ্রমী অন্যদিকে সহজ-সরল আর অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক হওয়ায় তাদের এ অঞ্চলে চাহিদাও অনেক বেশি। স্থানীরা জানান, সাধারণত বর্ষাকালে তাদের নিজ এলাকায় কাজ থাকে না। এ অঞ্চলের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য কৃষি শ্রমজীবী।
কৃষিকাজে শ্রম বিক্রি করেই তাদের সংসার চালাতে হয়। কাজ না থাকায় অর্থ সংকটে পড়ে বর্তমানে তারা আগাম শ্রম বিক্রি শুরু করেছেন। উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগাড়ী গ্রামের জ্যোতীস মাহাতো জানান, ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক মাসে তাদের কোনো কাজ থাকে না।
এখন হাতে কাজ না থাকায় এ সব নারী ও পুরুষরা অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে বোরো ধান লাগানো, কাটার কাজে অনেকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন। ওইসব কাজ করার জন্য দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় আগাম শ্রম বিক্রি করেছেন। ভরা মৌসুমে মজুরি থাকে ৪৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
তাড়াশ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের সমাজসেবা অধিফতরের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের এককালীন অর্থ দেওয়া হয় ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়।