ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তির ফাঁদে ব্যক্তিগত মুহূর্ত, টার্গেটে সহজ-সরল নারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:২১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০
  • / 80

৭১: আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন মানুষের জীবনযাত্রাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি পণ্যের সুফল ভোগ করছে বিশ্ববাসী। তবে সুফল ভোগের পাশাপাশি সমানভাবে বিপথগামীতায়ও প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। আর এর মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বিশেষ করে গোপন ক্যামেরা, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক, নানা ধরনের প্রযুক্তি সেবা ভিত্তিক অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সহজ-সরল নারীরা। স্বার্থান্বেষী পুরুষেরা নারীদের সম্ভ্রমসহ তার আয়ত্ত্বে থাকা সব সম্পদও হাতিয়ে নেয়। সর্বহারা করে দেয় নারীকে। এসব নারীরা হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নতুবা ধারাবাহিকভাবে প্রতারণার শিকার হতে থাকেন।

নারীদের ফাঁদে ফেলতে ব্যবহার করা হয় গোপন ক্যামেরা, স্মার্টফোন, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি হাতিয়ে নেওয়া যায়। আবার হাতিয়ে নেওয়া নারীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনে ভাইরাল করা হচ্ছে। আবার অনেক পুরুষ নিজেদের খারাপ উদ্দেশ্যে চরিত্রার্থ করতে এসব ছবি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। কেউ কেউ আইনি আশ্রয় নিলেও বেশিভাগ ভুক্তভোগী নারী দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অনেকে আইনের আশ্রয় নিতে গেলে তাকে সামাজিকভাবে হতে হয় হেয় প্রতিপন্ন। তাই সমাজের লোকলজ্জার ভয়ে নিজের সামাজিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেক ভুক্তভোগী নারী চুপ থাকেন।

শুধু সুযোগ সন্ধানী পুরুষরাই নয়, নিজের স্বামী ও প্রেমিক দ্বারাও প্রতারিত বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বিশেষ করে সম্পর্কের অবনতি হলেই হিংসাত্বক মনোভাব মেটাতে প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। এছাড়া যেসব সহজ-সরল মেয়েরা প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। সেই সময়ের ধারণ করা ভিডিও দিয়ে নিজেসহ বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করায় কিছু মানুষরূপী জানোয়ার।

গত এক বছরে দেশে সাইবার অপরাধে যেসব মামলা হয়েছে তার সিংহভাগই সাবেক প্রেমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। স্বামীদের বিরুদ্ধেও স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সুযোগ সন্ধানী পুরুষরা নারীদের ছবি বিকৃত করে নিজেদের কু-প্রস্তাব বাস্তবায়নের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠে এসেছে।

মামলাগুলোতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, প্রেম চলাকালীন অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও যেকোনো উপায়ে সংরক্ষণ করে রাখে প্রেমিকরা। সেক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তিপণ্য যেমন স্মার্টফোনের স্টোরেজ, এসডি কার্ড, পেনড্রাইভ ব্যবহার করা হয়। যখন সম্পর্কের অবনতি হয় তখনই প্রেমিক তার হিংসাত্বক মনোভাব প্রকাশ করতেই প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। শুধু হিংসাত্বক মনোভাব প্রকাশ করতেই নয়, চাহিদা মাফিক অন্তরঙ্গ মূহূর্ত স্থাপনে অস্বীকৃতি, চাহিদা অনুযায়ী অর্থ না দিলে প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ারও অভিযোগ মিলেছে।

প্রতারক শুধু লম্পট প্রেমিকই নয়, যৌতুক লোভী অনেক স্বামী হিংসার বশবর্তী হয়েই স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এছাড়া অনেক সুযোগ সন্ধানী পুরুষেরা নারীদের ছবি বিকৃত করে ফাঁদে ফেলে। অনেকে ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হন। সেই ধর্ষণের শিকারের ভিডিও ধারণ করে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ওই ধর্ষকের বন্ধুদের দ্বারাও ভুক্তভোগী ধর্ষণের শিকার হন। আর কোনো সময় এসব ঘটনা ফাঁস হলেই নারীর সংসার ভাঙে, নিজের পরিবারে অপদস্ত হতে হয়, এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে।

অনেক কুরুচিপূর্ণ পুরুষ চক্র নারীদের ব্যক্তিগত ছবি বা ধর্ষণের ছবি বিভিন্ন পর্নোসাইটে বিক্রিও করছে বলে অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব পুরুষ চক্র সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে সম্পর্ক তৈরি করে বা ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে পর্নোসাইটে বিক্রি করে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো অবস্থাতেই অপরাধীদের প্রশ্রয় না দিয়েই শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য পর্নোগ্রাফি আইন ও ডিজিটাল অ্যাক্ট বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এখনো ডিজিটাল ও পর্নোগ্রাফি আইনে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যাপ্ত নয়। এ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন করা জরুরি।

সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে নারীরা সম্ভ্রমহানির পাশপাশি মানসিকভাবে বারবার ধর্ষিত হন। তাই এসব অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেই কোনোভাবেই অপরাধীকে ছাড় দেয়া যাবে না।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যুগপোযোগী আইন করে তা বাস্তবায়ন জরুরি। শুধু সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করলেই হবে না, সেই আইনের সঠিক প্রযোগ করে দেখাতে হবে। কারণ একজন ভুক্তভোগী নারী পর্নোগ্রাফির পাশাপাশি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। তাই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ধারাকে পর্যালোচনা করে আরো কিছু সংযোজন ও সংশোধনী আনলেই সাইবার অপরাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৫.৩৫ শতাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী নারীর ছবি বিকৃত করা হয়েছে। আবার সেই সব বিকৃত ছবি অনলাইনে প্রচারও করা হয়েছে। আর এসব ভুক্তভোগী নারীদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেক নারী প্রযুক্তির ফাঁদে পড়ে প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হন। হ্যাকাররা প্রথমে নারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ছবি হাতিয়ে নেয়। অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি নিয়ে ইডিটের মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি আবারো একই অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে। মূলত ব্যক্তিহিংসা চরিতার্থ করা, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়, মানসিকভাবে অত্যাচারের লক্ষ্যেই নারীদের আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় অপরাধীরা। এতে প্রতি বছর গড়ে ১১ নারী সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সবচেয়ে তারাই প্রতারিত বা ভুক্তভোগী হয় যারা অনলাইনে নতুন আসে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ধরনের অপরাধের জন্য অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা উচিত। শুধু শাস্তি বাড়ালেই হবে না, তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। নতুবা কোনো লাভ হবে না।

তার মতে, স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ মূলত দুইজনের সম্মতিতেই হয়। সুতরাং যিনিই অনলাইনে ছাড়বেন তিনিই অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, অপরাধ যতটুকু, তার শাস্তিও ততটুকু হওয়া উচিত।

অনেক সময় দেখা যায়, ভুক্তভোগী নারী নিজের বিয়ে বন্ধের শঙ্কা, ভাই-বোনের বিয়ে বন্ধ ও সামাজিক ভয়ে প্রতারণার বিষয়টি চেপে যান। আবার অনেক সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে বিষয়টি চেপে যাওয়ার হুমকি দেয় অপরাধীরাও।

অ্যাডভোকেট সালমা আলীর মতে, ভুক্তভোগী মামলা করার পর নানা পদে হেনস্তার শিকার হন। প্রথমত মামলায় জেরার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে অনেক অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিব্রতের মধ্যে ফেলা হয়। এসব বিষয় আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে হবে। এসব মানবাধিকারের বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে। প্রায় সময় স্বামী ও প্রেমিকরা প্রিয়জনের আপত্তিকর ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া এসব ছবিতেই একজন নারীর চরিত্রের মাপকাঠি করে মন্তব্য করা হচ্ছে। তাই পর্নোগ্রাফির শিকার ভুক্তভোগীরা একইসঙ্গে পারিবারিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছে। এ জন্য শাস্তি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ বলেন, নারীর আপত্তিকর ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা সাইবার ক্রাইমের নতুন একটি ধরন। এ অপরাধকে বলা হয় ‘সেক্সটোরশন’।

‘সেক্সটোরশন’-এর মাধ্যমে একজন নারীর আপত্তিকর ছবি দিয়ে যৌন হেনস্তার ফাঁদে ফেলে চাঁদাবাজি করা হয়। টাকা না দিলেই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় অপরাধীরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কম বয়সী তরুণ-তরুণীরা ফাঁদে পড়ে। এতে ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর মানসিক অবসাদে ভুগে।

তার মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌন হয়রানি সম্পর্কিত অপরাধগুলোকে পর্নোগ্রাফি আইনে ফেলছে, আবার ইন্টারনেট সম্পর্কিত অপরাধ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ফেলছে না। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ধারাগুলো পর্যালোচনা করে কঠোর শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ করে কিছু সংযোজন ও সংশোধনী আনলে অপরাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন

বাংলাদেশে অশ্লীলতা রোধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে। এ আইনের ২০১২-এর ধারা ৮(২) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির সামাজিক- ব্যক্তিমর্যাদার হানি, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় বা কোনো সুবিধা আদায় করলে বা ব্যক্তির ধারণকৃত ভিডিও দিয়ে মানসিক নির্যাতন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, একইসঙ্গে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডও করা হতে পারে।

প্রযুক্তির ফাঁদে পড়লে ভুক্তভোগীর করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক অ্যকাউন্ট হ্যাক হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভুক্তভোগীকে যা যা করতে হবে তা হলো-

১. ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানার একজন ইন্সপেক্টর ও দুইজন এসআইকে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিশেষ ট্রেনিং দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ফলে ফেসবুক আইডি হ্যাকের ঘটনায় থানায় গিয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে আগের মতো বিব্রত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

২. থানা পুলিশ পূর্ণ সহযোগিতা না করলে বা ব্যর্থ হলে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়াও দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

৩. শুধুমাত্র ফেসবুক হ্যাকিং হলে তাড়াহুড়ো না করে কয়েকদিন অপেক্ষা করে নিয়মিত ফলোআপ করলেই প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আন্তরিক বহু কর্মকর্তা সাইবার ক্রাইম ইউনিটের রয়েছে। ফলে প্রতিকার সহজেই মিলছে।

অনলাইনে আপত্তিকরণ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিলে ভুক্তভোগীর করণীয়

প্রথমত, [email protected] এই ঠিকানায় ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে চলে যেতে পারেন ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে এই নাম্বারে-০১৭৬৯৬৯১৫২২ কথা বলতেও পারেন।

পুলিশের কাছে যেভাবে অভিযোগ করবেন

ভুক্তভোগী হলেই যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আপনার অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণাদি প্রয়োজন হবে। যেমন এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল বা রিলেটেড ডকুমেন্টস। স্ক্রিনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে Address Bar এর URL টি যেন দৃশ্যমান হয়। Hello CT অ্যাপ ও ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব কন্টেন্ট এটাচ করে আপলোড করতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরাসরি সফট কপি দেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি আপনি প্রয়োজনে Cyber Crime Unit এর অফিসারদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার আইনি ব্যবস্থা নিতে সহায়ক হতে পারে।

Tag :

শেয়ার করুন

প্রযুক্তির ফাঁদে ব্যক্তিগত মুহূর্ত, টার্গেটে সহজ-সরল নারীরা

আপডেট টাইম : ০৬:২১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০

৭১: আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন মানুষের জীবনযাত্রাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি পণ্যের সুফল ভোগ করছে বিশ্ববাসী। তবে সুফল ভোগের পাশাপাশি সমানভাবে বিপথগামীতায়ও প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। আর এর মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বিশেষ করে গোপন ক্যামেরা, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক, নানা ধরনের প্রযুক্তি সেবা ভিত্তিক অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সহজ-সরল নারীরা। স্বার্থান্বেষী পুরুষেরা নারীদের সম্ভ্রমসহ তার আয়ত্ত্বে থাকা সব সম্পদও হাতিয়ে নেয়। সর্বহারা করে দেয় নারীকে। এসব নারীরা হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নতুবা ধারাবাহিকভাবে প্রতারণার শিকার হতে থাকেন।

নারীদের ফাঁদে ফেলতে ব্যবহার করা হয় গোপন ক্যামেরা, স্মার্টফোন, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি হাতিয়ে নেওয়া যায়। আবার হাতিয়ে নেওয়া নারীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনে ভাইরাল করা হচ্ছে। আবার অনেক পুরুষ নিজেদের খারাপ উদ্দেশ্যে চরিত্রার্থ করতে এসব ছবি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। কেউ কেউ আইনি আশ্রয় নিলেও বেশিভাগ ভুক্তভোগী নারী দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অনেকে আইনের আশ্রয় নিতে গেলে তাকে সামাজিকভাবে হতে হয় হেয় প্রতিপন্ন। তাই সমাজের লোকলজ্জার ভয়ে নিজের সামাজিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেক ভুক্তভোগী নারী চুপ থাকেন।

শুধু সুযোগ সন্ধানী পুরুষরাই নয়, নিজের স্বামী ও প্রেমিক দ্বারাও প্রতারিত বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বিশেষ করে সম্পর্কের অবনতি হলেই হিংসাত্বক মনোভাব মেটাতে প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। এছাড়া যেসব সহজ-সরল মেয়েরা প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। সেই সময়ের ধারণ করা ভিডিও দিয়ে নিজেসহ বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করায় কিছু মানুষরূপী জানোয়ার।

গত এক বছরে দেশে সাইবার অপরাধে যেসব মামলা হয়েছে তার সিংহভাগই সাবেক প্রেমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। স্বামীদের বিরুদ্ধেও স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সুযোগ সন্ধানী পুরুষরা নারীদের ছবি বিকৃত করে নিজেদের কু-প্রস্তাব বাস্তবায়নের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠে এসেছে।

মামলাগুলোতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, প্রেম চলাকালীন অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও যেকোনো উপায়ে সংরক্ষণ করে রাখে প্রেমিকরা। সেক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তিপণ্য যেমন স্মার্টফোনের স্টোরেজ, এসডি কার্ড, পেনড্রাইভ ব্যবহার করা হয়। যখন সম্পর্কের অবনতি হয় তখনই প্রেমিক তার হিংসাত্বক মনোভাব প্রকাশ করতেই প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। শুধু হিংসাত্বক মনোভাব প্রকাশ করতেই নয়, চাহিদা মাফিক অন্তরঙ্গ মূহূর্ত স্থাপনে অস্বীকৃতি, চাহিদা অনুযায়ী অর্থ না দিলে প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ারও অভিযোগ মিলেছে।

প্রতারক শুধু লম্পট প্রেমিকই নয়, যৌতুক লোভী অনেক স্বামী হিংসার বশবর্তী হয়েই স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এছাড়া অনেক সুযোগ সন্ধানী পুরুষেরা নারীদের ছবি বিকৃত করে ফাঁদে ফেলে। অনেকে ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হন। সেই ধর্ষণের শিকারের ভিডিও ধারণ করে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ওই ধর্ষকের বন্ধুদের দ্বারাও ভুক্তভোগী ধর্ষণের শিকার হন। আর কোনো সময় এসব ঘটনা ফাঁস হলেই নারীর সংসার ভাঙে, নিজের পরিবারে অপদস্ত হতে হয়, এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে।

অনেক কুরুচিপূর্ণ পুরুষ চক্র নারীদের ব্যক্তিগত ছবি বা ধর্ষণের ছবি বিভিন্ন পর্নোসাইটে বিক্রিও করছে বলে অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব পুরুষ চক্র সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে সম্পর্ক তৈরি করে বা ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে পর্নোসাইটে বিক্রি করে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো অবস্থাতেই অপরাধীদের প্রশ্রয় না দিয়েই শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য পর্নোগ্রাফি আইন ও ডিজিটাল অ্যাক্ট বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এখনো ডিজিটাল ও পর্নোগ্রাফি আইনে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যাপ্ত নয়। এ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন করা জরুরি।

সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে নারীরা সম্ভ্রমহানির পাশপাশি মানসিকভাবে বারবার ধর্ষিত হন। তাই এসব অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেই কোনোভাবেই অপরাধীকে ছাড় দেয়া যাবে না।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যুগপোযোগী আইন করে তা বাস্তবায়ন জরুরি। শুধু সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করলেই হবে না, সেই আইনের সঠিক প্রযোগ করে দেখাতে হবে। কারণ একজন ভুক্তভোগী নারী পর্নোগ্রাফির পাশাপাশি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। তাই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ধারাকে পর্যালোচনা করে আরো কিছু সংযোজন ও সংশোধনী আনলেই সাইবার অপরাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৫.৩৫ শতাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী নারীর ছবি বিকৃত করা হয়েছে। আবার সেই সব বিকৃত ছবি অনলাইনে প্রচারও করা হয়েছে। আর এসব ভুক্তভোগী নারীদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেক নারী প্রযুক্তির ফাঁদে পড়ে প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হন। হ্যাকাররা প্রথমে নারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ছবি হাতিয়ে নেয়। অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি নিয়ে ইডিটের মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি আবারো একই অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে। মূলত ব্যক্তিহিংসা চরিতার্থ করা, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়, মানসিকভাবে অত্যাচারের লক্ষ্যেই নারীদের আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় অপরাধীরা। এতে প্রতি বছর গড়ে ১১ নারী সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সবচেয়ে তারাই প্রতারিত বা ভুক্তভোগী হয় যারা অনলাইনে নতুন আসে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ধরনের অপরাধের জন্য অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা উচিত। শুধু শাস্তি বাড়ালেই হবে না, তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। নতুবা কোনো লাভ হবে না।

তার মতে, স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ মূলত দুইজনের সম্মতিতেই হয়। সুতরাং যিনিই অনলাইনে ছাড়বেন তিনিই অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, অপরাধ যতটুকু, তার শাস্তিও ততটুকু হওয়া উচিত।

অনেক সময় দেখা যায়, ভুক্তভোগী নারী নিজের বিয়ে বন্ধের শঙ্কা, ভাই-বোনের বিয়ে বন্ধ ও সামাজিক ভয়ে প্রতারণার বিষয়টি চেপে যান। আবার অনেক সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে বিষয়টি চেপে যাওয়ার হুমকি দেয় অপরাধীরাও।

অ্যাডভোকেট সালমা আলীর মতে, ভুক্তভোগী মামলা করার পর নানা পদে হেনস্তার শিকার হন। প্রথমত মামলায় জেরার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে অনেক অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিব্রতের মধ্যে ফেলা হয়। এসব বিষয় আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে হবে। এসব মানবাধিকারের বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে। প্রায় সময় স্বামী ও প্রেমিকরা প্রিয়জনের আপত্তিকর ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া এসব ছবিতেই একজন নারীর চরিত্রের মাপকাঠি করে মন্তব্য করা হচ্ছে। তাই পর্নোগ্রাফির শিকার ভুক্তভোগীরা একইসঙ্গে পারিবারিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছে। এ জন্য শাস্তি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ বলেন, নারীর আপত্তিকর ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা সাইবার ক্রাইমের নতুন একটি ধরন। এ অপরাধকে বলা হয় ‘সেক্সটোরশন’।

‘সেক্সটোরশন’-এর মাধ্যমে একজন নারীর আপত্তিকর ছবি দিয়ে যৌন হেনস্তার ফাঁদে ফেলে চাঁদাবাজি করা হয়। টাকা না দিলেই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় অপরাধীরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কম বয়সী তরুণ-তরুণীরা ফাঁদে পড়ে। এতে ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর মানসিক অবসাদে ভুগে।

তার মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌন হয়রানি সম্পর্কিত অপরাধগুলোকে পর্নোগ্রাফি আইনে ফেলছে, আবার ইন্টারনেট সম্পর্কিত অপরাধ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ফেলছে না। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ধারাগুলো পর্যালোচনা করে কঠোর শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ করে কিছু সংযোজন ও সংশোধনী আনলে অপরাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন

বাংলাদেশে অশ্লীলতা রোধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে। এ আইনের ২০১২-এর ধারা ৮(২) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির সামাজিক- ব্যক্তিমর্যাদার হানি, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় বা কোনো সুবিধা আদায় করলে বা ব্যক্তির ধারণকৃত ভিডিও দিয়ে মানসিক নির্যাতন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, একইসঙ্গে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডও করা হতে পারে।

প্রযুক্তির ফাঁদে পড়লে ভুক্তভোগীর করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক অ্যকাউন্ট হ্যাক হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভুক্তভোগীকে যা যা করতে হবে তা হলো-

১. ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানার একজন ইন্সপেক্টর ও দুইজন এসআইকে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিশেষ ট্রেনিং দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ফলে ফেসবুক আইডি হ্যাকের ঘটনায় থানায় গিয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে আগের মতো বিব্রত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

২. থানা পুলিশ পূর্ণ সহযোগিতা না করলে বা ব্যর্থ হলে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়াও দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

৩. শুধুমাত্র ফেসবুক হ্যাকিং হলে তাড়াহুড়ো না করে কয়েকদিন অপেক্ষা করে নিয়মিত ফলোআপ করলেই প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আন্তরিক বহু কর্মকর্তা সাইবার ক্রাইম ইউনিটের রয়েছে। ফলে প্রতিকার সহজেই মিলছে।

অনলাইনে আপত্তিকরণ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিলে ভুক্তভোগীর করণীয়

প্রথমত, [email protected] এই ঠিকানায় ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে চলে যেতে পারেন ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে এই নাম্বারে-০১৭৬৯৬৯১৫২২ কথা বলতেও পারেন।

পুলিশের কাছে যেভাবে অভিযোগ করবেন

ভুক্তভোগী হলেই যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আপনার অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণাদি প্রয়োজন হবে। যেমন এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল বা রিলেটেড ডকুমেন্টস। স্ক্রিনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে Address Bar এর URL টি যেন দৃশ্যমান হয়। Hello CT অ্যাপ ও ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব কন্টেন্ট এটাচ করে আপলোড করতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরাসরি সফট কপি দেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি আপনি প্রয়োজনে Cyber Crime Unit এর অফিসারদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার আইনি ব্যবস্থা নিতে সহায়ক হতে পারে।