ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব পাচ্ছে দুই সিটি
- আপডেট টাইম : ০৫:৩৬:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০২০
- / 103
৭১: রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব যাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনের হাতে। ঢাকার দুই মেয়রের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে রবিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার (১০ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মূলত জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা। ১৯৮৯ সালে সংস্থাটিকে পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি একাজে যুক্ত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকা ওয়াসা মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত—এমন অভিযোগ সিটি করপোরেশনের। এ অবস্থায় সংস্থা দু’টি বলছে, ওয়াসার এই ব্যর্থতার দায় যাচ্ছে তাদের (সিটি করপোরেশন) ওপরে। আর জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
২০১৭ সালে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার পর ধানমন্ডি এলাকা পরিদর্শনে এসে ডিএসসিসি’র মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জলাবদ্ধতার দায় ঢাকা ওয়াসার।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য একটি সভায় তিনি ওয়াসাকে একটি ব্যর্থ সংস্থা হিসেবেও অবহিত করেন। একই সময়ে উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বলেছিলেন, তার হাতে কোনও ক্ষমতা বা জাদু নেই যে, এই দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে।
তৎকালীন দুই মেয়রের এমন মন্তব্যের পর ওই বছরের ১৬ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত জলাবদ্ধতা নিরসনের আন্তঃবিভাগীয় এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সভায় ওয়াসা এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর কোনও দেশে যারা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে, ময়লা পানি তাদের দায়িত্বে থাকে না। এমনকি বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোতেও। শুধু ঢাকা শহরেই ব্যতিক্রম।’
ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসাকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু মন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্ত দুই সিটি করপোরেশন মেনে নিলেও আইনি জটিলতায় পড়েন তারা। এরপর ওই বছরের ১ আগস্ট জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়রদের সঙ্গে এক বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আক্তারকে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন আইন সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু সেই আইন এখনও সংশোধন হয়নি।
চলতি বছরও একই পরিস্থিতি দেখা দেয়। দুই সিটির নতুন দুই মেয়রও জলাবদ্ধতার জন্য ওয়াসাকে দায়ী করেন। তবে ওয়াসা বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
গত ২২ জুলাই জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করতে ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-এর দ্বিতীয় তফসিল ও তৃতীয় তফসিলের বিভিন্ন বিধি, ধারা ও উপধারা উল্লেখ করেন দক্ষিণ সিটি মেয়র। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তাদের আওতাভুক্ত এলাকায় পানি নিষ্কাশন, জলাধার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে দায়বদ্ধ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাধার সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পানি নিষ্কাশনসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব নিজেদের আওতায় রেখেছে। আইন অনুযায়ী, তারা আমাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছে না। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনও করছে না। ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলেই বছরের পর বছর ঢাকায় জলাবদ্ধতা প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী, দায়িত্ব আমাদের কাছে হস্তান্তর করুন। আমরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করবো।’
এদিকে আতিকুল ইসলামের অভিযোগ, খালের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা ওয়াসা তা যথাযথভাবে পালন করছে না। সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণাধীন সব খালের দায়িত্ব ডিএনসিসিকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ওই দিন বিকালে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রাজধানীর কাওরান বাজার টিসিবি ভবনের সামনে মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা কেন সৃষ্টি হচ্ছে? এ প্রশ্নের মুখে পড়ে গালি কিন্তু আমাদের শুনতে হয়। তাই ওয়াসার কাজগুলো আমাদের দিন। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, নগরবাসীকে আমরা যে কথা বলি, সেই অনুযায়ী কাজ করি। আমাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল আছে।’