ঢাকা ০৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জার্মানিতে একশ বাড়ির মালিক এই বাংলাদেশী

ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • / 119

৭১: মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি হোটেলে কাজ শুরু করেন যুবরাজ তালুকদার৷ ২১ বছর বয়সে নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনেন প্রথম বাড়ি৷ এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি৷ এখান জার্মানির আবাসন খাতে পরিচিত মুখ তিনি। থাকেন দেশটির বন শহরে। তার বাড়ির সংখ্যা একশর বেশি।

তবে বড় কোনো বিনিয়োগ নিয়ে এই খাতে ব্যবসা শুরু করেননি তালুকদার৷ নিজের সাম্রাজ্য গড়েছেন পুরোটাই নিজের চেষ্টায়, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে৷ ১৯৯১ সালে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন তিনি৷ এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, ‘১৬ বছর বয়স থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি হোটেল কাজ করতাম৷ এবং পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে চাকুরি করে যে বেতন পেয়েছিলাম সেগুলো আমার বাবাকে দিতে হয়নি৷ আমি সেগুলো সেভ করেছি৷ আব্বা কখনো বলেননি যে, আমার রোজগার থেকে তাকে খরচের টাকা দিতে হবে৷ টাকা জমা করে প্রথমে একটা বাড়ি নিলামে কিনি মাত্র সাড়ে ছয় হাজার ইউরো দিয়ে৷ মানে ১৯৯১ সালের তের হাজার মার্ক৷ সেই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করি৷’

আবাসন খাতে যুবরাজ তালুকদারের ব্যবসার ধরণ কিছুটা ভিন্ন৷ তিনি মূলত পুরনো ঘরবাড়ি বিভিন্ন ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিলামে কেনেন৷ কেনার পর সেগুলো সংস্কার করে ভাড়া দেন৷ তার কর্মী সংখ্যা ছয়জন৷ তিনি বলেন, ‘সাধারণত ১৯৬০-১৯৭০ সালে বানানো, মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বানানো বাড়িগুলো কিনি আমি৷ সেসব ভবনে টাইলস, বেসিন, কমোড, বিদ্যুতের লাইন – এসব পুরনো থাকে৷ আপনি যদি কোনো কোম্পানিকে দিয়ে এগুলো ঠিক করতে যান তাহলে উদাহরণস্বরূপ এক হাজার বর্গফুটের বাড়িতে নূন্যতম ৪০ হাজার ইউরো খরচ হবে৷ আর সেই কাজ আমি যদি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নিজে করি, তাহলে আমি অর্ধেক খরচে সেটা করতে পারবো৷’

কখনো কখনো দু’তিনশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাড়িও কেনেন যুবরাজ৷ সেগুলো অবশ্য সংস্কার করতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে৷ এ ধরনের বাড়ির বাইরের অংশের ডিজাইনে কোন পরিবর্তন করা যায়না, তবে ভেতরটা নিজেদের মতো করে বদলে নেয়া যায়৷

কেনার পর বিক্রি নয়, ভাড়া
জার্মানিতে একটি বাড়ি কেনার পর তা দশ বছরের মধ্যে বিক্রি করে দিলে অনেক কর দিতে হয়৷ মূলত এই খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তালুকদার তাই বাড়ি কিনে সংস্কার করে ভাড়া দেন৷ বর্তমানে তার মালিকানায় থাকা সব ঘর-বাড়িই জার্মানির বন-কোলন অঞ্চলে অবস্থিত৷

আবাসন খাতে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি আরো কিছু খাতে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন তিনি৷ সম্প্রতি কোলন-বন বিমানবন্দরের কাছে চালু করেছেন একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ৷ তিনি বলেন, ‘এই বিল্ডিংটা যখন বিক্রি হলো, তখন রেস্তোরাঁ নয়, একটি অ্যাসেট হিসেবে এটি কিনেছিলাম৷ তখন এটি একটি চীনা রেস্তোরাঁ ছিল৷ আমার এক বন্ধু তখন বলল এখানে একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ করা যায়৷ গতবছর আমরা এটি চালু করি৷’

নিজের ব্যবসা দেখাশোনার জন্য সারাদিনই বন-কোলন অঞ্চলে ঘুরতে হয় যুবরাজ তালুকদারকে৷ সম্প্রতি কোলনের একটি আদালতে ‘অনারারি জাজ’ হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন তিনি৷ এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, ‘আমাকে জার্মান সরকার অনারারি জাজ হিসেবে কোলনের ফাইনান্স কোর্টে দায়িত্ব দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য৷ সেখানে কোনো কেস এলে তিনজন সরকারি জাজ এবং দু’জন অনারারি জাজ বসে কেসটা তদন্ত করা হয়৷ সবকিছু বোঝার পরে আমাদের পাঁচজন বসে অন্তত তিনজন যেদিকে রায়টা দিতে চায়, সেদিকে রায় দেয়া হয়৷’

জার্মানিতে সফল এই ব্যবসায়ী বাংলাদেশের আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন৷ তবে নানা আইনি ও দাপ্তরিক জটিলতায় সেখানে সুবিধা করতে পারেননি৷ এখন অবশ্য জানালায় ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ এক ধরণের নেট তিনি বাংলাদেশে রপ্তানি করছেন৷

জার্মানিতে নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত আছেন যুবরাজ তালুকদার৷ বন শহরে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন তিনি৷ ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য সন্তানদের বুঝিয়ে দিয়ে সমাজসেবায় আরো মনোযোগী হতে চান এই বাংলাদেশী-জার্মান ব্যবসায়ী৷ সূত্র : ডয়েচে ভেলে

Tag :

শেয়ার করুন

জার্মানিতে একশ বাড়ির মালিক এই বাংলাদেশী

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

৭১: মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি হোটেলে কাজ শুরু করেন যুবরাজ তালুকদার৷ ২১ বছর বয়সে নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনেন প্রথম বাড়ি৷ এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি৷ এখান জার্মানির আবাসন খাতে পরিচিত মুখ তিনি। থাকেন দেশটির বন শহরে। তার বাড়ির সংখ্যা একশর বেশি।

তবে বড় কোনো বিনিয়োগ নিয়ে এই খাতে ব্যবসা শুরু করেননি তালুকদার৷ নিজের সাম্রাজ্য গড়েছেন পুরোটাই নিজের চেষ্টায়, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে৷ ১৯৯১ সালে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন তিনি৷ এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, ‘১৬ বছর বয়স থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি হোটেল কাজ করতাম৷ এবং পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে চাকুরি করে যে বেতন পেয়েছিলাম সেগুলো আমার বাবাকে দিতে হয়নি৷ আমি সেগুলো সেভ করেছি৷ আব্বা কখনো বলেননি যে, আমার রোজগার থেকে তাকে খরচের টাকা দিতে হবে৷ টাকা জমা করে প্রথমে একটা বাড়ি নিলামে কিনি মাত্র সাড়ে ছয় হাজার ইউরো দিয়ে৷ মানে ১৯৯১ সালের তের হাজার মার্ক৷ সেই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করি৷’

আবাসন খাতে যুবরাজ তালুকদারের ব্যবসার ধরণ কিছুটা ভিন্ন৷ তিনি মূলত পুরনো ঘরবাড়ি বিভিন্ন ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিলামে কেনেন৷ কেনার পর সেগুলো সংস্কার করে ভাড়া দেন৷ তার কর্মী সংখ্যা ছয়জন৷ তিনি বলেন, ‘সাধারণত ১৯৬০-১৯৭০ সালে বানানো, মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বানানো বাড়িগুলো কিনি আমি৷ সেসব ভবনে টাইলস, বেসিন, কমোড, বিদ্যুতের লাইন – এসব পুরনো থাকে৷ আপনি যদি কোনো কোম্পানিকে দিয়ে এগুলো ঠিক করতে যান তাহলে উদাহরণস্বরূপ এক হাজার বর্গফুটের বাড়িতে নূন্যতম ৪০ হাজার ইউরো খরচ হবে৷ আর সেই কাজ আমি যদি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নিজে করি, তাহলে আমি অর্ধেক খরচে সেটা করতে পারবো৷’

কখনো কখনো দু’তিনশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাড়িও কেনেন যুবরাজ৷ সেগুলো অবশ্য সংস্কার করতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে৷ এ ধরনের বাড়ির বাইরের অংশের ডিজাইনে কোন পরিবর্তন করা যায়না, তবে ভেতরটা নিজেদের মতো করে বদলে নেয়া যায়৷

কেনার পর বিক্রি নয়, ভাড়া
জার্মানিতে একটি বাড়ি কেনার পর তা দশ বছরের মধ্যে বিক্রি করে দিলে অনেক কর দিতে হয়৷ মূলত এই খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তালুকদার তাই বাড়ি কিনে সংস্কার করে ভাড়া দেন৷ বর্তমানে তার মালিকানায় থাকা সব ঘর-বাড়িই জার্মানির বন-কোলন অঞ্চলে অবস্থিত৷

আবাসন খাতে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি আরো কিছু খাতে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন তিনি৷ সম্প্রতি কোলন-বন বিমানবন্দরের কাছে চালু করেছেন একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ৷ তিনি বলেন, ‘এই বিল্ডিংটা যখন বিক্রি হলো, তখন রেস্তোরাঁ নয়, একটি অ্যাসেট হিসেবে এটি কিনেছিলাম৷ তখন এটি একটি চীনা রেস্তোরাঁ ছিল৷ আমার এক বন্ধু তখন বলল এখানে একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ করা যায়৷ গতবছর আমরা এটি চালু করি৷’

নিজের ব্যবসা দেখাশোনার জন্য সারাদিনই বন-কোলন অঞ্চলে ঘুরতে হয় যুবরাজ তালুকদারকে৷ সম্প্রতি কোলনের একটি আদালতে ‘অনারারি জাজ’ হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন তিনি৷ এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, ‘আমাকে জার্মান সরকার অনারারি জাজ হিসেবে কোলনের ফাইনান্স কোর্টে দায়িত্ব দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য৷ সেখানে কোনো কেস এলে তিনজন সরকারি জাজ এবং দু’জন অনারারি জাজ বসে কেসটা তদন্ত করা হয়৷ সবকিছু বোঝার পরে আমাদের পাঁচজন বসে অন্তত তিনজন যেদিকে রায়টা দিতে চায়, সেদিকে রায় দেয়া হয়৷’

জার্মানিতে সফল এই ব্যবসায়ী বাংলাদেশের আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন৷ তবে নানা আইনি ও দাপ্তরিক জটিলতায় সেখানে সুবিধা করতে পারেননি৷ এখন অবশ্য জানালায় ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ এক ধরণের নেট তিনি বাংলাদেশে রপ্তানি করছেন৷

জার্মানিতে নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত আছেন যুবরাজ তালুকদার৷ বন শহরে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন তিনি৷ ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য সন্তানদের বুঝিয়ে দিয়ে সমাজসেবায় আরো মনোযোগী হতে চান এই বাংলাদেশী-জার্মান ব্যবসায়ী৷ সূত্র : ডয়েচে ভেলে